×

জাতীয়

সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নই চ্যালেঞ্জ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২১, ০৯:২৮ এএম

সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নই চ্যালেঞ্জ

দেশে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। তবে এসব নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ সংক্রমণ শুরুর পর ২০২০ সালে সরকার সারাদেশে সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত বাইরে বের হলে আইনানুগ ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় চলাচল বন্ধেও ছিল কড়াকড়ি নির্দেশনা। কিন্তু সেগুলো কার্যকর হয়নি। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে ‘নো মাস্ক; নো সার্ভিস’ কর্মসূচিও ঝিমিয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে গত সোমবার সরকার ঘোষিত ১৮ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করাই এখন চ্যালেঞ্জ হিসেব দেখা দিয়েছে।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপ ফেরত যাত্রীদের সরকার নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানে বা হোটেলে নিজ খরচে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করে গতকাল মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। আজ বুধবার থেকেই এই নিয়ম কার্যকর হবে। এছাড়া আজ থেকেই অর্ধেক আসন খালি রেখে গণপরিবহন চলবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার দায়িত্ব জনগণের এবং মানানোর দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একার কাজ নয়। অন্যান্য মন্ত্রণালয় মিলে সমন্বিতভাবে নির্দেশনাগুলো কার্যকর করতে হবে। জনগণকেও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে নিজেদের সুরক্ষায় সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। করোনা প্রতিরোধে সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। একই সঙ্গে চলবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতে সবচেয়ে শক্ত অভিযান হবে।

এ বিষয়ে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের অবহেলার কারণে দেশে নতুন করে সংক্রমণের উচ্চমাত্রা তৈরি হয়েছে। অথচ সাধারণ মানুষের একটুও হুঁশ নেই। যেখানে দেখছি দ্রুত শনাক্ত বেড়ে যাচ্ছে, মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে। এরপরও মানুষের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখছি না। মাস্ক পরছে না, মনের সুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে, নিজেকে ও অন্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।

এদিকে গত সোমবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সাংবাদিকদের জানান, করোনার প্রকোপ সারাদেশেই বাড়ছে। এর মধ্যে ২৯টি জেলাকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফেনী, চাঁদপুর, নীলফামারী, সিলেট, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, কুমিল্লা, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, কুড়িগ্রাম, নরসিংদী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, মাদারীপুর, নওগাঁ ও রাজশাহী। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জেলায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্বাস্থ্যবিভাগ যৌথভাবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, করোনার সংক্রমণ বাড়ার জন্য মানুষ দায়ী। গত এক বছর ধরে আমরা যে চর্চাগুলো করেছি, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যে শিষ্টাচারগুলো আমরা শিখেছি, গত দুই-তিন মাসে আমরা চরম আত্মতুষ্টিতে ভুগেছি। এ কারণেই সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি। কোনো স্ট্রেইনকে দায়ী করে লাভ নেই।এখনো যদি সতর্ক হই, তাহলে অবশ্যই আমরা একে মোকাবিলা করতে পারি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটির এক সদস্য ভোরের কাগজকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে, মাস্ক পরতে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্টজনরা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেই যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ মানুষের কাছে নানাভাবে আবেদন-নিবেদনও করছে। কিন্তু মাস্ক ব্যবহারে মানুষের অনীহা দিন দিন বেড়েই চলছে। মানুষের চলাফেরা অনেকটাই করোনাপূর্ব স্বাভাবিক সময়ের মতোই। কেউ কারো কথা শুনছে না। প্রশ্ন হচ্ছে এমন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মানুষ কেন সচেতন হচ্ছে না, মানুষকেই-বা কেন সরকার উদ্বুদ্ধ করতে পারছে না? জনগণ কথা শুনছে না বলে সরকারের দায়িত্ব শেষ করার সুযোগ নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানানোর দায়িত্বটা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগ ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের। এ ক্ষেত্রে সরকারের কঠোরতা ও আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ জরুরি।

সেন্টার ফর ল’ এন্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্সের সাধারণ সম্পাদক জনস্বাস্থ্য আইন বিশেষজ্ঞ এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম ভোরের কাগজকে বলেন, করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি মানা, মাস্ক পরা ছাড়া এখন পর্যন্ত আর কোনো বিকল্প কারো কাছে নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানতে ও মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে অনুরোধ ও বাধ্য করা দুটিই দরকার। প্রয়োজনে জরিমানার বিধান কার্যকর করা যেতে পারে। সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮ অনুযায়ী, কেউ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে জেল-জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। তাই মাস্ক না পরে বাইরে বের হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করতেই পারেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App