×

জাতীয়

হেফাজতের আমির আব্দুল আউয়ালের পদত্যাগের ঘোষণা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২১, ০৮:১৯ পিএম

হেফাজতের আমির আব্দুল আউয়ালের পদত্যাগের ঘোষণা

মাওলানা আব্দুল আউয়াল। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় আমির মাওলানা আব্দুল আউয়াল পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি নারায়নগঞ্জ জেলা হেফাজতের আমির পদেও দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। হেফাজতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালের পরদিন সোমবার শবে বরাতের রাতে মসজিদে বয়ান করার সময় তিনি এই ঘোষণা দেন।

এছাড়া তিনি এ বিষয়ে একটি ভিডিও বার্তাও প্রকাশ করেন। গত রবিবার হেফাজতের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করা হলেও আব্দুল আউয়াল তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় সংগঠনটির একটি গ্রুপ তার বিরুদ্ধে বিষোদাগর করছেন এবং তাকে নেতা হিসেবে দেখতে চান না জানিয়ে দল থেকে বহিস্কার করার জন্য কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ পাঠানোর কথা জানালে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে এ সিদ্ধান্ত নেন বলে জানা গেছে।

প্রকাশি ভিডিও বার্তায় আব্দুল আওয়ালকে বলতে শোনা যায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে হরতালের দিন বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ আর আর্মি আমাকে মসজিদে নজরবন্দি করে রেখেছিলেন। তারা আমাকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, হরতালের সমর্থনে কোনো রকম মিছিল নিয়ে যেন রাস্তায় বের না হই। রাস্তায় বের হলে উপর থেকে অ্যাকশনে যাওয়ার আদেশ রয়েছে। তাই আমি মিছিল নিয়ে হরতাল পালন করতে পারিনি। কিন্তু হেফাজতের একদল অতি উৎসাহী লোক আমাকে বুঝতে চাইছে না। অথচ সেদিন যদি আমি প্রশাসনকে উপেক্ষা করে হরতালের সমর্থনে বের হতাম, তাহলে হয়তো মসজিদে নামাজ পড়ার অবস্থা থাকতো না। মসজিদের সামনে কয়েকটা লাশও পড়তে পারতো।

আব্দুল আওয়ালকে আরো বলতে শোনা যায়, তখন কিন্তু আপনারাই লাশের পক্ষ নিয়ে বলতেন, মায়ের বুক খালি করে তোমাকে কে নেতৃত্ব দিতে বলেছে? তাই আমি এদিকেও যেতে পারিনি, ওই দিকেও যেতে পারিনি। এখন আমার একটাই রাস্তা। আমি আমার জিম্মাদারি ছেড়ে দিলাম। আমি হেফাজত ইসলামের নেতৃত্বে আর থাকবো না। আমার আমির পদ দরকার নাই। আমার পক্ষ থেকে আর কোনোদিন ঘোষণা আসবে না। তোমরা যারা অতি উৎসাহীওয়ালা আছো, তোমরা বাবা হেফাজত ইসলাম করো। আমার বয়স হয়েছে, বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না, কথা বলতে পারি না।

তিনি আরো বলেন, সোমবার দোয়া মহাফিলের কথা ছিল ডিআইটি মসজিদে। কিন্তু তারা আমাকে সাইড করে দিয়ে দেওভোগ মাদ্রাসা মসজিদে দোয়া মাহফিল করতে বলেছেন। তারা বলেছেন, আমার মতো নেতার প্রয়োজন নেই। তারা যেহেতু আমাকে সাইড করে দিয়েছে তাই আমি সাংবাদিক সম্মেলন করে হেফাজতের আমিরের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেবো। তিনি বলেন, আমি মুসল্লিদের সাক্ষী রেখে বলছি, আমি হেফাজতের আমিরের পদে থাকবো না।

তবে হেফাজতের অপর একটি সূত্র বলছে, হেফাজতের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করা হলেও সেখানে জেলার আমির এককভাবে হরতালের সমর্থনে মিছিল মিটিং স্থগিত করতে পারেন না। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বাইরে এসে তিনি যা করেছেন তা হেফাজতের কার্যক্রমের সঙ্গে যায় না। তাকে দল থেকে বহিষ্কার করার জন্য কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করা হবে।

প্রসঙ্গত, গত রবিবার হেফাজতের ডাকা হরতালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে কাচঁপুর সেতু পর্যন্ত এলাকায় ছয়টি কাভার্ড ভ্যান, আটটি ট্রাক, একটি প্রাইভেট কারসহ মোট ১৭টি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। এ সময় ভাঙচুর করা হয়েছে গণমাধ্যমের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্সসহ শতাধিক যানবাহন। কমপক্ষে ১০ জন সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করা হয়। ছিনিয়ে নেয়া হয় মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ, ক্যামেরা। পুলিশ হেফাজত সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে দেড় শতাধিক টিয়ারশেল এবং চার হাজার রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এতে দুই জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশত মানুষ আহত হন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App