×

পুরনো খবর

এই যেন প্রকৃতির প্রতিশোধ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২১, ১২:১২ এএম

এই যেন প্রকৃতির প্রতিশোধ
সব কিছুর একটা সীমা থাকা দরকার। সীমা লঙ্ঘন করলেই বিপদ! কিন্তু আমরা বিপদকে বিপদ মনে করছি না, ভাবছি না শেষ পরিণতির কথা। আর ভাবছি না বলেই আজ মহাসংকট এসে উপস্থিত হয়েছে। এই সংকট আমি, আপনি সবার। পুরো বিশ্বের। এই বিপদ থেকে শিক্ষা না নিলে আরো ঘোর বিপদ এসে বিশ্বের সম্মুখে দাঁড়াবে। সেই দিন আর দূরে নয়, অতি সন্নিকটে। আমরা রোজ মানুষ মারার জন্য বোমা বানাচ্ছি। দেশ, জাতি ধ্বংস করার জন্য অস্ত্র বানাচ্ছি। চাঁদে যাচ্ছি। মঙ্গলে যাচ্ছি। মহাকাশ স্টেশনে যাচ্ছি আসছি। সমুদ্র তলে ডুবো জাহাজ পাঠাচ্ছি। পাতাল রেল বানাচ্ছি। কিংবা সমুদ্রের তলে রেললাইন করছি। আরো কত কত বিস্ময়কর আবিষ্কার করছি তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু আমরা একটা ওষুধ বানাতে পারছি না। এর থেকে বুঝা যায় এই বিশ্ব চিকিৎসাবিজ্ঞানে কত পিছিয়ে! আজ করোনা সবাইকে গিলে খাচ্ছে। রোজ হাজার হাজার মানুষ পৃথিবী থেকে বিয়োগ হচ্ছে। কাল আমার না আপনার কেউ জানি না।অথচ আমরা সমান তালে একে অন্যের দোষ দিয়ে যাচ্ছি। এখন দোষ দেয়ার সময় নয়, এখন পুরো বিশ্বের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এক হয়ে কাজ করার সময়। একটা কার্যকরী ওষুধ তৈরি করার সময়। এখানেও কেউ এক হচ্ছে না। সবাই বাহবা কুড়ানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। কার আগে কে ওষুধ তৈরি করবে।মানুষের জন্যই তো মানুষ। আর সেই মানুষই যদি রোজ মৃত্যুর দেশে পাড়ি জমায় তাহলে এতসব আয়োজন কার জন্য? কিসের জন্য? আসলে এটা প্রকৃতির প্রতিশোধ। রোজ আমরা বায়ুদূষণ করছি, কলকারখানার বর্জ্য নদী সাগরে ফেলে পানি দূষণ করছি, মাটিতে প্লাস্টিক ফেলে মাটি দূষণ করছি। মেশিনারি, গাড়ি বা যানবাহনের বিকট শব্দে শব্দদূষণ করছি। ফলে প্রকৃতিতে পড়ছে বিরূপ ছায়া। যার ফলে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, সুনামি, ঘূর্ণিঝড়, সর্বোপরি বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব, মহামারি হয়ে দেখা দিছে কাল থেকে কালে।বন উজাড়ের ফলে খরার সৃষ্টি হচ্ছে। পশু-পাখি তার আবাসস্থল হারাচ্ছে। নানারকম পশু-পাখি বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে। ফলে পরিবেশ নিয়ত ভারসাম্য হারাচ্ছে।পানি দূষণের ফলে জলাশয়ে আজ আর আগের মতো মাছ নেই। জলজ প্রাণীরাও হুমকির মুখে। যানবাহনের বিকট শব্দে রোজ কোটি কোটি মানুষের কানের সমস্যা থেকে শুরু করে উচ্চরক্তচাপ, মাথাব্যথা, হার্টের সমস্যা দিন থেকে দিন প্রকট হচ্ছে। আর বিকট শব্দে বিভিন্ন পশু-পাখি ভয়ে দূরে সরে যাচ্ছে। কিংবা বিলুপ্তির পথে।আমরা রোজ নির্বিচারে বালি উত্তোলন, পাথর উত্তোলন, কয়লা উত্তোলন ও পাহাড় কেটে ভূমির বারোটা বাজাচ্ছি। যার ফলে ভূমিকম্পের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে আর সুনামি হাত বাড়িয়ে ডাকছে। তাহলে দেখুন আমরাই হ্যাঁ, আমরাই মানুষরা আমাদের সুখের জন্য, বেশি আরামের জন্য, বেশি লোভের জন্য প্রকৃতিকে রোজ আঘাত করছি। যার ফলে প্রকৃতিও আজ আমাদের বিরুদ্ধে চলে গেছে। একটু খেয়াল করে দেখুন যে পশু-পাখিকে আমরা খাঁচায় বন্দি করে রেখে চিড়িয়াখানা নামক খাঁচা বানিয়ে তাদের সেখানে ভরে অর্থ উপার্জন করি সেই পশু-পাখিরা কিন্তু আজ বাইরে। মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে।আমার মনে হয় পাখিরাও আজ আমাদের উপহাস করছে।আমাদের নিষ্ঠুরতার জন্য করোনা অভিশাপ হয়েই মানবকুলে নেমেছে ধ্বংস করতে। আমাদের এবার সতর্ক হতে হবে। প্রকৃতির ওপর। যতই আমরা প্রকৃতিপ্রেমী হবো ততই দেশের কল্যাণ হবে। দেশ, বিশ্ব ফুলে ফলে, পশু-পাখিতে ভরে উঠবে। অক্সিজেন নির্মল হবে। কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কমবে।প্রকৃতি দূষণ মুক্ত হলে আমরাই নিরোগ থাকব। তাই প্রকৃতিকে ভালোবাসতে হবে। পশু-পাখিকে নিজের করে রাখতে হবে। পুরো বিশ্বকে পশু-পাখির জন্য অভয়ারণ্য করে গড়ে তুলতে হবে। নদী, সাগর দূষণ থেকে মুক্ত রাখতে হবে। আমরা একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবো লকডাউনের তৃতীয় দিনে বাংলাদেশের কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত জনশূন্য হওয়ায়, দূষণ মুক্ত হওয়ায় শত শত ডলফিন তীরে এসে খেলা করছে। কেননা পানি পরিষ্কার হওয়ায় ডলফিনরা ফিরে এসেছে তীরে তীরে। চলুন এই লকডাউন থেকে শিক্ষা নিয়ে কমপক্ষে মাসে দুদিন পুরো বিশ্ব লকডাউন করি। প্রতি মাসের ১৫ তারিখ একবার ৩০ তারিখ একবার। তাহলেই অন্তত পরিবেশ প্রকৃতি একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে। আসুন পরিবেশ বাঁচাই, বিশ্ব বাঁচাই। নির্মল অক্সিজেনে ভরে উঠুক এই পৃথিবী। এই বসুধায় নেমে আসুক সহস্র কোটি বছরের জন্য বসন্ত। বিশ্বজিত পাল সহকারী শিক্ষক টেকনাফ বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল টেকনাফ, কক্সবাজার। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App