×

জাতীয়

হেফাজতের ছদ্মাবরণে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২১, ১০:০৬ এএম

হেফাজতের ছদ্মাবরণে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি

প্রতীকী ছবি

তাণ্ডবের পৃষ্ঠপোষক বিএনপি-জামায়াত

ধর্মান্ধ, মৌলবাদী, স্বাধীনতাবিরোধী, প্রতিক্রিয়াশীল, সাম্প্রদায়িক অপশক্তিগুলো এখন এক ছাতার নিচে। সেই ছাতার নাম হেফাজতে ইসলাম। স্বাধীনতার ৫০ বছরে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের মূল চেতনায় কুঠারাঘাত করে তারা দেশকে ঠেলে দিতে চায় অস্থিতিশীলতার দিকে। এর পেছনের খেলোয়াড় কারা? খেলছে কারা এমন প্রশ্ন বিভিন্ন মহলের। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর নাকি স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী তাদের মূল টার্গেট কোনটি, এমন প্রশ্নও ঘুরেফিরে আসছে সর্বত্র। সেই সঙ্গে সরকারের সঙ্গে হেফাজতের সখ্যতা কোথায় গেল এই প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। প্রশ্ন উঠেছে সরকারের নীরবতা নিয়ে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঠুঠো জগন্নাথের ভ‚মিকা নিয়েও। তবে সব ছাপিয়ে প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলা দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারায় স্বার্থ কার? অপকর্মের চিহ্নিত অপশক্তি মামুনুলরা কেন এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে? হেফাজতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার নেপথ্য কুশিলব কারা?

সংশ্লিষ্টদের মতে, হেফাজতে ইসলামের আড়ালে ফের সক্রিয় হচ্ছে জঙ্গিরা। এর নেপথ্যে আছে জামায়াতে ইসলামী, যারা হেফাজতকে সামনে রেখে এ তৎ?পরতা শুরু করেছে। কারণ হেফাজতে ইসলামের অর্থের প্রধান জোগানদাতা স্বাধীনতাবিরোধী চক্র জামায়াত। অরাজনৈতিক চরিত্র হারিয়ে রাজনৈতিক চরিত্রে ফিরে আসা হেফাজতের ছাতা ব্যবহার করে ভেতরে ভেতরে সংগঠিত করা হচ্ছে জঙ্গিদের। রাজনীতির বিষফোঁড়া হেফাজতে ইসলামের নেপথ্যের আরেকটি শক্তি সাবেক বিরোধী দল

বিএনপি। হেফাজতের ঘাড়ে সওয়ার হয়েই রাজনৈতিক দূরভিসন্ধি পূরণ করতে চায় দলটি। এজন্য নরেন্দ্র মোদির সফরকে উপলক্ষ করে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিকে একাট্টা করে সরকারবিরোধী আন্দোলন বেগবান করতে চায় তারা। হেফাজতে ইসলামকে শুধু নীরব সমর্থনই নয়; থলের বিড়াল বাইরে বের করে এবার প্রকাশ্য সমর্থন জানিয়েছে বিএনপি। হেফাজতের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ৫ জন নিহতের ঘটনার প্রতিবাদে দুই দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। হেফাজতের ডাকা আজকের হরতালে বিএনপির সমর্থন আছে কিনা জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরাসরি জবাব না দিয়ে বলেন, আমরা হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কর্মসূচি দিয়েছি। হেফাজতের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে পুলিশ গুলি চালিয়ে চট্টগ্রামে ৪ জন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজনকে হত্যা করার প্রতিবাদে আগামীকাল সোমবার ঢাকাসহ সব মহানগরে ও পরদিন মঙ্গলবার সারাদেশের জেলা শহরগুলোতে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করছি।

এদিকে হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালের সমর্থনে গতকাল রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। মিছিলে দলটির প্রায় কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। আজ রবিবারের হরতালে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ জাতীয় দল।

শাপলা চত্বর থেকে সুবর্ণজয়ন্তী, শেষ কোথায় : ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকা অবরোধের নামে মতিঝিল এলাকায় প্রায় ৮ ঘণ্টা তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। এতে মতিঝিল এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। হেফাজতের কর্মীরা দোকানপাট, মার্কেট, বাণিজ্যিক ভবন, অফিস, গাড়ি সব কিছুতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সম্প্রতি এক ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক হামলায় জ্বালিয়ে দেয় সুনামগঞ্জের শাল্লার ৮৮টি বাড়ি। হেফাজতের আবদারে পরিবর্তন করা হয়েছে পাঠ্যপুস্তকও। দিন দিন তাদের আবদার বেড়েই চলেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে ভেঙে রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করার মতো ধৃষ্টতা দেখিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। সর্বশেষ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতার নামে সরকারকে ফের চ্যালেঞ্জ করেছে এই মৌলবাদী গোষ্ঠী। যদিও হেফাজতসহ ধর্মান্ধদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার কথা বলেছে সরকার। সরকারপক্ষের দাবি, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকারকে অনেক সময় সব শ্রেণির সঙ্গে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির জন্য হয়তো আলোচনা করতে হয়। সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু আদর্শিকভাবে যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে না, সেই মৌলবাদী-জঙ্গিবাদীদের বিন্দুমাত্র ছাড় নয়। কারো কোনো অন্যায়, অযৌক্তিক দাবি মেনে নেয়া হবে না।

বিশ্লেষকদের মতে, হেফাজতের এই উদ্ধত আচরণের অর্থ মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করা, বঙ্গবন্ধুকে অপমান করা। যারা মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন তাদের স্বাগত জানানো আমাদের দায়িত্ব। আর ভারতকে অবাঞ্ছিত বলবেন এর মানে কী? ভারত কি পাকিস্তান নাকি? বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকার হেফাজতে ইসলামকে পাত্তা দেয়ার কারণেই তাদের উদ্ধত আচরণ সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে। এখনি লাগাম টেনে না ধরলে এর পরিণাম ভয়াবহ হবে। জানতে চাইলে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারের বন্ধুরা এই কাজ করেছে। বন্ধুদের সঙ্গে মান-অভিমান হয়েছে। আশা করি মিটমাট হয়ে যাবে। সরকার হেফাজতের ভয়ে ভীত কেন এমন প্রশ্ন রেখে এই ইতিহাসবিদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বসানোর কথা ছিল, কেন বসানো হয়নি? হেফাজত ম্যাসেজ দিয়ে গেল, তারা সরকারকে ভয় পায় না, চাইলে ফেলে দিতে পারে। আমরা কাদের ভাই, হাছান মাহমুদ ভাইদের দিকে তাকিয়ে আছি। তাদের ধমকে কাদের ভাইরা কেন ভয় পান? কেন তাদের ধমকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বসানো হয়নি? অন্যদিকে পাশের দেশ যদি সাম্প্রদায়িকতার কেন্দ্র হয়, তার ঢেউ এসে পড়বেই, এটিও মাথায় রাখতে হবে।

এ ব্যাপারে সম্মিলিত সাংস্কৃতি জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস ভোরের কাগজকে বলেন, অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার ব্যর্থতার কারণে গতি পিছিয়ে যাচ্ছে। মৌলবাদের থাবায় আমাদের বিব্রত হতে হয়। পঁচাত্তরের পর উত্থানশীল মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে প্রগতিশীল শক্তির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের অভাবে তারা এখনো শক্তিশালী। এক্ষেত্রে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই।

তাণ্ডবলীলার পৃষ্ঠপোষক বিএনপি : মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে নরেন্দ্র মোদি আসার আগেই স্বাধীনতার কর্মসূচি স্থগিত করেছিল বিএনপি। করোনা ভাইরাসের অজুহাতে কর্মসূচি স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছিল আওয়ামী লীগকেও। বিএনপির ওই কর্মসূচি স্থগিতের পেছনে দুরভিসন্ধি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল শনিবার সেই কথারই প্রতিধ্বনি করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা পণ্ড করতে ঢাকা-চট্টগ্রাম-ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর তাণ্ডবলীলার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বিএনপিকেই দায়ী করেছেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি মুখে স্বাধীনতার কথা বললেও স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত রেখেছে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের ভেতরে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী যে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে, এই ধৃষ্টতার জবাব অবশ্যই দিতে হবে বলেও মন্তব্য সেতুমন্ত্রীর।

তবে সরকারের নমনীয়তা দুর্বলতা নয়; যে কোনো নৈরাজ্য কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনের সঙ্গে রেলস্টেশন জ্বালিয়ে দেয়ার কি সম্পর্ক? ভূমি অফিস জ্বালিয়ে দেয়া হলো কেন? এরা সবাই দুষ্কৃতিকারী, শান্তি ও সম্প্রীতির শত্রু। এদের যদি খোঁজ খবর নেই, তবে দেখা যাবে এদের বাবা-দাদারা সব রাজাকার ছিল। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল। তাদের বাবা-দাদারা নারী নির্যাতন ও গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত ছিল। যারা এখন দেশে বিশৃঙ্খল করছে, তারা ২০১৩-১৪ সালে বিশৃঙ্খলতা করেছিল। তারা একইগোষ্ঠী এবং তাদের সঙ্গে ছিল বিএনপি। আমরা জানি আপনারা কারা? বায়তুল মোকাররমে, পবিত্র কুরআনে আগুন জ্বালিয়েছিলেন। পশু-পাখিও আপনাদের হাতে রেহাই পায়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App