কবিতা
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২১, ১২:০৭ এএম
নারী ও অলিক পারাবার : মোহাম্মদ রফিক
একটি মরুভূমি নারী
দূর-দূর মরীচিকা নারী
খররোদে তীব্র লু’য়ে
ঝলসে-যাওয়া মরুদ্যান নারী
বহু-বহু শতাব্দীর
বালুর পাহাড় চাপা-পড়া
স্রোতস্বিনী, নারী;
সৃষ্টিশীলতার ফল্গুধারা,
এক হাজার-এক রজনীর
লোভ-লালসার
গপ্পো-সিন্দুকের
মরচে-পড়া তালা-চাবি
অন্তরালে,
আটকে-থাকা হৃৎপিণ্ড, বিস্ময়,
লোক-কাহিনীর
অন্ধকূপে, বিস্তারে বিস্তৃত
অপভাষা বেভুল সংস্কৃতি
লোকাচারে, নিজেকে হারিয়ে
জংধরা রক্তমাংসে নারী,
হাড়গোড় মেদ মাংস চ্যুত
হাট-পুতুলের বাড়া,
ছল, মোহ, বিত্তহীন
বেসাতের ঢঙরঙ;
এই কল্পলোহাপিতলের
সিন্দুকের তালা খুলতে পারে
একটিমাত্র স্বপ্নচাবি,
ভালোবাসা; মরুভূমি জুড়ে
মানবী উদ্ধারে মরুঝড়
ভয়াল বিষম দিদ্বিদিগ;
তারপরও, নারী
সে তখন নিজেও বিস্মিত
হতচমকিত, অপ্রস্তুত,
রং ও রূপের লীলাপাতে
বিমূঢ় অস্থির
আত্ম-আবিষ্কারে আবেগের
উন্মুখ বিপুল আত্মদানে
আদি ধ্রুপদিয়া রাগ যেন
বিচ্ছুরিত সহস্র রাগিণী!
সনেটের দিন : রেজাউদ্দিন স্টালিন
সনেটের দিন শেষ, কার তবে শুরু?
সোনালি মোড়কে পেলে নতুনের স্বাদ
কিছুটা মিলবে; বোধে ছড়াবে অগরু।
পাঠক খুঁজবে ছন্দে আছে নাকি খাদ?
অক্ষর বৃত্তের কাছে স্বরবৃত্ত শিশু,
মাত্রবৃত্ত শ্রম দেয় কুলিনের ঘরে।
মুক্তছন্দ কি উদার ক্ষমাশীল যিশু
তাকেই আঁকড়ে আছি বাহিরে অন্তরে।
আমরা কোথায় যাবো হাভাতে বর্ণের
কতটুকু আঁকা যায়Ñ আকালের ছবি?
জ¦রা দুঃখ মারী থেকে অতিক্রমণের
পথ কোন ছন্দে আছেÑ খুঁজবেন কবি।
এখন সোনালি স্বপ্নে ডুবে আছে মন,
ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করো হে মধুসূদন।
লিপ্সিত লালা : জোবায়ের মিলন
করটি কোটরে অশান্ত বায়ু
খরখরা তাপ উড়ে যাচ্ছে আবোল-তাবোল
বিনাশী বাতাস দশ-কোণ ধরে
আছড়ে পড়ছে অগ্নিমুখর...
কবিও ভুলেছে নৈতিক পথ, শপথ সকল।
কবিতার ননী চুড়িহাট্টার গেছে পুড়ে
চিকন গলিতে; কাঠ পোড়া ছাই-
অহমি পয়ার! কাকের কণ্ঠ সজাগ-সরব
সুরলিত সুর শুনতে পাই না
অনেক অনেক প্রহর।
দজ্জাল দল, দঙ্গল দল, দলদাস দল
মৈথুন-কলা চর্চায়
যখন তখন হাঁকছে, ভুলবাল প্রকরণ।
কবিতা ভুলেছে অহিংস বাণী; বৈরী বাতাসে
যুদ্ধের পণ।
দান, অনুদান-প্রত্যাশী কবি অথর্ব ছকে আঁকছে
ছেবলা সময়।
আদরিণী স্বদেশ : অমল কৃষ্ণ বনিক
বাংলাদেশ মোর মনোরম দেশ,
বলব কি আজ, আদরিণী স্বদেশ।
বিশ্ব মাঝে মাথা তুলে আজি, আনন্দেরই নাই যে শেষ।
তুমি-ই আমার জন্মভূমি, তুমিই আমার দেশ।
জন্মেছি আমি তব ক্রোড়ে মা, খেলেছি তোমার কোলে,
করেছ যে আজ পুষ্প সাজ, বিশ্ব সভার মাঝে।
যাব না ছেড়ে প্রতিজ্ঞা মোর, চলব তোমার বোলে,
গর্বে যে মোর বুক ভরে উঠে, বিশ্বসভার কাজে ॥
কেউ পারবে না দুঃখ দিতে, আছে যে মোর বল,
মনে যে মোর শক্তি আছে, অটুট মনোবল।
তোমার যে মা অনেক আছে, নদী ভরা জল।
মনের মত সাজাব তোরে, বল মা আমায় বল ॥
পারব কি মা এমনি ভাবে, পেলে তোমার বর,
তুমি আমার লক্ষ্মীমনি, আদর তুমি পাও।
সাধ্য আমার অনেক আছে, অন্তরে মোর শুদ্ধ মন,
ভাবছ কি আজ, বলছে সবাই, দু’হাত ভরে দাও ॥
চিন্তা করো না সাথে থাক মোর, আছে অনেক রত্নধন,
শক্তি বুঝুক, বুদ্ধি দেখুক, পুষ্পগন্ধ মানিক রতন।
আমায় শুধু দাও মা আদর, তোমার আছে পুষ্পবন,
সবুজ আছে পাহাড় আছে, মোর আদরিণীর মন ॥
দেখতে তোমায় হবেই যে মা, জেগে রব বারো মাস,
সব কিছুই মা দেখবে তুমি, দেখব তোমার নীলাকাশ।
ফুলে ফুলে গাথব মালা, তোমায় ফুড়াব মনের আশ,
কিছুই আমি হারাব না মা, হবে তো মোদের ছন্দ বিকাশ।
অমৃত অমলে ভরে দেব মা, আমার যা আছে শুদ্ধ মন,
ফোটা ফুলে আজ ভরব ডালা, তোমায় দেখে দিশাহারা।
পদ্মার জলে স্নান সেরে আজি, করব তোমায় আবাহন,
কেমন করে হই যে সুচি, আশীষ পাই যেন অন্তরে।