×

মুক্তচিন্তা

প্রয়োজন জনগণের দায়িত্বশীল আচরণ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২১, ১২:০৭ এএম

রতন কুমার তুরী করোনার প্রথম ঢেউ সামাল দিতে না দিতেই শুরু হয়ে গেছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ, যে ঢেউয়ের আঘাত বাংলাদেশেও এসে পৌঁছেছে আর তাই দিন দিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের হার এবং মৃত্যু। প্রথম ঢেউয়ের শেষের দিকে বাংলাদেশে করোনা প্রায় কমে এলেও টিকা আবিষ্কার এবং তা প্রয়োগের পর দেশের মানুষের অতি আত্মবিশ্বাস, যেখানে-সেখানে স্বদলবলে নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা, করোনার প্রথম ঢেউয়ের মতো মাস্ক এবং স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে না চলা ইত্যাদি কারণে মূলত এ দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ইতোমধ্যে অবশ্য বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন এভাবে চলতে থাকলে প্রথম ঢেউয়ের চাইতে করোনা ভাইরাসটি দ্বিতীয় ঢেউয়ে আরো ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারেন, ফলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দেয়ার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লকডাউনসহ কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ভাইরাসটির দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে প্রথম দফায় এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন দিলেও পরবর্তীতে এর সময়সীমা বাড়তে পারে বলে সরকারের একজন উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীল মন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সরকার এবং মিডিয়াগুলো প্রতিমুহূর্তেই বলছেন জনগণকে মুখে মাস্ক পরিধান করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের যাবতীয় কাজকর্ম করার জন্য, কিন্তু দৃশ্যত আমরা রাস্তা-ঘাটে বের হলেই দেখছি যে সরকারের বেঁধে দেয়া এসব স্বাস্থ্যবিধি এবং করোনা বিধিনিষেধ দেশের অনেক জনগণই মানছে না। ফলে দেশে করোনার সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে মাস্ক পরিধানের মতো এই ভাইরাসের জন্য একটি অতি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়টিকেও মানুষ ছেলে খেলায় পরিণত করেছে। কেউ মাস্ক দিচ্ছে থুতনির নিচে আবার কেউবা মাস্ক হাতে নিয়ে দিব্যি রাস্তা-ঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকেই আবার মাস্ক ছাড়াই রাস্তা-ঘাট, বাজার এবং বহুল জনসঙ্গম এলাকায় নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ বিষয়ে কখনো যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এদের ধরে এরা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে করোনাবিষয়ক স্বাস্থ্যবিধি না মানা এসব অপরিণামদর্শী মানুষ বুঝতেই পারছে না করোনার দ্বিতীয় ঢেউ তাদের এসব ইচ্ছাকৃত ভুলের কারণে দেশের মানুষকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে। যে করোনা থেকে এখনো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে, ইতালি, ব্রাজিল, ভারতের মতো দেশ বের হয়ে আসতে পারেনি, সেখানে বাংলাদেশ অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে করোনার প্রথম ঢেউ সামাল দিতে সক্ষম হয়েছিল শুধু জনগণের কঠোর স্বাস্থ্যবিধিসহ সরকারের বিভিন্ন নির্দেশনা কঠোরভাবে মানার কারণে। বর্তমানে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়েও যদি জনগণ তাদের এবং তাদের স্বজনদের জীবন বাঁচাতে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলে তাহলে করোনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার কারণে দেশে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। এ বিষয়ে আমাদের নিজেদের ভালো নিজেদেরই বুঝতে হবে। করোনা এমন একটি ভাইরাস আমরা এর আগেও লক্ষ করেছি লাশের সারি দীর্ঘ হতে তেমন একটা সময় নেয় না। এই ভাইরাস থেকে মৃত্যু ঠেকাতে নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করাÑ এসব কিছুর বিকল্প নেই। এ বিষয়গুলো আমাদের সবাইকে ভালোভাবে বুঝতে হবে। প্রকৃতপক্ষে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে জনগণের দায়িত্বশীল আচরণের কোনো বিকল্প নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কখনো আমাদের সবার ঘরে ঘরে গিয়ে আমাদের পাহারা দিতে পারবে না মূলত সেটি সম্ভবও নয়, আর তাই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ থেকে বাঁচতে আমাদের সবাইকেই একসঙ্গে করোনার বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। আর সবাই কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করা তেমন একটা কঠিন কাজ হবে না। শিক্ষক এবং লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App