বাড়তি বই ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন প্রকাশকরা
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২১, ০৯:২২ এএম
করোনার প্রভাবে দফায় দফায় সময়সূচি পরিবর্তনসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় হতাশায় রয়েছেন বইমেলার স্টল মালিকরা। বিক্রি আশানুরূপ না হওয়ায় মেলায় আনা বাড়তি বই অনেকে ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন। ছবি: ভোরের কাগজ
করোনার প্রভাবে দফায় দফায় সময়সূচি পরিবর্তন, হরতাল-নৈরাজ্যের প্রতিবন্ধকতা আর ঝড়ের ধাক্কা সামলে অমর একুশে গ্রন্থমেলা খানিকটা ঘুরে দাঁড়ালেও হতাশা কাটছেই না স্টল মালিকদের। বিক্রি আশানুরূপ না হওয়ায় মেলায় আনা বাড়তি বই অনেকে ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে ব্যয় বা লোকসান কমাতে বিক্রয়কর্মীদেরও বিদায় করছেন।
শুরু থেকেই মেলা পুরোপুরি জমে না ওঠায় এমনিতেই হতাশ ছিলেন প্রকাশকরা। তারা ভেবে নিয়েছিলেন শেষের দিকে মেলা জমে উঠবে, ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়বে। বেচাবিক্রি বেশি হলে লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবেন। তবে শেষ পর্যন্ত মেলার সময় নিয়ে সবচে বেশি হতাশ ক্রেতারা। তারা যখন মেলায় আসছেন তখনই মেলার প্রবেশ পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কোনোভাবেই আর জমে উঠছে না বেচাবিক্রি। এতে হতাশ হয়ে বাড়তি বই স্টল থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন প্রকাশকরা।
আগের দিনে পাঁচ ভ্যান বইমেলা থেকে অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছেন চারুলিপির স্বত্বাধিকারী হুমায়ুন কবির। সেই সঙ্গে স্টলের ১৮ জন বিক্রয় কর্মীকেও বিদায় করে দিয়েছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, থেকে কী লাভ। মেলার সময়টা এমনভাবে করা হয়েছে ক্রেতা আসার কোনো সুযোগ নেই ক্রেতা না এলে বিক্রি হবে কি করে? তাই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
চারুলিপির মতোই অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে বাড়তি বই ফেরত নেয়া হয়েছে। সেসঙ্গে বিক্রয়কর্মীদের মেলা শেষের আগেই বিদায় করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকাশকরা জানালেন, মেলার জন্য যে বিনিয়োগ করেছি তা আর উঠে আসবে না। এখন লোকসান যত কমানো যায় ততই নিরাপদ। সেজন্যই বিক্রয়কর্মীদের তারা বিদায় করছেন। তাদের আশঙ্কা মেলা আর জমে উঠবে না। খালি হাতেই ফিরতে হবে।
একইভাবে হতাশা প্রকাশ করে অন্বেষার স্বত্বাধিকারী শাহাদাৎ হোসেন বলেন, বইমেলাকে আর প্রাণবন্ত বলার সুযোগ নেই। আশান্বিত হওয়ারও সুযোগ নেই। সার্বিক বিচারে ১০ শতাংশও বিক্রি হয়নি। চরম হতাশা নিয়েই মেলা শেষ করতে হবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বললেন, করোনার কারণে মেলায় এমনিতেই পাঠক মেলামুখো হচ্ছে না। তার ওপর বড় অসুবিধা হচ্ছে মেলার সময়সূচি। অথচ মেলার মূল পাঠকই আসে বিকেলের পরে। আর তখনই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মেলা। অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত এই মেলাটা আর প্রাণ পেল না। তারপরও শুক্র শনিবারের অপেক্ষায় আছে সবাই।
বারিধারা থেকে আসা ডাক্তার সারাবানু সূচি বলেন, মেলার সময়টা বড্ড অড টাইম। দুপুরের লাঞ্চ শেষ না করে মেলায় আসি কী করে? বিকেলেই তো আসতে হবে। যখন এসে মেলায় পৌঁছি তখন দেখি মেলা প্রায় শেষ।
উত্তরা থেকে আসা ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্রেয়সীও বলেন, বইমেলা ১২টা থেকে হলেও ওই সময় বাড়ি থেকে বেরুনো যায় না। ঘণ্টাখানেক পরেই তো দুপুরের খাবারের সময়। সেসময় বাড়ি থেকে বেরুনোটা কঠিন (সো টাফ)। তাই লাঞ্চ সেরেই বেরুলাম। বেরিয়েই গাড়ি পেতেও বেশ খানিকটা বেগ পেতে হলো। তাই মেলায় ঢুকতে ঢুকতে প্রায় সাড়ে ৪টা বেজে গেল। আধা ঘণ্টায় কী করে বই কিনব?
মতিঝিল থেকে আসা কন্যা অর্পিকে নিয়ে আসা গৃহবধূ সানজিদা মিনুও বললেন, সংসারের কাজ গুছিয়ে তবেই বেরুলাম। ততক্ষণে মেলার বেলা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। তড়িঘড়ি দুয়েকটা বই কিনে নিচ্ছি। সব বই কিনতে আরো একদিন আসতে হবে।
সর্বশেষ বেলা ১২টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৫টার মধ্যেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মেলার প্রবেশ পথ। এই সময়ের মধ্যে মেলায় ক্রেতা বা পাঠকের দেখা মিলছে বিকাল ৪টার পর।
করোনার কারণে ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে এ বছর ১৮ মার্চ মেলা শুরু হয়। সেদিন বিকালে মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেলার নির্ধারিত সময় ছিল বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। কিন্তু করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেলে গত ৩১ মার্চ বইমেলার সূচি পরিবর্তন করে বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত করা হয়। এরপর আবার সাত দিনব্যাপী কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পর সময় বাড়িয়ে প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত মেলার সময়সূচি করা হয়।