বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসের পর্দা উঠেছে আজ। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি প্রতিযোগিতাটির উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন ঘোষণাকালে তিনি টুর্নামেন্ট কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্থ্যের বিষয়টি নজরে রাখতে বলেন। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের নতুন ঢেউ শুরু হয়েছে। যা বিবেচনা করে খেলা পরিচালনার নির্দেশ দেন তিনি। করোনা ভাইরাসের কারণে উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশ গেমসের উদ্বোধন করতে না পারায় দুঃখও প্রকাশ করেছেন শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী বক্তৃতায় তিনি বাংলাদেশ অলিম্পিক কমিটি, বাংলাদেশ গেমস আয়োজক কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান। সেই সঙ্গে আগামী অলিম্পিক আসরে বাংলাদেশের অ্যাথলেটদের উপযুক্ত যোগ্যতা নিয়ে প্রতিযোগিতা করার কথাও বলেন তিনি।

[caption id="attachment_275520" align="alignnone" width="705"] বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসের উদ্বোধন অনুষ্ঠান। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

প্রতিযোগিতার উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের এই আয়োজনটা ছিল মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালে। করোনার কারণে হঠাৎ করে তখন স্থগিত করে তা এবার আয়োজন করছি। যদিও আবার নতুন করে করোনা দেখা দিয়েছে। আমি চাইব সবাই স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকটা নজরে রেখে, সমস্ত খেলা নিশ্চিত করবেন।’ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ গেমসের উদ্বোধন হলেও একদিন আগে বুধবার হয়েছে মশাল প্রজ্জ্বালন যাত্রা। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে এই মশালযাত্রা শুরু হয়। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু গেমসের মশাল প্রজ্জ্বালন হয়েছে টুঙ্গিপাড়া থেকে। যে মাটিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সে মাটিতেই তিনি ঘুমিয়ে আছেন। সেখান থেকে গেমসের মশাল প্রজ্জ্বালিত হয়, পরে তা ঢাকা নিয়ে আসে। সেজন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করলাম।’

[caption id="attachment_275521" align="alignnone" width="708"] বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসের উদ্বোধন অনুষ্ঠান। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের আগে সাড়ে ৫টায় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। এরপর অডিও ভিজ্যুয়াল প্রদর্শনীর মাধ্যমে তুলে ধরা হয় বাংলাদেশের খেলাধুলার উল্লেখযোগ্য সব সাফল্যগাথা। বক্তব্য রাখেন বিওএর মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা। এরপর বিওএ সভাপতি ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি বক্তৃতা দেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল মশাল প্রজ্জ্বালন করেন দেশ সেরা গলফার সিদ্দিকুর রহমান ও সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলা। মাঠে ক্রীড়াবিদদের পক্ষে শপথ পাঠ করেন দেশসেরা আর্চার রোমান সানা এবং বিচারকদের পক্ষে শপথবাক্য পাঠ করেন জুডো তারকা কামরুন্নাহার হিরু। আজ থেকে শুরু হওয়া এই আসর চলবে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত।

[caption id="attachment_275522" align="alignnone" width="791"] বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসের উদ্বোধন অনুষ্ঠান। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

গত বুধবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসের মশালযাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান এবং বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের (বিওএ) সভাপতি জেনারেল আজিজ আহমেদের হাত ধরে গেমসের মশালযাত্রা শুরু হয়। বেলা ১১টায় টুঙ্গিপাড়া উপজেলা চত্বরে মশাল প্রজ্জ্বালন করেন তিনি। পরে মশালটি জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ইলিয়াস হোসেন ও ভলিবল খেলোয়াড় জেসমিন পপির হাতে তুলে দেন। এরপর বর্ণাঢ্য মোটর র‌্যালির মাধ্যমে মশাল ঢাকায় আনা হয়। বিকাল ৪টায় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসের মশাল পৌঁছায় অলিম্পিক ভবনে। সেখানে মশাল গ্রহণ করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল। টুঙ্গিপাড়া থেকে মশাল ঢাকায় আনা এবং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রজ্জ্বালন করার জন্য সব মিলিয়ে ২০ জন ক্রীড়াবিদ অংশ নেন।

বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসের উদ্বোধন হলেও এর আগেই বেশ কয়েকটি ইভেন্টের খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিলেটে তিন দলের নারী ক্রিকেট দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসের খেলা মাঠে গড়ায়। পুরুষ ফুটবল দলের খেলা কুমিল্লায় শুরু হয়। এই আসরে ৭ জেলার ২৯টি ভেন্যুর এ ক্রীড়াযজ্ঞে ৩১ ডিসিপ্লিনে ৫ হাজার ৩০০ ক্রীড়াবিদ লড়বেন ১ হাজার ২৭১টি পদকের জন্য, যার মধ্যে সোনার পদকের সংখ্যা ৩৭৮টি। এই গেমস লাল-সবুজের ক্রীড়াবিদদের কাছে বাংলাদেশের অলিম্পিক। এখানে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে সচেষ্ট হন তারা। এবারের আসরের ৩১ ডিসিপ্লিনগুলো হলো অ্যাথলেটিকস, আর্চারি, ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল, বক্সিং, সাইক্লিং, ফেন্সিং, ফুটবল, গলফ, জিমন্যাস্টিকস, হ্যান্ডবল, হকি, জুডো, রোয়িং, শুটিং, সাঁতার, টেবিল টেনিস, তায়কোয়ান্দো, টেনিস, ভলিবল, ভারোত্তোলন, কুস্তি, দাবা, ক্রিকেট, কাবাডি, কারাতে, উশু, খোখো, শরীর গঠন, রাগবি ও রোলার স্কেটিং।

[caption id="attachment_275523" align="alignnone" width="889"] বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসের উদ্বোধন অনুষ্ঠান। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসের আসর ২০২১ সালে বসলেও গত বছরের এপ্রিলে তা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার প্রকোপে তা স্থগিত করা হয়। নতুন সূচিতে যখন আবার আয়োজন হচ্ছে, ঠিক তখনই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে টালমাটাল বাংলাদেশ। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা সফল আয়োজনের চেষ্টা করছেন। এ বিষয় সংগঠনটির উপমহাসচিব আসাদুজ্জামান কোহিনুর বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে একবার পিছিয়েছি এ আয়োজন। সরকারের বিধিনিষেধ মেনে জেলা পর্যায়ে সিভিল সার্জনদের নির্দেশনা দেয়া আছে সব ধরনের সহযোগিতার। পূর্বনির্ধারিত হওয়ায় আয়োজনে সব ধরনের সতর্কতা মেনে চলা বাধ্যতামূলক করা হবে। সবসময় মাস্ক পরিধান, স্যানিটাইজারের নিশ্চয়তা থাকবে। আমরা সর্বোচ্চ নিয়ম মেনে এ আসর আয়োজন করব।