×

সারাদেশ

অবৈধ ইটের ভাটায় বিনষ্ট সড়ক, নীরব প্রশাসন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৩৫ পিএম

অবৈধ ইটের ভাটায় বিনষ্ট সড়ক, নীরব প্রশাসন

রামগড়-খাগড়াছড়ি সড়ক হতে দাঁতারাম পাড়া পর্যন্ত কাঁচা রাস্তাটি যেন একরকম মরন ফাঁদে পরিণত হয়েছে

রামগড়-খাগড়াছড়ি সড়ক হতে দাঁতারাম পাড়া পর্যন্ত কাঁচা রাস্তাটি যেন একরকম মরন ফাঁদে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন ইট ভাটার ব্যবহারের জন্য ডাম্পার, মিনিট্রাক দ্বারা সরবরাহ করা কাঠ ও মাটি রাস্তায় পড়ে নষ্ট হচ্ছে সড়কটি। মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী।

রামগড় উপজেলার নাকাপা পুলিশ ফাঁড়ি থেকে আনুমানিক ৩কিলোমিটার ভিতরে রামগড় ২নং পাতাছড়া ইউনিয়নের দুর্গম এলাকা দাঁতারাম পাড়ায় ইট তৈরি ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ উপেক্ষা করে চলছে অবৈধ ইট ভাটা, ব্যবহৃত হচ্ছে পরিবেশের ক্ষতিকারক ড্রাম চিমনি। গড়ে তুলা ওই ইট ভাটা ৩ টিতে সরকারি কোন অনুমোদন নেই।

এসমস্ত ইট ভাটায় কাঠ, মাটি এবং ইট কেনা বেঁচায় ভারি যানবাহন ব্যবহার করার ফলে রাস্তাটির বেহাল দশা সৃষ্টি হয়েছে। মাটি, কাঠ এবং ইট পরিবহনের ক্ষেত্রে  ডাম্পার এবং মিনি ট্রাক ব্যবহারের ফলে রাস্তার উপর মাটি পড়ে রাস্তাটি দিনের পর দিন নষ্ট হচ্ছে এবং সামনে বৃষ্টির মৌসুমে এর পরিনতি হবে ভয়াবহ। ধুলাবালিতে জনদুর্ভোগে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে সাধারন মানুষ। একদিকে রাস্তায় ধুলাবালি অন্যদিকে রাস্তাটি গর্তে পরিণত হয়েছে। মেইন সড়কটির বেহাল দশার কারনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আশঙ্কাজনক অবস্থায় রোগীদের উপজেলা সদর হাসপাতাল সহ অন্যান্য হাসপাতালে নিতেও পারছেনা সাধারণ মানুষ। সাধারন মানুষ তীব্র ভোগান্তির শিকার হলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহনের বিন্দুমাত্র মাথাব্যাথা নেই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক রুপম মাস্টার জানান, প্রভাবশালী চক্রের হাতে প্রশাসন ও বনবিভাগের দুর্নীতি পরায়ন কর্তা ব্যাক্তিরা থাকার কারণে অবৈধ ইট ভাটার কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছেনা।  সরকারী স্কুল, পুলিশ ফাঁড়ি জনবসতি ও বনায়ন এলাকার সন্নিকটে এ ইট ভাটা গুলো কার্যক্রম চালিয়ে আসছে প্রায় ১২-১৩ বছর ধরে। যার ফলে এসব এলাকার সড়ক গুলো বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। সড়কে চলাচল করতে গিয়ে নানারকম দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে মানুষ।

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা কমল কান্তি ত্রিপুরা জানান, রাস্তাটি ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে ভ্যান এবং কোন যানবহন যেতে চায় না। শিক্ষার্থীদের হেঁটে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হয়। ধুলাবালুতে স্কুলের ড্রেস নষ্ট হয়। শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ইট ভাটার আশে-পাশের বন জঙ্গল লুটপাট ও নির্বিচারে পাহাড় কেটে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করলেও প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে। ধোয়ায় দিন দিন পরিবেশ বিপর্যস্ত হলেও বহাল তবিয়তে অবৈধ ইট ভাটার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে মালিকপক্ষ।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুর্গম পাহাড়ি এলাকা দাঁতারাম পাড়ায় একসাথে (মেঘনা ব্রিকস, আপন ব্রিকস, এমএসপি ব্রিকস) নামের ৩টি অনুমোদনহীন ইটের ভাটার কার্যক্রম পাশাপাশি চলছে।অবৈধ এই ইট ভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে পরিবেশের জন্য মারাত্মক তৈলের ড্রাম চিমনি। পুড়ানো হচ্ছে বনের হাজার হাজার গাছ। ডাম্পার এবং মিনিট্রাক ব্যবহার করে মাটি, কাঠ এবং ইট পরিবহন করায় সড়ক গুলোতে বড় আকারের গর্ত এবং ধুলাবালির সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে পাহাড় কেটে আনা মাটি।

অনুমোদনহীন ইটের ভাটা পরিচালনার বিষয়ে মেঘনা ব্রিকসের স্বত্ত্বাধিকারী খোকন জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে কোন ভাটার অনুমোদন নেই। ব্যবসায়িক ট্রেড লাইসেন্স ব্যবহার করে তারা ভাটা চালাচ্ছেন।

সড়ক অবরোধের বিষয়টি স্বীকার করে এমএসপি ব্রিকসের মালিক পক্ষের প্রতিনিধি নিখিল চন্দ্র নাথ বলেন, বৈঠকের জন্য আমাদের প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছিলো। কিন্তু তারা বৈঠকে বসেনি। সড়কে ডাম্পার, মিনিট্রাক ব্যবহার এবং ভাটায় মূল্যবান কচি গাছ জ্বালানো হচ্ছে এমন অভিযোগের ব্যাপারে তিনি নিশ্চুপ থাকেন।

রামগড় ২নং পাতাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিন্দ্র ত্রিপুরা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, সড়ক অবরোধের বিষয়টি তিনি জেনেছেন। এলাকাবাসী এবং ভাটার মালিকদের সাথে বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন। সড়কের বেহালদশা সম্পর্কে জানানো হলে তিনি জানান, সড়কটি নির্মানের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কেন এখনো কাজ করছেনা তিনি অবগত নন।

রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব কার্বারী ত্রিপুরা বলেন, স্থানীয়দের থেকে তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। সরকারি কাজে উপজেলার বাইরে থাকায় বৈঠকে বসতে পারেন নি। তিনি এলাকায় এসে সবাইকে নিয়ে বসবেন। রাস্তা নির্মাণের ব্যাপারে তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদ থেকে এত বড় বাজেট প্রণয়ন সম্ভব নয়। তিনি প্রয়োজনে জেলা পরিষদ এবং উন্নয়ন বোর্ড থেকে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে সড়ক নির্মাণ করে দিবেন বলে আশ্বাস দেন।

রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামসুজ্জামন জানান, অভিযোগ পেয়েছেন কিন্তু সড়ক অবরোধের বিষয়ে তিনি অবগত নন।

রামগড় উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মু. মাহমুদ উল্লাহ মারুফ জানান, এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ তিনি পাননি। অভিযোগ পেলে তিনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App