×

জাতীয়

হেফাজত নেতা মামুনুলের স্ত্রী পরিচয়ে কে এই নারী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২১, ০৯:১১ এএম

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়েল রিসোর্টে হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের সঙ্গে থাকা নারীর পরিচয় নিয়ে তোলপাড় চলছে। সৃষ্টি হয়েছে বিভ্রান্তি ও ধোঁয়াশা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মামুনুল ওই ঘটনা বোঝানোর চেষ্টা করলেও ফাঁস হচ্ছে একের পর এক ফোনালাপ। কে ওই নারী তা নিশ্চিত হতে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের গলদ্ঘর্ম দশা। এর মধ্যে ওই নারীর সঙ্গে মামুনুলের স্ত্রী, পরবর্তীতে ওই নারীর সঙ্গে কথোপকথন এবং মামুনুলের বোনের সঙ্গে তার স্ত্রীর কথোপকথনের ঘটনায় রহস্য ঘনীভ‚ত হয়েছে। ওই নারীর নাম-পরিচয় এবং ফোন রেজিস্ট্রেশনেও রয়েছে রহস্য।

মামুনুল পুলিশকে জানান, ওই নারীর নাম আমিনা তৈয়্যবা। কিন্তু ওই নারী জানান তার নাম জান্নাত আরা ঝর্ণা। তবে তাদের বিয়ের কাবিননামা আদৌ আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তার প্রথম স্ত্রীর নাম আমিনা তৈয়্যবা বলে চাউর হয়েছে। প্রথম বিয়ের কাবিননামা নিয়ে নাম বদলে এই নারীর সঙ্গে বিয়ের কাবিননামা হিসেবে চালানোর কৌশল করা হলেও বিয়ের বয়স ও দিন-তারিখ মিলছে না! পুলিশ ও গোয়েন্দারা এ ব্যাপারে খোঁজখবর করছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  রবিবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে বলেছেন, হেফাজতের নেতা মামুনুল হক পার্লারে কাজ করা নারী নিয়ে সোনারগাঁওয়ের

রিসোর্টে বিনোদনের জন্য গিয়েছিলেন। ওই নারীকে মামুনুল হক বউ হিসেবে পরিচয় দিলেও নিজের বউয়ের কাছে বলেছে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই পরিচয় দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সংসদে বলেছেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে, আরো তথ্য পাওয়ার পর সবাইকে জানানো হবে। মামুনুল হকের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে মন্ত্রী জানান, ওই নারী তার (মামুনুল) স্ত্রী নন। সোনারগাঁও উপজেলার একটি বেসরকারি হোটেলে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মামুনুল হক একজন নারীকে নিয়ে অবস্থান করছিলেন। টেলিভিশনে ওই নারী নিজ মুখে স্বীকার করেছেন তিনি তার (মামুনুল) স্ত্রী নন। এ বিষয়ে আরো ঘটনা জেনে সবাইকে জানাব। মন্ত্রী বলেন, ঘটনার পর দেখলাম ওই রিসোর্টের ওপর আক্রমণ হলো। কেন এই আক্রমণ আমার জানা নেই। সেখানে কয়েকজন বিদেশি নাগরিক ছিলেন। পুলিশ ও বিজিবি গিয়ে তাদের রক্ষা করেছেন।

শনিবার বিকালে স্থানীয় লোকজনের হাতে আটক হওয়ার পর স্ত্রীকে ফোন করেছিলেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। স্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপে রিসোর্টের ওই নারীকে জনৈক ‘শহীদুল ইসলাম ভাইয়ের স্ত্রী’ সংবোধন করেন মামুনুল। বাসায় গিয়ে পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করার জন্য স্ত্রীকে আগে থেকেই ‘সব জানি বলে’ মিথ্যা কথা বলার পরামর্শ দেন। মামুনুল হকের স্ত্রীকে ফোন করেন মামুনুলের বোন। ২ মিনিট ২০ সেকেন্ডের ওই কলে তিনি (বোন) তাকে (মামুনুলের স্ত্রী) বলেন, কেউ জিজ্ঞেস করলে তুমি বলবা তুমি সব জানো। তোমার মা বিয়ে করিয়েছেন। এ সময় মামুনুলের স্ত্রী বলেন আপা আপনি কি সব জানেন? জবাবে মামুনুলের বোন বলেন, আমরা তোমার সাথে আছি। পরে সব ঠিক করে দিব। তুমি শুধু বলবা সব জানো। এখন ছাত্রলীগ-যুবলীগ পিছে লাগছে।

এদিকে রিসোর্ট থেকে বের হয়ে মামুনুল পাশে একটি মসজিদে অবস্থান নিলেও ওই নারীকে নেয়া হয় চিটাগাং রোডে ‘কাসেমী হুজুরের’ বাসায়। পরে মামুনুল ফোন করেন ওই নারীকে। ৩ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের ফোনালাপে মামুনুল ওই নারীকে বলেন, তুমি পুলিশকে কি বলেছ, পুলিশ কি জিঞ্জেস করেছে? জবাবে নারী জানান, তিনি বলেছেন, তাদের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু কোথায় কোন অফিসে বিয়ে হয়েছে তা বলতে পারেননি। শহীদ নামে একজন ফোন করেছে জানিয়ে ওই নারী মামুনুলকে বলেন, ব্যাগ এবং টাকা তিনি আগেই সরিয়ে ফেলেছেন। ড্রয়ার থেকে কিছু জিনিস খোয়া গেছে। তিনি মামুনুলকে বলেন, কি করতে গেলাম আর কি হয়ে গেল। তিনি তাকে সাবধানে থাকতে বলেন। মামুনুল বলেন, বিয়ের স্ট্যাম্প করতে হবে। ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গার কামারগাঁওয়ের মেয়ে এই নারী। তারা ৫ ভাই ৩ বোন। বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তবে তার মোবাইল ফোন নম্বরটি ‘ঢাকা বডি মাসেজ’ নামে রেজিস্ট্রেশন করা।

এদিকে ওই নারীর (ঝর্ণা) বাবা-মা জানিয়েছেন, তাদের মেয়ে জান্নাত আরা ঝর্ণার ১১ বছর বয়সে খুলনা জেলার সোনাডাঙ্গা এলাকার হাফেজ শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয়। এ দম্পতির ঘরে আবদুর রহমান ও তামীম নামে দুজন পুত্র সন্তান আছে। সন্তান দুটি তার বাবার বাড়ি খুলনায় থাকেন।

জান্নাত আরা ঝর্ণার বাবা অলিয়ার রহমান সাবেক সেনা সদস্য ও আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি বলেন, আমার মেয়ের সঙ্গে জামাতা শহীদুল ইসলামের পারিবারিক কলহের কারণে প্রায় তিন বছর আগে তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। তারপর থেকে দুই বছর আগে আমরা পাত্র দেখে মেয়েকে বিবাহ করার কথা বললে, মেয়ে বলত আমার বিয়ে হয়েছে। এ জন্য আমরা আর কোনো পাত্র দেখিনি। তবে কার সঙ্গে ঝর্ণার দ্বিতীয় বিয়ে হয়েছে সে ব্যাপারে পরিবার জানে না। ঝর্ণার মা শিরীনা বেগম বলেন, শুধু একবার ভিডিও কলিংয়ের মাধ্যমে স্বামী মামুনুল হককে দেখিয়েছিল কিন্তু আমরা বুঝতে পারিনি তিনি মাওলানা মামুনুল হক ছিলেন। অবশ্য শনিবার সন্ধ্যায় রিসোর্টে পুলিশকে এবং সেখান থেকে বের হয়ে রাতে মামুনুল হক ফেসবুক লাইভে জানান, ওই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। দুই বছর আগে তাদের বিয়ে হয়েছে। আগের স্বামী শহীদুলের সঙ্গে ওই নারীর ডিভোর্স হয়েছে। ওই সংসারে দুই সন্তান রয়েছে।

অন্যদিকে ওই নারীর সঙ্গে তার বড়ঘরের এক পুত্র সন্তান ফোন করে শনিবার রিসোর্টের আপত্তিকর ও বিব্রতকর ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন, যার সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। আবার ২ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের অপর এক অডিও রেকর্ডে আরেক নারীর সঙ্গে মামুনুল হকের সময় কাটানোর ইঙ্গিতপূর্ণ আলাপ শোনা গেছে।

প্রসঙ্গত, শনিবার সোনারগাঁওয়ের রয়েলে রিসোর্টে ৫০১ নম্বর কক্ষে নারীসহ ৫ ঘণ্টা জনতার হাতে অবরুদ্ধ ছিলেন মামুনুল হক। খবর পেয়ে হেফাজত নেতাকর্মীরা রিসোর্টে ভাঙচুর করে পুলিশ প্রহরা থেকে তাদের নিয়ে যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App