×

জাতীয়

শেষের আগেই শেষ বইমেলা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২১, ১২:৪৪ পিএম

শেষের আগেই শেষ বইমেলা

আড্ডা ঘোরাঘুরিতে ফুরিয়ে আসছে বইয়ের খুশবো মাখা মেলা। ছবি ভোরের কাগজ

শেষের আগেই শেষ বইমেলা

করোনার ভয় আছেই। তবু বইয়ের আবেশ বইমেলায় এনেছে টেনে কাউকে কাউকে। ছবি: ভোরের কাগজ

দেশব্যাপী লকডাউনের পূর্ব ঘোষণার কারণে দুদিন আগে আগামী ১২ এপ্রিলেই শেষ হয়ে যাচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। গতকাল শনিবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা ফয়সাল হাসানের পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বইমেলা চলার কথা ছিল। তবে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে সরকার সর্বাত্মক বা কঠোর লকডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে। সেক্ষেত্রে জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছুই বন্ধ থাকবে।

বইমেলা আগাম বন্ধের বিষয়টির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন স্টল মালিক ও প্রকাশকরা। বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমরা একমত। বইমেলা চত্বর থেকে আমরা নিজেদের মতো করে বই পুস্তক ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরিয়ে নেব। তবে সরকারের কাছে আবেদন সরকার যেন নিজ উদ্যোগে প্রকাশকদের রক্ষায় এগিয়ে আসে।

[caption id="attachment_277471" align="alignnone" width="825"] শনিবার স্বাস্থ্য বিধি মেনে মেলায় বই কিনছেন পাঠকরা। ছবি: মাসুদ পারভেজ আনিস[/caption]

সুবর্ণ প্রকাশনের বিক্রয় প্রতিনিধি রতন কুমার দে বলেন, দুইদিন আগে বন্ধ হওয়ায় খুশিই হয়েছি। কারণ খরচা করছি এক হাজার টাকা, বিক্রি করছি পাঁচশ টাকা। স্টলের অবকাঠামো নির্মান করতে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা করচ হয়েছে। তাই আগেই চলে যেতে পারলে বাঁচি।

অনিন্দ্য প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আফজাল হোসেন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তাতে আমি খুশি। বাঁচি আর মরি ডাল ভাত খেয়ে অন্তত বাড়িতে থেকেই মরি।

প্রকাশনা সংস্থা শব্দ শৈলীর কর্ণধার ইফতেখার আমিন বলেন, এমনিতে কফিনে ছিলাম। এবার শেষ পেরেকটা মেরে দিলেন। এবারের মেলা আমাদেরকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। স্মরণকালের সবচেয়ে ব্যর্থ মেলা হিসেবেও এবারের মেলাকে অভিহিত করেন এই প্রকাশক। তিনি আরও বলেন, আমাদের এক ক্ষতি করেছে করোনা আরেক ক্ষতি করেছে বাংলা একাডেমির বেঁধে দেওয়া দুপুর ১২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত পরিবর্তিত সময়সূচি। করোনার কারণে আমরা যতটুকু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি তার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি অফ-পিক সময়সূচি। ৫টায় মেলা বন্ধ আর সাড়ে ৪টায় মেলার প্রবেশদ্বার বন্ধ করার ফলে অনেকেই নিরাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। বাংলা একাডেমির এই অদূরদর্শি সিদ্ধান্তের কারণে আমরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ।

অন্বেষা কর্নধার শাহাদাৎ হোসেন বলেন, দইদিন আগে বন্ধ হওয়ায় ভালোই হয়েছে। এতে প্রকাশকদের ভালো মন্দ আর কিছুই নেই। তবে এর রেশ টানতে এক বছর। এ মুহূর্তে প্রকাশকদের পাশে দাঁড়াতে হবে সরকারকে। কারণ প্রকাশকরা শুধু ব্যবসা করে না, জাতিকে শিক্ষার আলো দেখা দেখায়। এটা অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে।

[caption id="attachment_277493" align="alignnone" width="940"] করোনার ভয় আছেই। তবু বইয়ের আবেশ বইমেলায় এনেছে টেনে কাউকে কাউকে। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

পলল প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী খান মাহবুব বলেন, দুই আগেই মেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত এই মুহূর্তে এটাই বাস্তবতা। কথাসাহিত্যিক মোশতাক আহমেদ বলেন, দেশের স্বার্থে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা আমি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছি। কারণ আগে জীবন তারপরই মেলা।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী জানিয়েছেন, আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত নির্ধারিত সময় ছিল বইমেলার। তবে ওইদিনই দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন দেয়া হবে। তাই স্টল সরানো এবং আনুষঙ্গিক কাজের জন্য মেলার সময় দুদিন কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আজ রবিবার বইমেলা বন্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়া হবে।

লকডাউন ঘোষণার কারণে নির্ধারিত সময়ের দুদিন আগে বইমেলা বন্ধের সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এদিকে, দুদিন আগেই বন্ধের ঘোষণার পর বইমেলা চত্বরে প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। অনেকেই স্টল গুটিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বাড়তি বই এর আগেই প্রকাশকরা তাদের অফিসে অফিসে ফেরত নিয়ে গেছেন। এখন বাকি আনুসঙ্গিক জিনিসপত্র গুছিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। গতকালও মেলায় ক্রেতা পাঠকদের বেশ ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে বিক্রির পরিমাণ খুব বেশি বাড়েনি।

[caption id="attachment_277492" align="alignnone" width="862"] আড্ডা ঘোরাঘুরিতে ফুরিয়ে আসছে বইয়ের খুশবো মাখা মেলা। ছবি ভোরের কাগজ[/caption]

এদিকে বইমেলা ও করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ সদস্যদের ক্ষতিপূরণের দাবি করেছে পাবলিশার্স ফোরাম কাটাবন। ফোরামের ক্ষতিগ্রস্থ সদস্যদের তালিকা আজ রবিবার যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন ফোরামের সম্পাদক দেলোয়ার হাসান।

করোনার কারণে ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে এ বছর ১৮ মার্চ মেলা শুরু হয়। সেদিন বিকেলে মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ছুটির দিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে মেলা। অন্যান্য দিনগুলোতে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলে। কিন্তু দেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেলে ৩১ মার্চ বইমেলার সূচি পরিবর্তন করে বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত করা হয়। এরপর আবার সাতদিনব্যাপী কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের মধ্যে আগের চেয়ে সময় বাড়িয়ে প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত মেলার সময় সূচি করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App