×

সারাদেশ

হাতিয়ায় কৃষকের স্বপ্ন ধ্বংস হচ্ছে লোনা পানিতে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২১, ০৮:৫০ এএম

হাতিয়ায় কৃষকের স্বপ্ন ধ্বংস হচ্ছে লোনা পানিতে

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে রবিশস্যের ক্ষেত -ভোরের কাগজ

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নলচিরা ও হরণী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে গত এক সপ্তাহ ধরে দফায় দফায় প্লাবিত হচ্ছে। এতে ওই দুই ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা তিন-চার ফুট পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও পানির উচ্চতা আরো বাড়ছে। এতে তরমুজ, সয়াবিন, মরিচ, চীনা বাদামসহ রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ধ্বংস হচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের স্বপ্ন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতি বছরই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে কৃষকদের।

কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী উপজেলার ওই দুটি ইউনিয়নের ৮৮ হেক্টর জমির রবিশস্য একেবারেই ধ্বংস হয়ে গেছে। জোয়ারের পানি লবণাক্ত হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে আর্থিক সহায়তার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত রবিশস্য চাষিদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করে একটি বিবরণ জেলা অফিসে পাঠিয়েছে। তাতে নলচিরা ইউনিয়নের তুফানিয়াগ্রাম, পঞ্চায়েত, লামছড়ি, কলাপাড়া, গচিঙ্গা ও হরণী ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রাম, টাঙ্কির সমাজ, জয়পুর, মুক্তি সমাজ, আল-আমিন গ্রামসহ ৬টি গ্রামের ৮৮ হেক্টর জমির রবিশস্য লোনা পানিতে প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত ২৮ মার্চ রবিবার থেকে উপজেলায় পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারে পানির উচ্চতা বাড়ছে। প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টায় দুবার জোয়ার হচ্ছে। প্রতিবার জোয়ারে অন্তত ৮-১০ ঘণ্টা নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।

গত শনিবার সকালে সরেজমিন নলচিরা ইউনিয়নের তুফানিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, অনেকেই জমি থেকে অপরিপক্ব তরমুজ তুলে নিচ্ছেন। কেউ কেউ পানির নিচ থেকে গাছ তুলে ফেলছেন।

তুফানিয়া গ্রামের কৃষক মো. খোকন (৬০) জানান, এই বছর ৩ একর জমিতে তরমুজ, বাদাম ও মরিচের চাষ করেছেন তিনি। কিন্তু যে সময় ফসল বিক্রি করার কথা ঠিক তার পূর্ব মুহূর্তে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে সব। ৩ একর জমির মধ্যে সামান্য কিছু তরমুজ বিক্রি করতে পারলেও বাদাম ও মরিচ বিক্রির সময় এখনো হয়নি। জোয়ারের পানি আর না এলেও লবণাক্ততা থাকায় পানি চলে যাওয়ার পরও সবজি গাছ মরে যাবে বলে জানান তিনি।

জোয়ারের পানিতে ডুবে যাওয়া ফসলের জমি দেখিয়ে একইভাবে আক্ষেপ করেন হরণী ইউনিয়নের কৃষক ধীরেন্দ্র চন্দ্র দাস, মো. রিপন, মিরাজ হোসেন, ইলিয়াছ, জামশেদ হোসেন, আবদুল হাই ও মুন্নি বেগম। তারা জানান, এই এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকায় কৃষকদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। সামনে আরো চার-পাঁচ দিন একইভাবে জোয়ারের পানির চাপ থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে।

নলচিরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ন কবির বাবলু জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতি বছর হাতিয়ার নদীর তীরবর্তী এলাকায় বেড়িবাঁধ তৈরি করা হয়। কিন্তু নলচিরা ও হরণী ইউনিয়নের কিছু এলাকায় দরপত্র আহ্বান করতে একটু দেরি হওয়ায় ঠিকাদার এখনো কাজ শুরু করতে পারেননি। এতে এসব এলাকা দিয়ে সহজে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে যাচ্ছে।

হরণী ইউনিয়নের চতলা ঘাট পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. আরিফ বলেন, জোয়ারে পানিতে প্লাবিত এসব এলাকার বহু চাষি আদৌ কোনো ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কিনা এ নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে তরমুজের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। অনেক জায়গায় তরমুজ কৃষকদের ডুবে যাওয়া জমি থেকে ফসল বাঁচানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে দেখা গেছে। আবার বহু চাষিকে লোকসান গুনে হা-হুতাশ করতে দেখা গেছে।

হাতিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জানান, জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আর্থিকসহ অন্যান্য সহায়তা করার জন্য তালিকা তৈরি করা হচ্ছে, যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। এছাড়া আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে জোয়ারে পানির চাপ কমে আসবে বলেও জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App