×

মুক্তচিন্তা

জীবন-জীবিকার সংকট

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২১, ১২:১১ এএম

করোনা ভাইরাস সমগ্র মানব জাতির জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। দুনিয়াজুড়ে মহামারির আকার ধারণকারী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় সোয়া ১৩ কোটি মানুষ। মৃতের সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে চিকিৎসা সুবিধার সীমাবদ্ধতায় করোনায় আক্রান্তদের শনাক্তের অভাবে বেশির ভাগই থাকে হিসাবের বাইরে। ফলে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা যে অনেক বেশি তা সহজে অনুমেয়। ভয়াল এ ভাইরাস ইতোমধ্যে বাংলাদেশের জন্য দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। এর একটি স্বাস্থ্য সুরক্ষার অন্যটি অর্থনীতির। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়া হলেও নাগরিক সচেতনতার অভাবে তা যথাযথভাবে প্রতিপালিত না হওয়ায় করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ থাবা বিস্তার করেছে। করোনার থাবা ১ মাসের ব্যবধানে কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার বাধ্য হয়ে গত সোমবার থেকে সপ্তাহব্যাপী লকডাউন চলছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিরিখে এ সিদ্ধান্ত শতভাগ সঠিক হলেও তা খেটে খাওয়া মানুষের জন্য অশনিসংকেত বিবেচিত হচ্ছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, ৭ দিন পর সংক্রমণ বিবেচনা করে যদি লকডাউন খুলে দেয়া হয় তাহলে তা খেটে খাওয়া মানুষের জন্য খুব একটা ক্ষতিকর হবে না, নয় তো তাদের জীবন-জীবিকা অচল হয়ে পড়বে। গত বছর সাধারণ ছুটির কারণে অনেকে পেশা পরিবর্তন করেছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করেছে, বেতন কমিয়েছে। বন্ধ হয়েছে ইনক্রিমেন্ট, প্রমোশন। অসংখ্য মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাই অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার সরকারি নির্দেশনা যাতে শতভাগ পালিত হয় সেদিকে জোর দিয়ে দৈনন্দিন জীবন স্বাভাবিক করে দিলে তা হবে উত্তম। নাগরিকদের কেউ বাইরে বেরোলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় কঠোর হতে হবে। বন্ধ রাখতে হবে সব ধরনের সমাবেশ। বাজারগুলোয় ভিড় এড়ানো নিশ্চিত করা জরুরি। এটি সম্ভব হলে সংক্রমণ যেমন নিয়ন্ত্রণে আসবে, তেমন সচল থাকবে অর্থনীতি। কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার দ্রুত বাড়ছে। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে পরীক্ষা বিবেচনায় দৈনিক শনাক্তের হার ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। এরই মধ্যে তা ২৩ শতাংশের ওপরে চলে এসেছে। বৈশ্বিকভাবে দৈনিক শনাক্ত সূচকে গত রবিবার বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৯ নম্বর, যা গত মাসের শেষভাগেও ছিল ৩০-এর ঘরে। টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ছিল প্রথম ২০টি দেশের মধ্যে। কিন্তু টিকা পাওয়া নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তাতে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রেও অনেকটাই পিছিয়ে যেতে পারে। এসব বিবেচনায় নিয়ে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি সহসাই অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়তে পারে। টিকার বৈশ্বিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত জনসংখ্যার ৩.৩১ শতাংশ বা প্রায় ৫৫ লাখ মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে দেয়া হয়েছে ১৬ কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষকে, ভারতে দেয়া হয়েছে সাড়ে ৭ কোটির বেশি মানুষকে। টিকা প্রাপ্তি নিয়ে সারা বিশ্বেই ব্যাপক বৈষম্য তৈরি হয়েছে। তার কারণ যেসব প্রতিষ্ঠান টিকা উদ্ভাবন করেছে তার সবই বিভিন্ন উন্নত দেশের। তারা নিজেদের চাহিদা মেটার আগে বাইরে টিকা সরবরাহ করছে কম। তারপরও রয়েছে নানা রকম জোট ও নৈকট্যের ব্যাপার। অনেক দেশই এখনো টিকা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি কিংবা নামমাত্র শুরু করেছে। বাংলাদেশ সে তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে আছে। তার কারণ ভারত টিকা সরবরাহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কিন্তু ভারতেরও সীমাবদ্ধতা আছে। ১৪০ কোটি মানুষের দেশে নিজেদের চাহিদাও ব্যাপক। অন্যান্য উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত কার্যকর কিছুই করতে পারেনি। নীতি-সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও রয়েছে দুর্বলতা। বেসরকারিভাবে টিকা আমদানির অনেক আবেদন করা হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে অনুমতি দেয়া হয়নি। দেয়া হবে কি না তাও স্পষ্ট নয়। করোনা সংক্রমণ রোধের অন্য উপায়টি হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা। এ ক্ষেত্রেও রয়েছে ব্যাপক ঘাটতি। বেশির ভাগ মানুষই এসব উপেক্ষা করছে। সরকার এক সপ্তাহের জন্য লকডাউনের মতো কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও সেটি খুব একটা কার্যকর হতে দেখা যাচ্ছে না। সোমবারও প্রচুর মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। করোনা থেকে রক্ষা পেতে হলে কঠোর ব্যবস্থা নিতেই হবে। আর কে চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App