×

স্বাস্থ্য

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস আজঃ স্বাস্থ্যখাতের রুগ্ণ দশা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২১, ০৯:০৪ এএম

অদৃশ্য হয়েও বিশ্বের সব দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার করুণ চিত্র সামনে এনেছে করোনা ভাইরাস। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। দেশে করোনা মহামারি শুরুর পর সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা ও দুর্নীতি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথাযথ নেতৃত্ব দিতে না পারায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ইতোমধ্যেই ‘অকার্যকর’ বলেছেন দেশের শীর্ষ জনস্বাস্থ্যবিদ ও মহামারি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, গত বছর করোনা সংক্রমণের প্রথম ধাক্কার পর চিকিৎসা ব্যবস্থায় অবকাঠামোসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কিছুটা বেড়েছে, এ কথা সত্যি। কিন্তু তারপরও যে পরিমাণে বাড়ানো দরকার ছিল-তা হয়নি। তাদের প্রশ্ন, চরম দুর্যোগেও যদি স্বাস্থ্য বিভাগ নিজেকে সারিয়ে তুলতে না পারে তাহলে দেশের মানুষকে বাঁচাবে কীভাবে?

সংক্রমণ বাড়ার পর সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে অক্সিজেন প্ল্যান্ট ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আাইসিইউ) স্থাপনের কাজে তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু সেই উদ্যোগ বাস্তবের মুখ দেখেনি। এখন দেশের সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত ৩১টি জেলার মধ্যে ১৫টিতেই আইসিইউ নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বারবার সিদ্ধান্ত বদল আর গাফিলতিই এর জন্য দায়ী। বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই মাহবুব মনে করেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অব্যস্থাপনার জন্য জাতি আগেও ভুগেছে এবং আগামীতেও ভুগবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজীর আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতায় স্বাস্থ্য খাতের সক্ষমতার ৫০ শতাংশ অপচয় হয়। তাছাড়া বড় ধরনের বিপর্যয়ের বিষয়টি মাথায় রেখে সরকার আগে থেকে প্রস্তুতি নেয় না। করোনার ক্ষেত্রেও আমরা তাই দেখলাম। সরকার আমলাদের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের জন্য জনগণ, জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের সম্পৃক্ত করতে হবে।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতা বা সমস্যার কথা বললেই অনেকে মনে করে সরকারের সমালোচনা করা হচ্ছে। এটি ঠিক নয়। একক কারো ভুলের দায়িত্ব সরকারের ওপর চাপিয়ে দেয়া ঠিক নয়। ঘাটতির কথা যেমন বলতে হবে তেমনি সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতাও করতে হবে। বিএমএ মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল মনে করেন, মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের দূরদর্শিতার অভাবেই স্বাস্থ্য খাতে কোনো জবাবদিহিতা নেই। ফলে এই খাতে রুগ্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। জবাবদিহিতার জায়গায় কাজ না করতে পারলে এই দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করা যাবে না।

একই প্রসঙ্গে কোভিড-১৯ বিষয়ক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শক কমিটির সদস্য জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. আবু জামিল ফয়সাল ভোরের কাগজকে বলেন, স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি অনিয়মের শেকড় খুব গভীরে। জনস্বাস্থ্যবিদদের পরামর্শ উপেক্ষা করে আমলারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। সেই অনুযায়ীই কাজ হচ্ছে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ মনে করেন, স্বাস্থ্য খাতের রুগ্ণ অবস্থার জন্য আমলাতন্ত্র দায়ী। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা ফেরাতে জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন গঠন করা জরুরি। একটি শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠন করে স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা নিরূপণ ও সমাধানে উদ্যোগী হওয়া জরুরি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটির এক সদস্য ভোরের কাগজকে বলেন, শত সমালোচনার পরও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের টনক নড়েনি। জনস্বাস্থ্যবিদ বা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শকে উপেক্ষা করে করোনাকালে আমলানির্ভর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে সরকার। অধিকাংশ আমলা গুগলনির্ভর বিশেষজ্ঞ। আমলা দিয়ে স্বাস্থ্য খাতের পরিবর্তন সম্ভব নয়। এছাড়া মিটিংয়ে বিদ্যমান ‘খাম প্রথা’ বন্ধ করতে হবে। একজন আমলা ৫/৬টা মিটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন। সেখান থেকে ‘খাম’ নিয়ে পকেটে পুরছেন। প্রয়োজনে সরকার আমলাদের বেতন আরো বাড়িয়ে দিক। তবুও এই ‘খাম’ প্রথার পরিবর্তন জরুরি।

এমন প্রেক্ষাপটে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আজ ৭ এপ্রিল বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব  স্বাস্থ্য দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘একটি সুন্দর এবং স্বাস্থ্যকর বিশ্ব গড়ার প্রত্যয়’। ১৯৪৮ সালের এই দিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার ২ মাস পর ২৪ জুন ১৯৪৮ সালে এই সংস্থার প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল জেনেভায়। সেই সময় সারা বিশে^র ৪৬টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সেই সম্মেলন থেকেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরিতে ১৯৫০ সালের ৭ এপ্রিল থেকে প্রতি বছর নিয়মিত বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App