ছুটির দিনে পাঠকের ঢল: জমে উঠতেই শেষ হচ্ছে মেলা
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৪১ পিএম
শুক্রবার ছুটির দিনে বইয়েল স্টলে পাঠকদের ভিড়। ছবি: ভোরের কাগজ
করোনার ঢেউয়ে পরিবর্তিত সময় অনুযায়ী সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার মধ্যেই গুটিয়ে যাচ্ছে মেলা। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মেলার প্রবেশ পথগুলো। নতুন আর কেউ ঢুকতে পারছেন না এই সময়টায়। তখন স্টলে স্টলে প্রস্তুতি চলে সবকিছু গুটিয়ে ঘরে ফেরার। অথচ ঠিক এই সময়টাতেই জমে উঠছে বেচাকেনা। ফলে অনেকটা শুরুতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে মেলা।
অফিস শেষে কিংবা ঘর থেকে বিকেলে বের হয়ে মেলা চত্বরে ঢুকে পড়া ক্রেতাদের ভিড়ে ঠাসা তখন স্টলগুলো। বই কেনার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠছেন তখনও আগেই চত্বরে আসা পাঠক-বইপ্রেমীরা। তবে সরকারি নিষেধাজ্ঞা মানার জন্য ক্রেতাভরা স্টলের পর্দা নামিয়ে দিতে বাধ্য হতে হচ্ছে প্রকাশকরা। এতে ক্রেতারাও কিছুটা হতাশ হয়ে পড়ছেন। কেনাকাটা অসমাপ্ত রেখেই মেলা চত্বর ত্যাগ করতে হচ্ছে। সন্ধ্যা নামার আগেই বিষণ্ন বদনে ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের।
এমন দৃশ্য দেখ গেল শুক্রবার (২ এপ্রিল) মেলার ১৬তম দিনে সন্ধ্যার আগের। মেলা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন বইপ্রেমীরা। হাতে হাতে তাদের বইয়ের ব্যাগ। প্রায় সবাই মেলা থেকে বই কিনে বাসায় ফিরছেন। স্টল মালিকরা বলছেন, ঠিক যে সময়টায় মেলায় বইকেনাকাটা জমে উঠছে ঠিক তখনই শেষ হয়ে যাচ্ছে মেলার নির্ধারিত সময়। যদি সময়টা আর এক ঘণ্টা বাড়ানো যেত তাহলে ক্রেতাসহ বিক্রেতাদেরও সুবিধা হতো। ক্যান্টমমেন্ট থেকে সন্তানকে নিয়ে মেলায় আসা ডাক্তার মো. জহিরুল ইসলাম বললেন, বই কেনাটা আমার নেশা। প্রতি মাসে আমি প্রচুর বই কিনি। বই পড়ার এই অভ্যাস ছোটবেলা থেকেই। যখন ছাত্র ছিলাম তখনও বই কিনতাম। সে অভ্যাস এতটুকুও কমেনি। এখনও কিনি এবং পড়ি। যেহেতু আমি একজন ডাক্তার বিজ্ঞানের বই তো পড়িই পাশাপাশি মোগল থেকে শুরু করে নানা ধরনের ইতিহাসের বইও পড়ি। আমার সন্তানকেও বই পড়ার আনন্দটা পাইয়ে দিতে চাই। দামি পোশাক কিংবা অন্য কিছু না কিনলেও খারাপ লাগে না। কিন্তু বই না কিনলে খারাপ লাগে।
ধানমণ্ডি থেকে আসা ড্রাগ ইন্টারন্যাশনালের ট্রেনিং বিভাগের অ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার, ফার্মাসিস্ট মাহমুদা ইয়াসমীন পাপিয়া বললেন, ভাসুরের ছেলে মেয়েদের নিয়েই মেলায় এলাম। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই তারা ঘরবন্দী। সেই এক বছরের ঘাটতিটা পুরণ করতে মেলায় নিয়ে আসা। তাছাড়া বাচ্চাদেরও আব্দার ছিল ওদের পছন্দের বই কিনবে, তাই নিয়ে এসেছি। তবে করোনার সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে তাতে আর বেরুনো যাবে না হয়তো। তাদেরকে বেশ কিছু বিজ্ঞানের কিনে দিলাম। কেবল ভুতের বই পড়লে তো হবে না। বিজ্ঞানের বই পড়েও জানতে হবে। বিশেষ করে নারীরাও যে বিজ্ঞানী হতে পারে তা তারা জানুক। উত্তরা থেকে আসা পপুলার ফার্মাসিটিক্যালের কোয়ালিটি কন্ট্রোল এক্সিকিউটিভ সাদিকা আকতার বললেন, যতকিছুই হোক বইমেলায় আসতেই হবে। ছোটবেলা থেকেই এ অভ্যাস। আমাদের সন্তানকেও বইমুখি করতে চাই, কারণ বাচ্চারা যে হারে মোবাইল অ্যাপস নিয়ে ব্যস্ত থাকে! এতে আমরা শংকিত। তা চলতে থাকলে প্রজন্মের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে না। যে কারণে ছুটির দিনটাকেই বেছে নিলাম। খিলগাঁও থেকে মেলায় আসা সাইমন শাহেদ জানালেন, বইমেলা শীতকালে হওয়ার সুবিধা বেশি। এখন এই চৈত্রমাসের রোদ মাথায় নিয়ে আসতে হচ্ছে। সন্তানদের ঘোরাঘুরিতে যেন সমস্যা না হয় সেজন্যই ছাতা নিয়ে আসা। তবে ছাতা থেকে বের হয়ে ওরা রোদের মধ্যেই দৌড়াদৌড়ি করছে। নওরোজ কিতাবিস্তানের স্বত্বাধিকারী মনজুর খান চৌধুরী বললেন, মানুষ মেলায় সন্ধ্যায়। কিন্তু সন্ধ্যায়ই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে মেলা। তাহলে বিক্রিটা করব কোথায়? অথচ গতবছর ঠিক এই সময়েই ৭৮ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছিল। মাত্র ঘণ্টা খানেক সময় বাড়িয়ে রাত ৭টা পর্যন্ত করলেও অন্তত চাকরিজীবীরা মেলায় পৌঁছে কেনাকাটা করতে পারতেন। আমাদের এই আবেদন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছেও দিয়েছি। আমরা অপেক্ষায় আছি। মূর্ধন্য প্রকাশনের বিক্রয় প্রধিনিধি সুজন জানালেন, অন্যদিনের চেয়ে বিক্রিটা আশানুরূপ হচ্ছে না। মানুষের মেলায় ঢোকার সময়টাতেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মেলা। তাহলে বিক্রিটা হবে কোথায়?
প্রথমার বিক্রয় প্রতিনিধি মোস্তাকিম শাকিল, তাম্রলিপির দিপান্বিতা মাহি, সময় এর মাহবুবা হোসেন বললেন, ছুটির দিনে সমাগম স্বাভাবিকভাবেই হয়, তেমনি বিক্রিও ভালো হয়। কিন্তু বিক্রি ভালো হলেও ভালো বলা যাচ্ছে না। কারণ আসল বিক্রি জমেই ওঠে ৭টা থেকে ৮টার দিকেই। জমে ওঠার সময়েই বন্ধ করতে হচ্ছে মেলার দ্বার। তাহলে বিক্রি করব কীভাবে? বিষয়টা বিবেচনায় নেয়া উচিত।