×

জাতীয়

আবারও ‘লকডাউনে’ বাংলাদেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২১, ০৬:৫২ এএম

করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় দেশে আবারও শুরু হলো এক সপ্তাহের ‘লকডাউন’। করোনা সংক্রমণ শুরুর এক বছরের মাথায় অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই দ্বিতীয়বার ‘লকডাউন’ হলো সারাদেশ। সোমবার (৫ এপ্রিল) সকাল থেকে কার্যকর হওয়া হওয়া এ ‘লকডাউন’ চলবে আগামি ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত। আগের দিন লকডাউনের খবর প্রচারের পরপরই মানুষের মধ্যে ঢাকা ছাোর হিড়িক পড়ে যায়। দীর্ঘযানজটে দুর্ভোগে পড়তে হয় তাদের।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সাত হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার পরদিন থেকে শুরু হওয়া এই সাত দিনের ‘লকডাউনে’ একগুচ্ছ বিধিনিষেধ আরোপের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষের চলাফেরা ও সামাজিক গতিশীতলতা কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনার চেষ্টা করবে সরকার। এর লক্ষ্য একটাই করোনার সংক্রমণ ও প্রাণহানীর লাগাম টেনা ধরা, এবং মানুষ যেনো জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে পায়।

দেশজুড়ে যোগাযোগ সীমিত এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বাধ্যবাধ্যকতা তৈরি হওয়ায় এখন থেকে অনেক কিছুই করা যাবে না, মানতে হবে ‘অপ্রিয়’ কিছু নিয়মও।

[caption id="attachment_234822" align="alignnone" width="726"] সদরঘাট টার্মিনালে যাত্রীদের ব্যাপক ভিড় লেগে যায়। ছবি: ভোরের কাগজ।[/caption]

গত বছর সংক্রমণ কমাতে ঘোষণা করা হয়েছিল সাধারণ ছুটি, যার মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছিল। তবে দীর্ঘ সময় ধরে সংক্রমণের হার কম থাকায় গত কয়েক মাসে দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে ছন্দ ফিরতে শুরু করে। তবে এ সময় স্বাস্থ্যবিধি ও সুরক্ষায় ঢিলেঢালা ভাব দৃশ্যামান হয়ে ওঠে। এর জেরে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত শনিবার ‘লকডাউনে’র ঘোষণা দেয় সরকার। পরদিন এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার এ সময়ে কী করা যাবে আর কী করা যাবে না তা সুষ্পষ্ট করে।

‘লকডাউনে’র সময় মানুষের কাজ ও চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকবে। জরুরি সেবা ছাড়া প্রায় সবকিছুই বন্ধ থাকবে। চলবে না কোনো গণপরিবহন। অভ্যন্তরীণ পথে উড়বে না বিমানও। তবে  জরুরি কাজের জন্য সীমিত পরিসরে খোলা থাকছে অফিস । এ ক্ষেত্রে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব ব্যবস্থায় কর্মীদের অফিসে আনা-নেওয়া করতে হবে। একইভাবে শ্রমিকদের আনা-নেওয়ার শর্তে শিল্পকারখানা ও নির্মাণকাজ চালু রাখা যাবে। ব্যাংক ও পুঁজিবাজারে লেনদেন সময় কমানো হয়। এ রকম ১১ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করে রবিবার প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। অবশ্য প্রজ্ঞাপনে লকডাউন শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। তবে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ ছুটির এই সাত দিনকে ‘লকডাউন’ বলেছেন। বিধিনিষেধ অনুযায়ী, এই এক সপ্তাহ সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় কেবল খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ করা যাবে। কোনও অবস্থাতেই হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ করা যাবে না। [caption id="attachment_276015" align="alignnone" width="784"] রবিবার মহাখালী বাস টার্মিনালে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের ভিড়। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption] ১১ দফা নির্দেশে আরও বলা হয়েছে, শপিং মলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ থাকবে। তবে দোকানে পাইকারি ও খুচরা পণ্য অনলাইনের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই সর্বাবস্থায় কর্মচারীদের মধ্যে আবশ্যিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কোনও ক্রেতা সশরীরে যেতে পারবে না। পাশাপাশি কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করতে হবে।
১১ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে সারা দেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত বছর সাধারণ ছুটির সময় সংক্রমণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সশস্ত্র বাহিনী নামানো হয়েছিল। বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা করে বলা হচ্ছে, ১১ দফা নির্দেশনায় কিছু অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে মানুষ তাঁর কর্মস্থলে (বেসরকারি প্রতিষ্ঠান) যেতে পারবেন কি না, সেটি স্পষ্ট নয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের আনা–নেওয়ার ক্ষেত্রে নিজস্ব পরিবহনব্যবস্থার কথা বলা হলেও সেটি কীভাবে করা হবে, তা নিয়ে দিকনির্দেশনা নেই। লকডাউনে ‘অমর একুশে বইমেলা’ চালু রাখার কথা জানিয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। কিন্তু গণপরিবহন বন্ধ থাকলে মানুষ কীভাবে বইমেলায় যাবেন, তা বলা হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App