×

মুক্তচিন্তা

স্বাস্থ্যবিধি না মানলে বাড়বে বিপদ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২১, ১২:৫৭ এএম

বাংলাদেশে এখনো শতকরা ১০ জনকেও টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া আমরা যারা প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছি তার অ্যান্টিবডি তৈরি হতেও ১৫-২০ দিন সময় লাগবে। তদুপরি দ্বিতীয় ডোজের টিকা যেটি এখনো পুরোপুরি শুরু হয়নি। কিন্তু ইতোমধ্যেই আমাদের এক ধরনের খেয়ালিপনা, অসতর্কতা, অবহেলা ও গা-ছাড়া ভাব দৃশ্যমান। হরহামেশাই চলছে পারিবারিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি। কিন্তু বলা উচিত, সরকার এই ভয়ংকর করোনা মহামারি থেকে জনগণকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য টিকা প্রয়োগসহ নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। লকডাউন তুলে নিয়ে জীবন-জীবিকার মানবিক কারণে করোনা রোধে স্বাস্থ্যবিধি ও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক আইনের প্রয়োগে শিথিলতার কারণে দেশ আবার করোনার ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে আবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউ লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। তাই সরকার সংক্রমণের লাগাম টানতে আঠারো দফা নির্দেশনা দিলেও তা পুরোপুরি মানা হচ্ছে না। তাই সরকারের উচিত, হবে করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে বিধিনিষেধ মানতে আরো কঠোর হওয়া। তাছাড়া দেশে এই পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ছয় লাখের ঊর্ধ্বে এবং মৃত্যুর সংখ্যাও ৯ হাজারের ওপরে। কিন্তু এখনো আমাদের মধ্যে কোনো হুঁশ নেই। এছাড়া ইতোমধ্যে দেশে করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে। নতুন স্টেইনট্রি উপযুক্ত পরিবেশ পেলে দ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বলা বাহুল্য, দেখতে দেখতে করোনা নামের ভয়ংকর এই অদৃশ্য রোগটি এক বছর অতিক্রম করেছে। দেশব্যাপী নানা গুজব, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে অতিবাহিত হলেও ভাইরাসটির টিকা কার্যক্রম শুরু হওয়া আমাদের জন্য সুখবর। কিন্তু ভারত থেকে টিকা আসার পর থেকে মানুষ অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। সবার ধারণা, টিকা দিলে আর করোনা সংক্রমিত হবে না। আবার অনেকে টিকা দিয়ে মানছে না স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব¡। কিন্তু টিকার অতি উচ্ছ্বাসে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আগামীতে ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনতে পারে। অথচ করোনা সংক্রমণের শুরুতে এবং লকডাউন চলাকালীন সময়ে সবাই যেভাবে পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস, গগলস ও গাউন ব্যবহার করত তা এখন খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যার কারণে দেশে হু হু করে আবার বেড়ে চলেছে করোনা সংক্রমণ। অথচ বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার বলে আসছে টিকা গ্রহণ করেও যথাযথভাবে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। কিন্তু সব জায়গায় দেখা যাচ্ছে এর ব্যতিক্রম যেমনÑ গণপরিবহনে ঠাসাঠাসি করে যাত্রী ওঠানামা, ঘেঁষাঘেষি করে বসা, আসনের অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে প্রচণ্ড ভিড়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ক্রেতাদের ভিড়, রাস্তাঘাট, হাটবাজার, শপিংমল, বিপণিবিতান, হোটেল-রেস্তোরাঁয় সবখানে মানুষের গাদাগাদি। নিয়মিত চলছে বড় বড় সমাবেশ, উৎসব-পিকনিক, শত শত বিয়ের অনুষ্ঠান। এমনকি কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন সমুদ্র সৈকতে ও পার্কে লাখো পর্যটকের ভিড়। করোনা সংক্রমণের বৃদ্ধির খবরেও তারা শঙ্কিত নয়। টুরিস্ট পুলিশ মাইকিংয়ের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সচেতন করার চেষ্টা করলেও কেউ কানে তুলছে না তা। স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক পরিধানে রয়েছে চরম অনীহা। আঠারো দফা নির্দেশনায় জনগণ কিছুটা সতর্ক হলেও তাও এই ভয়াবহ করোনার সংক্রমণ রোধের জন্য যথেষ্ট নয়। অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে আছে দেশের শিক্ষা কার্যক্রম। শুধু পাঠদান নয়, একের পর এক বাতিল হচ্ছে বিভিন্ন পরীক্ষাও। কিন্তু যেসব ছাত্র বিগত লকডাউন চলাকালীন সময়ে ঘর বন্দি ছিল কিংবা স্বাস্থ্যবিধি কিছুটাও হলে মানত এখন তারা ঘরবন্দি নেই। খেলার মাঠ, পার্ক কিংবা অলিতে-গলিতে জটলা করে সময় পার করছে। লক্ষ্য করলে দেখবেন তাদেরও একই অবস্থা। স্বাস্থ্যবিধি মানার হার অতি নগণ্য। এই মরণব্যাধি থেকে নিজেকে পরিবার-পরিজন ও অন্যান্য আপনজনকে বাঁচাতে মাস্ক পরিধান, সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়া ও স্বাস্থ্যবিধি মানা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আবার দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, দেশের কোন কোন মহল করোনাকালীন সরকারের সাফল্য ও ভারত থেকে টিকা আনাকে ভালো চোখে দেখছে না। সরকারের উচিত হবে পুরো দেশকে করোনা ভাইরাসের হুমকি থেকে বাঁচাতে যথাযথ সতর্ক ও নজর রাখা। প্রয়োজনের মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে আইনের প্রয়োগ করা। পরিস্থিতি নাজুক হওয়ার পূর্বেই নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক চেষ্টা করা। যদি কাণ্ডজ্ঞানহীন প্রবণতার লাগাম টানা সম্ভব না হয় তাহলে দিন দিন সংক্রমণ শুধু ঊর্ধ্বমুখী নয়, এই ভয়ংকর করোনা ভাইরাসের মহামারি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব নয়।

প্রদীপ ভট্টাচার্য্য : ১২নং মহিম দাশ রোড, চট্টগ্রাম। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App