×

সারাদেশ

গুজব ছ‌ড়ি‌য়েই তাণ্ডব সালথায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২১, ১০:০৮ পিএম

গুজব ছ‌ড়ি‌য়েই তাণ্ডব সালথায়

সালথায় হামলার পর ধংসস্তুপ। ছবি: ভোরের কাগজ।

গুজব ছ‌ড়ি‌য়েই তাণ্ডব সালথায়
গুজব ছ‌ড়ি‌য়েই তাণ্ডব সালথায়

এভাবেই আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় গুরুত্বপূর্ণ কাগজ। ছবি: ভোরের কাগজ।

গুজব ছ‌ড়ি‌য়েই তাণ্ডব সালথায়

পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে নথিপত্র। ছবি: ভোরের কাগজ।

গুজব ছ‌ড়ি‌য়েই তাণ্ডব সালথায়

আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে সরকারি গাড়ি। ছবি: ভোরের কাগজ।

গুজব ছ‌ড়ি‌য়েই তাণ্ডব সালথায়

হামলার পর উপজেলা পুরষদ। ছবি: ভোরের কাগজ।

ফ‌রিদপু‌রের সালথা উপ‌জেলায় লকডাউন কার্যকর করা না করা নি‌য়ে স্থানীয় উ‌ত্তে‌জিত জনতার মা‌ঝে গুজব ছ‌ড়ি‌য়ে সোমবার সন্ধার প‌র প্রায় চার ঘণ্টা ধ্বংসলীলা চালানো হয়েছে। বর্তমা‌নে প‌রি‌স্থি‌তি শান্ত র‌য়ে‌ছে। এলাকায় অ‌তি‌রিক্ত পু‌লিশ ও বি‌জি‌বি মোতা‌য়েন করা হ‌য়ে‌ছে। ঘটনার সময় উপ‌জেলা প‌রিষদ ও থানা এলাকা রণক্ষে‌ত্রে প‌রিণত হয়।

উ‌ত্তে‌জিত জনতা উপ‌জেলা প‌রিষদ ভবন, উপ‌জেলা ভূ‌মি অ‌ফিস, উপ‌জেলায় প‌রিষদ চত্ত‌রে স্থাপিত জা‌তির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মু‌জিবুর রহমা‌নের ম‌্যুরাল, গাছপালা, উপ‌জেলা মু‌ক্তিযোদ্ধা কম‌প্লেক্স, উপ‌জেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গা‌ড়ি‌, সহকারী ক‌মিশনারের গা‌ড়ি, মোটরসাই‌কেল, উপ‌জেলার সাম‌নে অব‌স্থিত পেট্রোল পাম্প, সালথা থানা ও কর্মকর্তা‌দের বাসভবনসহ বেশ কিছু স্থাপনা ভাঙচুর, লুটপাট ও অ‌গ্নিসং‌যোগ ক‌রা হয়।

[caption id="attachment_276644" align="aligncenter" width="687"] উপজেলার কৃষি অফিসার কার্যালয়েও হামলা চালানো হয়। ছবি: ভোরের কাগজ।[/caption]

সোমবার (৫ এ‌প্রিল) বিকেলে উপজেলা সদর থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরের ফুকরা বাজার থেকে ঘটনার সূত্রপাত।

স্থানীয় সূত্রের ভাষ্য অনুযায়ী, করোনা ভাইরা‌সের কার‌ণে লকডাউ‌নে বিধিনিষেধ কার্যকর করতে দুই আনসার সদস্য ও ব্যক্তিগত সহকারীকে নিয়ে সহকারী ক‌মিশনার ভূ‌মি মারুফা সুলতানা খান হীরাম‌নি ফুকরা বাজারে যান। সে সময় নট‌খোলা গ্রা‌মের জাকির হোসেন (৪০) নামের এক ব্যক্তিকে লাঠিপেটা করা হয়েছিল বলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ ক‌রেন। ঘটনার জেরে পরে ফুকরা বাজারে পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের বাকবিতণ্ডা হয়। পরে সেখানে সালথা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ পৌঁছালে উত্তেজিত জনতা পুলিশের ওপর হামলা করে। এতে এস আই মিজানুর রহমানসহ দুজন আহত হন।

[caption id="attachment_276645" align="aligncenter" width="687"] এভাবেই আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় গুরুত্বপূর্ণ কাগজ। ছবি: ভোরের কাগজ।[/caption]

এ সময় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গুজব ছড়িয়ে পড়ে পুলিশের গুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন এবং বা‌হির‌দিয়ার আকরাম আলী হুজুর কে পু‌লিশ ধ‌রে নি‌য়ে গে‌ছে। এমন গুজবে শত শত মানুষ এসে থানা ও উপজেলা কমপ্লেক্স ঘেরাও করে। এসময় সংঘর্ষ হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অ‌গ্নিসং‌যো‌গের ঘটনা ঘ‌টে।

জানা যায়, এই ঘটনায় জোবা‌য়ের হো‌সেন (২০) নামে এক যুবক নিহত হ‌য়ে‌ছেন। তিনি উপ‌জেলার রামকান্তপুর গ্রা‌মের দ‌ক্ষিণপাড়ার আশরাফ আ‌লি মোল্লার ছে‌লে। এছাড়াও এই ঘটনায় পু‌লিশ র‌্যাবসহ বেশ কিছু লোকজন আহত হ‌য়ে‌ছেন।

[caption id="attachment_276646" align="aligncenter" width="687"] পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে নথিপত্র। ছবি: ভোরের কাগজ।[/caption]

সালথা উপ‌জেলা নির্বাহী অ‌ফিসার মোহাম্মদ হা‌সিব সরকার এ ব্যাপারে বলেন, সম্প্রতি তিনি করোনা আক্রান্ত। ঘটনার সময় তিনি সরকারি বাসভবনে ছিলেন না। ফেসবুক ও স্থানীয় বিভিন্ন লোকজন গুজব ছড়ায় যে, পুলিশ এবং প্রশাসন ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করছে। তারা একজন হুজুরকে ধরে নিয়ে গেছে। তারা পুলিশ এবং উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে দিতে উপজেলা অফিসের দিকে আসতে থাকে।

[caption id="attachment_276648" align="aligncenter" width="699"] আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে সরকারি গাড়ি। ছবি: ভোরের কাগজ।[/caption]

তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে অবহিত করলে ফরিদপুর ছাড়াও আশপাশের জেলা হতে পুলিশ ফোর্স আসে। কিন্তু উত্তেজিত জনতার সংখ্যা এত বেশি ছিল যে এই স্বল্পসংখ্যক ফোর্স দিয়ে তাদের ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। একপর্যায়ে তারা উপজেলা অফিস চত্বরে প্রবেশ করে উপজেলা কৃষি অফিসের সমস্ত কিছু তারা ভাঙচুর করে। আমাদের ল্যাপটপ চুরি করেছে এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যে গোডাউন রয়েছে সেটিও তারা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। তারা আমার বাসভবনের দিকে অগ্রসর হলে আমার নিরাপত্তায় যে আনসার রয়েছে তারা গুলি করে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা তাদের উপেক্ষা করে হামলা করে। বাসায় আমার পরিবার ছিল। তারা অতর্কিতভাবে আমার বাসভবনে হামলা চালায়। এখানে গ্যারেজে ইউএনও এবং এসি ল্যান্ডের সরকারি গাড়ি ছিল সে দুটিও জ্বালিয়ে দিয়েছে।

[caption id="attachment_276649" align="aligncenter" width="687"] হামলার পর উপজেলা পুরষদ। ছবি: ভোরের কাগজ।[/caption]

তিনি বলেন, একপর্যায়ে তারা বাসভবনের সমস্ত কিছু ভাঙচুর করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরমধ্যে উপজেলা ভূমি অফিসের নথিপত্র রেকর্ড সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। উপজেলা চত্বরে যে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এবং মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে যে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল রয়েছে সেগুলো তারা তাণ্ডবলীলা চালিয়ে ভেঙ্গে ফেলেছে। তারা যে ধরনের স্লোগান ব্যবহার করেছে এ থেকে বোঝা যায়, লকডাউন মূল কারণ নয়। মূল কারণ হচ্ছে, এখানে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র এবং ধর্মান্ধ গোষ্ঠী তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ভূলুণ্ঠিত করার জন্য এ হামলা করেছে।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আলিমুজ্জামান বিপিএম মঙ্গলবার সালথা থানা চত্ত‌রে সাংবা‌দিক‌দের ব‌লেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সালথা পুলিশের পাশাপাশি ফরিদপুর, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা ও নগরকান্দা পুলিশ সদস্যসহ র‌্যাব, আনসার সদস্য কাজ ক‌রে‌ছেন, তারা ৫৮৮ রাউন্ড শট গানের গুলি, ৩২ রাউন্ড গ্যাস গান, ২২টি সাউন্ড গ্রেনেড এবং ৭৫ রাউন্ড রাইফেলের গুলি ছুড়েন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আট সদস্য আহত হয়েছেন। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App