×

জাতীয়

জলাশয়ের মাছ চাষীদের দুশ্চিন্তা সাকার ফিশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২১, ১২:০৩ পিএম

জলাশয়ের মাছ চাষীদের দুশ্চিন্তা সাকার ফিশ

ফাইল ছবি

বাংলাদেশে সাকার ফিশের সঙ্গে গ্রামের মানুষের খুব একটা পরিচয় নেই। এই মাছ মূলত রাখা হয় আ্যাকোরিয়ামে অন্য মাছের ময়লা খেকো মাছ হিসেবে। বিভিন্ন রঙের মাছের মধ্যে এই কালো মাছ একদিকে যেমন শোভা বর্ধন করে অপরদিকেব মাছের বর্জ্য এবং অ্যাকোয়ারিয়ামের অন্যান্য ময়লা খেয়ে ফেলে। তবে গত কয়েক বছর ধরে অ্যাকোরিয়ামে নয় শুধু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উন্মুক্ত জলাশয়ে পাওয়া যাচ্ছে এই মাছ। বিভিন্ন জয়গায় এই মাছ ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বিগ্ন মাছ চাষীরা। খবর বিবিসির।

কিছুদিন আগে ঢাকায় জাতীয় জাদুঘরের পেছনের পুকুরে বড় আকারের একটি সাকার ফিশ পাওয়া গেছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই মাছ পাওয়ার খবর এসেছে। অনেকেই ফেসবুকে ছবি দিয়ে নাম জানতে চচ্ছেন। কী করে শখের মাছ পালনকারীদের অ্যাকোয়ারিয়াম থেকে মুক্ত জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়লো এই মাছ তা স্পষ্ট নয়। তবে এত মাছচাষীরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শুরুতে মূলত উপকূলীয় কয়েকটি জেলার জলাশয়ে অর্থাৎ পুকুর, খাল এবং নদীতেও এই মাছ দেখা গেছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে হবিগঞ্জ কিংবা রংপুরের মত জেলা যা উপকূল থেকে দূরে সেখানকার জলাশয়েও দেখা গেছে এই মাছ। স্থানীয় হাটবাজারেও অন্যান্য মাছের সাথে বিভিন্ন সময়ে এই সাকার ফিস দেখা যায়। এই মাছের মধ্যে লাফানোর প্রবণতা থাকায় তারা এক জলাশয় থেকে আরেক জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এক্ষেত্রে বর্ষার সময় যখন নদী ও অন্যান্য জলাশয়ে পানি বাড়ে সেখান থেকেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এই মাছ। মাছটি পানি ছাড়াই ২৪ ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিকস বিভাগের শিক্ষক হালিমা জাহান বলেছেন, দেশীয় প্রজাতির মাছের ওপর সাকার ফিশ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি জলাশয়ের জলজ পোকামাকড়, শ্যাওলা এসবের সঙ্গে সঙ্গে অন্য ছোট ছোট মাছ বা মাছের পোনা খেয়ে ফেলে। ফলে চাষিদের সমস্যা হয়।

আবার সাকার ফিশের পাখনা খুব ধারালো, দেখা যায় অন্য মাছের সঙ্গে লড়াই করার সময় সেগুলোর শরীরে সহজেই ক্ষত তৈরি হয়। এই ক্ষত দ্রুত পচন ধরিয়ে দেয়, এবং ফল হয় অবশ্যম্ভাবী মৃত্যু। ফলে মাছের সংখ্যা অনেক কমে যায়।

মৎস্য আইন ২০১১ অনুযায়ী বাংলাদেশে দেশীয় প্রজাতির মাছের ক্ষতি সাধন হয় এমন যে কোন বিদেশি মাছ চাষ দণ্ডনীয় অপরাধ।

তবে, মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেছেন, সাকার ফিশ শিকার করে না, বরং সে চুষে বা শুষে একসঙ্গে প্রচুর খাবার খায় এবং দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। যে কারণে যে কোন মুক্ত জলাশয়ে থাকা অন্য মাছের সঙ্গে আবাস এবং খাদ্যের যোগান নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা হয়। তাতে অনেক সময়ই দেশীয় জাতের মাছ টিকে থাকতে পারে না। সেইটি একটি ক্ষতি, আর সে কারণে এই মাছের চাষে উৎসাহ দেয়া হয় না।

কিন্তু মি. মাহমুদ মনে করেন, চাষের মাছের ক্ষেত্রে এ মাছ উপকারী হতে পারে। কারণ ড্রাম বা হাপায় করে যখন মাছ চাষ করা হয়, তার গায়ে অনেক সময় যে শ্যাওলা জমে সেটি সাকার ফিশ খেয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে পারে, তাতে মাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে না।

সাকার ফিশের কারণে ইতোমধ্যে মিয়ানমার ও আরব আমিরাতের মৎস্য চাষিরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক মি. মাহমুদ বলেছেন, মিয়ানমারে যে জাতের সাকার ফিশ দেখা যায় সেটি আকারে অনেক বড়। কিন্তু বাংলাদেশে যে জাতের সাকার ফিশ দেখা যায় সেটি খুব আকারের নয়। কিন্তু কোন জলাশয়ে যদি সাকার ফিশ দেখা যায় তাহলে সেটি জাল দিয়ে ধরে তুলে ফেলার পরামর্শ দেন মি. মাহমুদ।

তবে এটি ক্যাটফিশ জাতের হওয়ায় জলাশয়ের একেবারে নিচের স্তরে থাকে, ফলে সরিয়ে ফেলার কাজটি খুবই কঠিন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App