×

সারাদেশ

নেশার টাকা না পেয়ে কুপিয়ে মাকে হত্যা করল ছেলে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২১, ১০:৩৩ পিএম

নেশার টাকা না পেয়ে কুপিয়ে মাকে হত্যা করল ছেলে

মাদকাসক্ত শহিদুল ইসলাম।

পঞ্চগড়ে নেশার টাকা না পেয়ে মাদকাসক্ত ছেলে শহিদুল ইসলাম (৩২) তার মাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে সদর উপজেলার পশ্চিম মিঠাপুকুর এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটে। নিহত জয়তুন বেগম (৫৫) ওই গ্রামের আব্দুল মজিদের স্ত্রী।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, শহিদুল ইসলাম এলাকায় মাদকাসক্ত হিসেবে পরিচিত। মাঝে মধ্যেই মাদক কেনার টাকার জন্য বাবা-মা ও বোনকে মারধর করতো সে। তার এমন আচরণের কারণে কয়েক বছর আগে তার স্ত্রীও তাকে ছেড়ে চলে যায়। তার উৎপাত বেড়ে গেলে দেড় বছর আগে পরিবারের লোকজন তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। কয়েক মাস আগে জেল থেকে জামিনে বের হয় সে। তারপর আবারো নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে।

এদিন দুপুরে বাড়ির টিউবওয়েলের পাশে কাজ করছিল তা মা জয়তুন বেগম। এ সময় শহিদুল তার মার সঙ্গে নেশার টাকার জন্য ঝগড়া শুরু করে। তার মা টাকা দিতে অস্বীকার করলে সে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার মাকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে আহত করে। এ সময় জয়তুন বেগমের চিকৎকার শুনে প্রতিবেশিরা ছুটে গিয়ে দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় জয়তুন বেগম পড়ে আছেন। স্থানীয়দের দেখে শহিদুল পালিয়ে যায়। পরে প্রতিবেশিদের সহযোগিতায় পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রতিবেশী মো. খোকন জানান, মাদকাসক্ত শহিদুল তার বাবাকে তিন বছর আগে নেশার টাকার জন্য মারধর করেছিল। তখন তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। শনিবার আবার নেশার টাকা না পেয়ে তার মাকে হত্যা করেছে সে। তার মা কঠোর পরিশ্রম করতো। মানুষের বাসায় রান্নার কাজ থেকে শুরু করে নদীতে পাথর উঠানোর কাজ করতেন তিনি। এভাবেই তিনি সংসারের হাল ধরে ছিলেন। এত অভাবের মধ্যে নেশার টাকা জন্য ছেলের উৎপাত অতিষ্ট করে তাদের।

প্রতিবেশি আবুল কালাম আজাদ জানান, দুপুরে জয়তুন বেগম গোসল করার জন্য টিউবওয়েলের পাড়ে যান। এ সময় তার চিৎকার শুনে এসে দেখি ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গলা দিয়ে রক্ত বয়ে যাচ্ছে। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। শহিদুলের কারণে আজ এই পরিবারটির বেহাল দশা।

নিহত জয়তুনের স্বামী আব্দুল মজিদ বলেন, আমি নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম। জয়তুন গোসল করতে গিয়েছিল। শহিদুল সেখানে টাকা চাইতে যায়। ওর মা টাকা কৈ পাবে। তার কাছে তো টাকা থাকে না। টাকা না দেয়ায় ঘর থেকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে তার মায়ের গলায় কোপ দিয়ে পালিয়ে যায়। আমার এই ছেলে এর আগে টাকা না দেওয়ায় আমাকেও কুপিয়েছে। তাকে সবাই ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল। আমরা সব সময় তার ভয়ে থাকতাম। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। তার মাকে সে খুন করলো। এমন সন্তান যেন কারো না হয়।

প্রতিবেশি মালেকা বেগম বলেন, চিৎকার শুনে আমরা গিয়ে দেখি শহিদুল দৌঁড়ে পালাচ্ছে। আর তার মা টিউবওয়েলের পাশে পড়ে আছে। এর আগেও সে নেশার টাকা না দিলে বাবা, মা ও বোনকে মারধর করতো। তার স্ত্রীও এই জন্য তাকে ছেড়ে চলে গেছে।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রাকিব উল হাসান বলেন, ওই নারীকে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, মাদকাসক্ত ছেলের হাতে ওই মা খুন হয়েছেন বলে আমরা জেনেছি। আমাদের সদস্যরা হত্যাকারীকে গ্রেপ্তারের জন্য মাঠে কাজ করছে। আমরা লাশটি ময়নাতদন্তে প্রেরণ করেছি। এ বিষয়ে থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। আশা করি, শিগগিরই হত্যাকারী ছেলেকে গ্রেপ্তার করতে পারবো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App