×

মুক্তচিন্তা

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা পেছানো কি উচিত নয়?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২১, ১২:৪৪ এএম

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা পেছানো কি উচিত নয়?

গেল ৭ ফেব্রুয়ারি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২ এপ্রিল শুক্রবার এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু দেশে গত কয়েকদিনে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়মিত বাড়তে থাকায় এই পরীক্ষা পেছানোর দাবি উঠেছে। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অবশ্য পরীক্ষার তারিখ না পেছানোর সিদ্ধান্তেই অটল থাকার কথা বলা হয়েছে। এ বছর ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজের ৪ হাজার ৩৫০টি আসনের জন্য ভর্তি পরীক্ষায় বসবেন শিক্ষার্থীরা। তবে সব মেডিকেলেই যে পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে থাকছে এমন নয়। ঢাকাসহ ১৫টি শহরের মোট ১৯টি মেডিকেল কলেজের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা। এর মধ্যে ঢাকাতেই সবচেয়ে বেশি (৫টি) মেডিকেলের অধীনে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এসব মেডিকেল ছাড়াও তাদের কর্তৃক নির্ধারণ করে দেয়া সংশ্লিষ্ট শহরের বিভিন্ন কলেজে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আবার পরীক্ষা নেয়ার অনুমতি থাকা প্রতিটি মেডিকেলে নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন রয়েছে। সেই আসন পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় কোনো কেন্দ্র নির্বাচন করতে হয়। এতে করে অনেক শিক্ষার্থীরা নিজ শহরে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পায় না, যেতে হয় পার্শ্ববর্তী বা সবচেয়ে কাছের কোনো শহরের কেন্দ্রে।

এ বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন জমা পড়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৮৭৪টি। সারাদেশের ১৯টি মেডিকেলের অধীনে ১ হাজার ৭৬২টি হলে হবে এই পরীক্ষা। করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গেল প্রায় কয়েক সপ্তাহ ধরেই শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষাটি ঈদুল ফিতরের পর নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। দাবির পক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান কর্মসূচিও পালন করেছেন তারা। এমনকি মহামান্য হাইকোর্ট বরাবর রিট আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু সুফল পাননি তারা। এই দাবির পেছনে শিক্ষার্থীদের যুক্তি হচ্ছে, ঈদের আগে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করেনি। এর সঙ্গে করোনার সংক্রমণও বাড়ছে। তাই ঈদের পর অন্যান্য ভর্তি পরীক্ষার সঙ্গে সমন্বয় করে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার তারিখ পুনর্নির্ধারণ করলে তাদের জন্য সুবিধা হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর এই দাবি মানতে নারাজ। অধিদপ্তর বলছে, কঠোর নিরাপত্তা ও শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করেই এমবিবিএস পরীক্ষা নেয়া হবে। গত ২৪ মার্চ সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, দেশে করোনা পরিস্থিতি এখন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে মেডিকেল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা না নিলে জাতির এই মেধাবী মুখগুলোর ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবনে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। এসব বিবেচনায় রেখে ২ এপ্রিলই দেশে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে গ্রহণ করা হবে। কিন্তু কতটা রক্ষা করা যাবে স্বাস্থ্যবিধি? সাম্প্রতিক একটি পরীক্ষার খবরে নজর দেয়া যাক। করোনা ভাইরাসের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই গত ১৯ মার্চ ঢাকাসহ দেশের ৮টি বিভাগে ৪১তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দিয়েছেন পৌনে ৫ লাখ শিক্ষার্থী। এই পরীক্ষাতেও কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বলা হয়েছিল পিএসসির পক্ষ থেকে। কিন্তু কেন্দ্রে কেন্দ্রে চরম উপেক্ষিত ছিল স্বাস্থ্যবিধি। সংবাদমাধ্যমে আসা খবর বলছে, তিন ফুট নিরাপদ দূরত্ব থেকে অবস্থানের নির্দেশনা থাকলেও কেন্দ্রগুলোর সামনে দেখা যায় ভিড়। পরীক্ষার্থীদের অনেকেরই মুখে ছিল না মাস্ক। কেন্দ্রগুলোর প্রবেশমুখে স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রশ্নে শঙ্কা থেকেই যায়। এই পরীক্ষা হওয়ার পরের সপ্তাহের করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যাক এবার। গত ২০ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৯২৬ জন। একই সময়ে গড়ে প্রতিদিন মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২৬ জনের। এর আগের সপ্তাহে অর্থাৎ ১৪ থেকে ১৯ মার্চ আক্রান্ত হয়েছেন গড়ে ১ হাজার ৭৬৭ জন, মৃত্যু গড়ে ১৯ জনের। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন গড়ে বেড়েছে প্রায় ১ হাজার ১৬০ জন করে। মৃত্যুর গড় সংখ্যাও বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় স্কুল-কলেজের পূর্বঘোষিত খোলার তারিখ (৩০ মার্চ) পিছিয়ে ঈদের পর নেয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে মেডিকেলের সোয়া এক লাখের বেশি শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিবেচনায় কি নেয়া উচিত নয়? সব প্রস্তুতি সম্পন্ন রেখে ঈদের পর করোনা সংক্রমণ কমলে সুবিধাজনক সময়ে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করার কথা আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আরো একবার বিবেচনা করবেন।

তানভীর মাহতাব আবীর : শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App