×

মুক্তচিন্তা

হেফাজতকে নিয়ে খেলার পরিণতি শুভ হবে না

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২১, ১২:১১ এএম

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের বিরোধিতার নামে হেফাজতে ইসলামের সমর্থকরা দেশের কয়েকটি স্থানে নজিরবিহীন সহিংসতা চালিয়েছে। ঢাকার বায়তুল মোকাররম এলাকা, চট্টগ্রামের হাটহাজারী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কয়েকটি স্থানে ২৬ মার্চ থেকেই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভকারীরা। এই সংঘর্ষে তিন দিনে মোট ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন কয়েকশ। আহতদের মধ্যে কয়েকজন সাংবাদিক এবং পুলিশও আছেন। হেফাজত ২৮ মার্চ সারাদেশে হরতাল ডেকেছিল। হরতালের দিনও হেফাজত সমর্থকরা কোথাও কোথাও উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছে। তারা লাঠিসোটা নিয়ে, ঘোড়ায় চড়ে রীতিমতো যুদ্ধ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হেফাজত নেতারা যুদ্ধ করার কথা বক্তৃতায়ও বলেছেন। হেফাজত যে তিন দিন ধরে দেশে ভাঙচুরসহ নানা অপকর্ম করল, যার জন্য বেশ কয়েকজন মানুষকে প্রাণ দিতে হলো, কিন্তু একজন হেফাজত নেতাকেও গ্রেপ্তারের কথা জানা গেল না। অথচ টেলিফোনে গাড়িতে আগুন লাগানোর নির্দেশ দেয়ার অভিযোগে বিএনপির নিপুণ রায় চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিতে দেরি হয়নি। আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি প্রকাশ্যে হেফাজতের হরতাল সমর্থন না করলেও বিরোধিতা করেনি বরং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হরতাল ডাকা যৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন। নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতা করেছে কয়েকটি ছোট বাম সংগঠন এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নবগঠিত সংগঠনটিও। এই বিরোধিতাকারীদের প্রতি বিএনপির নীরব সমর্থন ছিল। এমন কথাও শোনা যাচ্ছে যে, বিএনপি-জামায়াতের নেপথ্য সমর্থনেই হেফাজত মোদিবিরোধিতার নামে দেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনের একটি নতুন আবহ তৈরি করতে চেয়েছে। তারা কি সফল হয়েছে অথবা সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে ওঠার কি কোনো অবস্থা দেশে তৈরি হয়েছে? প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করে মোদির সফর বন্ধ করা যায়নি। শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরে সাতক্ষীরা এবং গোপালগঞ্জের কর্মসূচিতেও মোদি অংশ নিয়েছেন। ভারতে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বৃদ্ধির জন্য আরো সহজ কথায় মুসলিমবিদ্বেষী অবস্থানের জন্য মোদিকে দায়ী করে তার বিরোধিতা যারা করলেন বা করছেন তারা কি বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিস্তার চান? এদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অনুসরণ করে ওদেশে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি চাওয়ার মধ্যে যে নীতিহীনতা রয়েছে সেটা বোঝার জন্য ব্যাপক জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না। তবে ধর্মাশ্রয়ী সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে কিছু বামপন্থির মত-পথের মিল আগেও দেখা গেছে, এখনো দেখা যাচ্ছে। ডান-বামের এই চিন্তার ঐক্য দেশের রাজনীতির জন্য কল্যাণকর হবে না। বরং উদার ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির পরিবেশ এতে ব্যাহত হবে। বিশৃঙ্খলা বন্ধে সরকার যে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার কথা ভাবছে, সেটা বাস্তবে কার্যকর হলে বেশি ক্ষতি হবে বামপন্থিদের। ধর্মাশ্রয়ীরা মসজিদ-মাদ্রাসাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কিছু ফায়দা পাবে। কিন্তু বামরা কোথায় যাবে? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হেফাজতের বিপজ্জনক ভূমিকা এবং সরকারের রহস্যজনক অবস্থান নিয়ে কেউ কেউ বেশ স্পষ্ট মতামত প্রকাশ করছেন। হেফাজত যে আওয়ামী লীগ সরকারের নমনীয়তার সুযোগেই শক্তি বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছে তা এখন আর গোপন বিষয় নয়। লেখক স্বকৃত নোমান তার ফেসবুক ওয়ালে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তার বক্তব্যের সঙ্গে আমার দ্বিমত নেই বলে এখানে তার পুরোটা উদ্ধৃত করছি। তিনি লিখেছেন : দেখলাম হেফাজতের একদল হরতাল সফল করতে ঘোড়ায় চড়ে রাস্তায় নেমেছে। থালা দিয়ে ঢাল বানিয়েছে, লাঠি দিয়ে তলোয়ার বানিয়েছে। কারণ তারা মনে করে এখনো মধ্যযুগ। যুদ্ধ এখনো এভাবেই হয়। দস্যু বখতিয়ার খিলজি এভাবেই ঘোড়ায় চড়ে এসে বাংলা দখল করেছিল। অতএব তাদেরকেও ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধ করতে হবে। কিন্তু যুদ্ধটা কার বিরুদ্ধে? নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে? মোটেই না। তাদের যুদ্ধ এদেশের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। সে কারণেই তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সংগীত একাডেমিতে হামলা চালিয়েছে। তাদের যুদ্ধ জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে। সে কারণেই তারা গণগ্রন্থাগার পুড়িয়েছে। তাদের যুদ্ধ অন্য ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে। সে কারণেই তারা হিন্দুদের মন্দির ভাঙচুর করেছে। তাদের যুদ্ধ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে। সে কারণেই তারা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করেছে। সর্বোপরি তাদের যুদ্ধ এই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। তাই তারা রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ভাঙচুর ও আগুনে পুড়িয়েছে। তারা এত সাহস কোথায় পেল? পেল রাষ্ট্রের চালক আওয়ামী লীগের কাছ থেকে। আওয়ামী লীগ টানা আট বছর ধরে তাদেরকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। প্রশ্রয় পেতে পেতে তারা এখন নিজেদের একেকজন খালিদ বিন ওয়ালিদ, ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খিলজি, ওসামা বিন লাদেন, মোল্লা ওমর, শায়খ আবদুর রহমান, বাংলা ভাই ভাবতে শুরু করেছে। আমরা আওয়ামী লীগকে বারবার সতর্ক করেছি। আওয়ামী লীগ আমাদের কথা শোনেনি। লেখক-সংস্কৃতিকর্মীদের কথা আওয়ামী লীগ শোনে না। দলটি মনে করে, লেখক-সংস্কৃতিকর্মীরা তো আমাদের সঙ্গেই আছে, এরা আমাদের ছেড়ে যাবে কই? এরা তো আমাদের কেনা গোলাম। গোলামের কথা শোনার কী আছে? গত কদিন ধরে হেফাজত যে তাণ্ডব চালাল, এরপরও যদি আওয়ামী লীগ সতর্ক না হয়, এরপরও যদি হেফাজতকে প্রশ্রয় দিতে থাকে, এরপরও যদি হেফাজতকে রাজনীতির দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করে, তবে এদেশের ভবিষ্যৎ গভীর গহিন অন্ধকারে তলিয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের শাসনকালে এমনটা হবে আমাদের প্রত্যাশা ছিল না। এমনটা আমরা প্রত্যাশা করি না। সরকার এবং সরকারি দল আওয়ামী লীগকেও তাদের দোলাচল অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মুখে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের কথা বলে হেফাজতের মতো একটি ধর্মাশ্রয়ী এবং চরম সাম্প্রদায়িক সংগঠনের সঙ্গে গোপন সমঝোতার নীতি নিয়ে চললে তাতে সুফল পাওয়া যাবে না। বঙ্গবন্ধু কখনো ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করেননি। ধার্মিক হওয়া আর ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা এক নয়। ইসলামকে একদিকে শান্তির ধর্ম বলে, অন্যদিকে ইসলামের নামে অন্য ধর্ম বিশ্বাসীদের উদ্দেশ্য করে বিদ্বেষ ছড়ানো কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরে খোদা টরিকের লেখাটিও সবার পড়া উচিত বিবেচনা করে আমি এখানে সেটাও তুলে ধরছি। টরিক লিখেছেন : বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর একটি বিশাল অংশ মাদ্রাসা শিক্ষাকে সমর্থন করে! কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাকে সমর্থন করার কারণÑ প্রধানত ধর্মীয়, ব্যক্তি-পরিবারের ইচ্ছা ও আর্থিক! কারণগুলো আপাতদৃষ্টিতে অতি নিরীহ। নাগরিকদের সেই অংশই আবার হেফাজতের অতি ধর্মীয় রক্ষণশীলতার কারণে সংগঠনটি এবং তাদের কর্মকাণ্ডের ঘোর বিরোধী! সে ক্ষেত্রে তাদের ক্ষোভ-ঘৃণা-ভীতি হচ্ছে হেফাজতের কথা শুনলে-মানলে তাদের জীবনযাপন নানাভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অন্ধকারাচ্ছন্ন হবে! সেটা তারা কোনোভাবেই চান না, মানবেন না! হেফাজতের শীর্ষনেতারা নারী স্বাধীনতা, আধুনিকতা, তারুণ্য, শিক্ষা, বাঙালি সংস্কৃতি, সমাজ ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন সময় যে বক্তব্য রেখেছেন, সে কারণে তাদের মধ্যে এই ঘৃণা ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু তারা বুঝতে পারছেন না, হেফাজত নেতাদের এই বক্তব্য কওমি মাদ্রাসার মূল বক্তব্য ও অভিন্ন আদর্শ! তাহলে কওমি ও হেফাজতের একটিকে পছন্দ, অন্যটি অপছন্দ, অথবা একটিকে সমর্থন, অন্যটির বিরোধিতা বিষয়টি অদ্ভুত স্ববিরোধিতা হয়ে যায় না? আপনি যদি মাদ্রাসার সমর্থক হন তাহলে আপনি হেফাজতেরও সমর্থক! আর যদি আপনি হেফাজতের বিরোধী হন, তাহলে আপনাকে মাদ্রাসারও বিরোধী হতে হবে! কারণ হেফাজত ও কওমির কারণ-সমীকরণ অভিন্ন, তাকে আপনি আলাদা করতে পারবেন না, আলাদা করা সম্ভব না! এতদিন আপনি বুঝতে পারেননি, এই শিশু ঘুমন্ত ভল্লুককে! কিন্তু আপনাদের নির্লিপ্ততা ও অগোচরে আজ তা এক বিশাল দৈত্যে পরিণত হয়েছে! তবু কি এই প্রশ্নে আপনাদের ভ্রান্তি কাটছে, ঘুম ভাঙছে? হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ হচ্ছে কওমি মাদ্রাসভিত্তিক একটি সংগঠন। ১৯ জানুয়ারি ২০১০ চট্টগ্রামের প্রায় ১০০ কওমি মাদ্রাসার শিক্ষকদের নিয়ে এই সংগঠনটি তৈরি হয়। মূলত ২০০৯ ও ২০১০ সালে নারীনীতি ও একমুখী শিক্ষানীতির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে এ সংগঠনের জন্ম হয়। এ সংগঠনের চেয়ারম্যান, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা বোর্ডেরও চেয়ারম্যান ছিলেন মাওলানা আহমেদ শফী এবং আল জামিয়াতুল দারুল উলুম মাদ্রাসার পরিচালক জুনায়েদ বাবুনগরী এর মহাসচিব। সুতরাং হেফাজতে ইসলাম শতভাগ কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক একটি সংগঠন, এটা নিয়ে দ্বিধা থাকার কোনো অবকাশ নেই! ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম ঢাকার শাপলা চত্বরে ধর্মের অবমাননা ও নাস্তিকতার অভিযোগে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতায় এক বিশাল সমাবেশের আয়োজন করে। সেখান থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের কাছে ইসলামের হেফাজতে ১৩ দফা দাবি পেশ করে এবং ধর্মনিরপেক্ষ (!) আওয়ামী লীগ সরকার তাদের দাবিগুলো সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে পর্যায়ক্রমে ও কৌশলে বাস্তবায়নের কথা বলে! ১. সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কুরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল করা। ২. আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস। ৩. কথিত শাহবাগ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয়নবী (সা.)-এর শানে জঘন্য কুৎসা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা। ৪. ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা। ৫. ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা। ৬. সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতৎপরতা বন্ধ করা। ৭. মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করা। ৮. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করা। ৯. রেডিও-টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসিঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করা। ১০. পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিস্টান মিশনারিগুলোর ধর্মান্তকরণসহ সব অপতৎপরতা বন্ধ করা। ১১. রাসূলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্র ও তৌহিদি জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যা বন্ধ করা। ১২. সারাদেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ ও মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি, ভয়ভীতি দানসহ তাদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করা। ১৩. অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাছাত্র ও তৌহিদি জনতাকে মুক্তিদান, দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শান্তি দিতে হবে। বাঙালির স্ববিরোধিতার শেষ নেই। বলবেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে কোনো পার্থক্য নেই! দুই নেত্রীর স্বভাব-চরিত্র এক! কিন্তু ভোটের বেলায় এ দুয়ের যে কোনো একটিকে বেছে নেবেন! মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে নিজেকে উদার মনে করবেন, আবার তাদের অভিভাবক সংগঠন হেফাজতে ইসলামকে ঘৃণা করবেন! আইনের শাসন চাই, আবার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করি! গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং আমার পছন্দের দল সবসময় ক্ষমতায় থাকবে সেটা চাই! ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চাই, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারের বিরোধিতা করি না! সংবিধানে আছে একমুখী শিক্ষা, কিন্তু বাজারে আছে বারো ধারার শিক্ষা! নির্বাচনে সৎ-যোগ্য-ভালো প্রার্থীর পক্ষে বলি, কিন্তু ভোটের বেলায় মার্কা খুঁজি! চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ, কিন্তু কাজকর্ম সাম্প্রদায়িক! মুখে ঐক্য-সংহতি বাস্তবে কর্তৃত্ব ও একনায়কত্বের পূজারি! স্ববিরোধিতার এই বিপজ্জনক সংস্কৃতি আমাদের সমাজ ও রাজনীতির ভয়ঙ্কর সংকট তৈরি করছে! যে কারণে গড়ে উঠতে পারছে না একটি সুস্থ ধারার রাজনীতি, সংগঠন ও আন্দোলন। তাহলে কি আমাদের ভবিষ্যৎ ছেড়ে দিতে হবে নিয়তি ও শাসকের ইচ্ছার ওপর? সেই প্রশ্ন ও আত্মোপলব্ধি হতে পারে স্ববিরোধিতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার পথ। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমরা কি ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে থাকব, নাকি ধর্মকে ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও আচরণের বিষয় হিসেবে রাজনীতির ঘোলা পানি থেকে দূরে রাখব? যখন যেটা করলে সুবিধা হবে তখন সেটা করার সুবিধাবাদী ধারা আমরা যতদিন আঁকড়ে থাকব, ততদিন একটি মানবিক সমাজ গড়ার কাজটিতে আমরা পিছিয়েই থাকব। শেখ হাসিনার সরকারকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে যারা এখন নানামুখী কৌশলের খেলায় মেতে উঠতে চাইছেন, যারা ধর্মের কার্ড ব্যবহারকারীদের সামনে রেখে যেনতেন উপায়ে সুফল প্রত্যাশা করছেন, তারা ভুল পথে হাঁটছেন। মনে রাখতে হবে, ভুল পথে হেঁটে ক্লান্তি বাড়লেও গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে না। রাজনীতির কৌশলের খেলায় শেখ হাসিনা যে সবার থেকে এগিয়ে, সে প্রমাণ তিনি একাধিকবার দিয়েছেন। বিভুরঞ্জন সরকার : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App