×

সাময়িকী

সৃজনের পথে সমধারা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২১, ১২:০৮ এএম

সৃজনের পথে সমধারা
শাহমুব জুয়েল সৃজন মহৎ কর্ম। মানবিকতার পাশাপাশি মানুষের যাপিত জীবনের কর্মকে বিকশিত করে এবং মহত্ত্ব প্রকাশ পায়। সৃজনশীল কর্মীরা পৃষ্ঠপোষকতা পেলে উৎসাহিত এবং ভালো-সুন্দরের পথে মনোনিবেশ করে। অন্যান্য সৃজনকর্মের মতো ‘সমধারা’ও কাজ করছে। ‘সমধারা’ সাহিত্য ম্যাগাজিনের নাম। মনে হচ্ছে নামকরণেও সমান্তরালের ইঙ্গিত বহমান। অগ্রজদের পাশাপাশি অনুজদের অংশগ্রহণ অপ্রতুল। তাতে মনে হয় সমধারা চায় অগ্রজদের ছায়ায় অনুজরা স্বর্ণলতিকার মতো বেড়ে উঠুক এবং বিকশিত হোক। তাই দিন দিন ‘সমধারার’ মাধ্যমে সাহিত্যকর্মীদের কলেবর এবং সৃজনশীলতার পথ উন্মুক্ত হচ্ছে। সাহিত্যকর্মে যা উপলব্ধিগত অনুষঙ্গ। গত ২৭ মার্চ ২০২১ শনিবার জমজমাট কবিতা উৎসবে সরব হয়ে ওঠে ধানমন্ডি ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন। আয়োজনে ‘সমধারা’ ম্যাগাজিন। ম্যাগাজিন সম্পাদক সালেক নাছির উদ্দিন। প্রজ্ঞাবান ও সৃজনশীল মানুষ তিনি। বিশ্বব্যাপী করোনার ধকল। মুষড়ে পড়ছে প্রাণ। ভঙ্গুর অর্থনীতি, সামাজিক দূরত্ব, মানসিক অস্তিরতা কাটিয়ে স্বাস্থবিধি মেনে মেধা ও মননকে ধারণ করে ধ্রুবগতিতে আয়োজন করলেন। সত্যিই বিস্মিত কাজ। দুঃসময়ে সাহসিক কাজ করা কঠিন তবুও সম্পাদক স্বকীয় চিন্তনে অনুপ্রাণিত হয়ে কাজ করেছেন। চোখে দেখা ছাড়া উপলব্ধি করা যেত না। মনোযোগ উদার ও উন্নত না হলে তা সম্ভব নয়। তিনি করেছেন সাবলীল এবং সুনসান ভাবনায়। নিজের খেয়ে অন্যের জমি উর্বর করে ক’জন। তাকে না দেখলে বুঝা অসম্ভব ছিল। তিনি অবলীলায় কাজ করছেন এবং বছর বছর সমধারা উৎসবে ভিন্নধারা প্রবর্তনের ইঙ্গিতও করেন তিনি। কবিতা কী? কবিতা উৎসব কী? এ প্রশ্নের নানা উত্তর থাকতে পারে। কিন্তু কবিতা যে মননের ঘূর্ণিত শব্দ ও ভাবের পরশপাথর তা কজন উপলব্ধি করে। কবিতার ভেতরে জীবনযুদ্ধ, মমতা, চেতনা ও অঙ্কুরের অনুরণনশক্তি নিহিত আছেÑ এ খবর বা কে রাখে! সময়ের স্রোতে কতশত রূপ, কত নদীর জল গড়ায়। কবি তার ভাবনালোকে অন্তরতমের সঙ্গে প্রেম করে, নির্জন স্থানে নিজেকে ওড়ায়, মেলে ধরে নিজেকে, অন্য জগৎ বর্ণনায়, শব্দ গেঁথে শিল্পরূপ তৈরি করে। কেননা সাহসী মানুষের জন্য কবিতা। সম্পাদক অনুষ্ঠানের সোভা ও সূচারু প্রকাশের সঙ্গে কবিতার সমাবেশ ঘটিয়ে ‘পদাবলীর যাত্রা’ নামে গ্রন্থও প্রকাশ করেন। যেখানে দেশের নাভীমূল থেকে প্রান্তসীমা পর্যন্ত কবিদের কবিতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কবিতার সংখ্যা ১৬৭। গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন দুজন জান্নাত আরা মমতাজ ও সালেক নাছির উদ্দিন। অগ্রজ ও অনুজদের মেলবন্ধন ঘটেছে গ্রন্থের পরতে পরতে। কাগজ ও কালির সঙ্গেও আপস হয়নি। নিখুঁতভাবে গ্রন্থটি সম্পাদনা করা হয়েছে। মহৎ চিন্তা ও নিঃস্বার্থ উদ্দামতাই তাকে সাহায্য করেছে। নচেৎ এত ব্যয়বহুল ও মেধা খরচার কাজ অসম্ভব ছিল। ‘সমধারা’ ৭ম কবিতা উৎসব-২০২১। অনুষ্ঠানে সৌন্দর্য আনয়নে তিনটি যুগ বিভাগের মতো তিন পর্বে বিভক্ত করা হয়েছে। পর্ব বিভাজন চমৎকার ও নান্দনিক। বঙ্গবন্ধু নিবেদিত আবৃত্তি প্রযোজনা ‘আমি বঙ্গবন্ধু বলছি’, পুরস্কার ও সম্মাননা, শেষ পর্বে নাটক ‘লাল জমিন’। প্রতিটি পর্ব ছিল গোছানো ও সাবলীল। দৃষ্টিনন্দন সাজ ও আলোকসজ্জায় সাহিত্যসুহৃদ মুখাবয়ব ছিল জ্বলজ্বলে এবং মায়ামুখর। প্রথম পর্বের পরিবেশনা বঙ্গবন্ধু নিবেদিত কবিতা ও গানের পাশাপাশি। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রন্থের চুম্বক অংশ পাঠ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকীতে এমন কাজ সত্যিই মোহিত ও মুগ্ধকর। পর্বের নামকরণ করা হয়েছেÑ ‘আমি বঙ্গবন্ধু বলছি’। নামকরণের শিল্পচিন্তার বহিঃপ্রকাশ বিদ্যমান। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবৃত্তিকার ও কণ্ঠশিল্পীদের সুর মূর্ছনায় অনুষ্ঠানস্থল সরগরম হয়ে ওঠে। বাংলা বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু ত্রৈমাত্রিক সুর ও স্বরে দর্শকমনও অনুরণিত হয়। অনুষ্ঠানস্থল জেগে ওঠে অনন্য শিল্পসুষমায়। বক্তৃতা জাগতিক জীবনের তড়িৎকথা। সাহিত্যবোদ্ধাদের বক্তৃতা মগজ সানানোর শিল্পযন্ত্র। কারণ তাদের বক্তৃতায় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের মতো উচ্চৈঃস্বর থাকে না; শিল্প ও অনুরণনের কৌশলী বয়ান থাকে। কথাশিল্পী আনোয়ারা সৈয়দ হক, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, কবি সরোজ দেব এবং কবি-সাংবাদিক ওমর কায়সার, লেখক ও গবেষক আরিফুর রহমান প্রমুখ তা প্রকাশ করেন। দেখে মনে হলো বোদ্ধার বৃক্ষতলে সৃজনের পুষ্পস্নান। মন্ত্রমুগ্ধের মতো সবাই তাকিয়ে আছে, মঞ্চ থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে শিল্প-সৌন্দর্য। লাল-সবুজ পরিহিত সৃজনকর্মীদের মন বারবার শিহরিত হচ্ছে। মাঝে মাঝে সৃজনকর্ম ও অংশগ্রহণকে ধরে রাখতে ক্যামেরা ফ্লাশ দেখা যাচ্ছে। দুর্ভাগ্য, সেদিন নেটওয়ার্ক দুর্বল ছিল। না হলে মুহূর্তে মুহূর্র্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সে খবর তেপান্তর ও বিদেশ বৈভবে পৌঁছে যেত। তবুও চেষ্টা ছিল সৌন্দর্যের বহতা তৈরিতে। মানুষ কর্ম করে। বেঁচে থাকতে চায়; বাঁচিয়ে রাখতে হয়। সমধারা সৃজনশিল্পীদের বাঁচিয়ে রাখতে সম্মাননা রাখে। ‘সমধারা’ সাহিত্য পুরস্কার-২০২১ লাভ করেন কথাশিল্পী ইমদাদুল হক মিলন ও কবি সরোজ দেব। নগদ অর্থ মূল্যের পাশাপাশি বাঁধাই করা সুন্দর আলোকচিত্র প্রদান করা হয়। পরবর্তী বছরে পুরস্কারের জন্য কথাশিল্পী আনোয়ারা সৈয়দ হক ও কবি ওমর কায়সার প্রমুখের নাম প্রস্তাব করা হয়, যা ভিন্নমাত্রার সংযোজন এবং সৃজনশীল কর্মীদের উৎসাহের কর্মতৎপরতা। শেষ পর্বে ভিন্নমাত্রার সংযোজন হলো নাটক পরিবেশন। নাটক দর্শককে ধরে রাখার মাধ্যম হলেও নাটকে যাপিত জীবনের বহুমাত্রিক রঙভূমি। মানব ইন্দ্রিয়কে দ্রুতগতিতে ধাক্কা দিতে সমর্থ হয়। মুহূর্তে জাগ্রত করতে পারে। কারণ দেখা ও শোনা নাটকের উপাদান। তাতে সহজ ও গতি সঞ্চারীভাব নিহিত থাকে। মঞ্চনাটকের শিল্পরূপ নান্দনিক। মোমেনা চৌধুরীর একক অভিনীত ‘লাল জমিন’ নাটকের সংলাপ ছিল মন্ত্রমুখর। রক্তপ্রবাহের স্বর ও সুরের অবগাহন। নাট্যকারের কথাশৈলী সুষমা পায় অভিনয় শিল্পের উপস্থাপন স্বচ্ছতায়। ‘লাল জমিন’ নাটকের উপস্থাপনা দর্শকশ্রেণির মনকে শিহরিত করেছে। আপন প্রাণে গতি সঞ্চার করেছে। বিষয় বৈভবের সঙ্গে সঙ্গে শিল্পসুষমা কতটা যুক্তগ্রাহ্য! ‘লাল জমিন’ নাটকের মঞ্চায়ন তা-ই প্রমাণ রাখে। উল্লেখ্য, সমধারা ও ৭ম কবিতা উৎসব ২০২১-এর কথা। মুক্তপ্রাণ ও ধ্বনির উঠোন ‘সমধারা’। সময়ের সঙ্গে মেলবন্ধন রেখে গতিশীল হচ্ছে। অগ্রজের পাশে অনুজের উঠার সিঁড়ি তৈরি এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুরন্ত ও সাহসী হতে শেখায়। কবিতার কারখানা তৈরির প্রত্যয়ে, সত্য, সুন্দর ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তার মাঠ সৃজনেও হাত বাড়ায়। কোনো ক্লেশ বা বৈরিতার অবকাশ নেই, সৃজনের পথে যে আসে তার পথকে সুগম করে। কামনা শুধু সাম্প্রতিক সমস্যাকে উৎরে মানবিক চারাগাছ রোপিত হোক সমধারার উঠানে, পল্লবিত, মুকুলিত এবং শোভিত হয়ে আলো, অনেক আলো আসুক সৃজনের পথে পথে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App