×

সারাদেশ

বিএনপি-জামায়াতের ইন্ধনে তাণ্ডব!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২১, ১০:২০ এএম

‘কার ইন্ধনে’ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে উগ্র সাম্প্রদায়িক বিতর্কিত সংগঠন হেফাজতে ইসলাম চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় থানাসহ সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়ে তাণ্ডব সৃষ্টি করেছিল সেই প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, এই তাণ্ডব সৃষ্টির নেপথ্যে বিএনপি-জামায়াতই ইন্ধন জুগিয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন সময় দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিতে হেফাজতকে কাজে লাগিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত। প্রসঙ্গত, হেফাজতে ইসলামের বর্তমান কমিটি পুরোপুরি জামায়াতপন্থি কমিটি বলে সর্বত্র প্রচার রয়েছে।

হাটহাজারীসহ বিভিন্ন এলাকায় তাণ্ডব চালিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির পর উল্টো দেশ অচলের হুমকি দিচ্ছে হেফাজতে ইসলাম নামে উগ্র সাম্প্রদায়িক সংগঠনটি। হেফাজতে ইসলামের ডাকা আজ রবিবার (২৮ মার্চ) সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালে বিএনপি-জামায়াত নেপথ্যে থেকে ব্যাপক নাশকতা-তাণ্ডব চালাতে পারে বলেও গোয়েন্দা সংস্থার কাছে খবর রয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে তাদের প্রস্তুতি রয়েছে। কেউ নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা চালালে কঠোরভাবে তা মোকাবিলা করা হবে।

এদিকে হাটহাজারীতে তাণ্ডবের ঘটনায় জামায়াতপন্থি বিতর্কিত হেফাজত নেতা মুফতি হারুন ইজাহারের নাম আবারো সামনে চলে এসেছে। হারুন ইজাহার বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি ও ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের সভাপতি মুফতি ইজাহারুল ইসলামের ছেলে। এই দুজনের বিরুদ্ধে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।

অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতের ইন্ধনে হেফাজত দেশব্যাপী নাশকতা চালাচ্ছে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ নেতারা। হাটহাজারীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবসহ মৌলবাদী সহিংস কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে মিছিল-সমাবেশে যুবলীগ নেতারা বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করে অস্থিতিশীল-নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে তারা। পাড়ায়-পাড়ায় মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান যুবলীগ নেতারা।

পরিস্থিতি থমথমে, সড়কে যান চলাচল বন্ধ : চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে পুলিশের সঙ্গে মাদ্রাসাছাত্রদের সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনার পর হাটহাজারীসহ আশপাশের এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের অবরোধের কারণে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে যানবাহন দুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। মাদ্রাসার সামনে রাস্তা কেটে ফেলা হয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে এক ধরনের আতঙ্ক। হাটহাজারী সড়কে ইটের দেয়াল বানিয়ে ও বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে অবস্থান নিয়েছে হেফাজত কর্মীরা। এতে খাগড়াছড়ি, রামগড়, ফটিকছড়ি ও নাজিরহাটের লোকজন কার্যত অবরুদ্ধ অবস্থায় পড়েছেন। হাটহাজারী এলাকার দোকানপাট বন্ধ আছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে র‌্যাব ও পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। হাটহাজারী থানার সামনে রাখা হয়েছে বিজিবির সাঁজোয়া যান। পুরো এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি র‌্যাবের ২৫০ এবং বিজিবির ১০০ সদস্য মোতায়েন আছে।

দেশ অচলের হুমকি হেফাজতের : হাটহাজারীতে তাণ্ডব চালিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির পর উল্টো দেশ অচলের হুমকি দিচ্ছে উগ্র সাম্প্রদায়িক সংগঠনটি। পুলিশের সঙ্গে হেফাজত কর্মীদের সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনায় আজ রবিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। এক বিবৃতিতে হেফাজতের ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী সংঘর্ষে সংশ্লিষ্টদের ‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি’ দাবি করে রক্তের বদলা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে জুনায়েদ বাবুনগরী আরো বলেন, মোদি ইস্যুতে যদি আর একজন তৌহিদি জনতার রক্ত ঝরে বা ওলামায়ে কেরামকে হামলা মামলা ও হয়রানি করা হয়, তাহলে এর প্রতিবাদে পুরো দেশে আন্দোলনের দাবানল জ্বলে উঠবে। প্রয়োজনে হেফাজতে ইসলাম কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে।

নগরীতে হেফাজতের সমাবেশ : হাটহাজারীতে হেফাজত-পুলিশ সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় নগরের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ ময়দানে বিক্ষোভ করেছে হেফাজতের নেতাকর্মীরা। গতকাল শনিবার দুপুর দেড়টায় এ বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। বিক্ষোভ সমাবেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এদেশে আসায় তীব্র সমালোচনা করে সরকার ও প্রশাসনকে হুঁশিয়ার করে বক্তব্য রাখেন। সমাবেশের পরে নগরের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ থেকে শুরু করে নগরের ওয়াসা মোড় হয়ে আলমাস সিনেমা হল প্রদক্ষিণ করে বিক্ষোভ মিছিলটি। সমাবেশে বক্তব্য দেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমির ও মহানগর সেক্রেটারি লোকমান হাকিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, সদস্য সায়েম উল্লাহ, আলি উসমান, মহানগর নেতা ইউছুফ বিন ইয়াকুব, মাওলানা শামীম, মির্জা ইয়াছিন প্রমুখ।

মরদেহ দাফন করবে পুলিশ : হাটহাজারীতে শুক্রবারের সংঘর্ষের ঘটনায় যে চারজন নিহত হয়েছেন, তাদের মরদেহ আর হাটহাজারীতে নেয়া হবে না। লাশগুলো তাদের নিজ নিজ এলাকায় নিয়ে গিয়ে দাফনের ব্যবস্থা করবে পুলিশ। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় হেফাজত নেতাদের সঙ্গে পুলিশের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে স্থানীয় সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন ও চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক উপস্থিত ছিলেন। হেফাজতের পক্ষে সংগঠনের নেতা মীর মো. ইদ্রিসসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। যদিও ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিল হেফাজতে ইসলাম। এর আগে শনিবার সকাল থেকে মূলত লাশের বিষয় নিয়ে দুপক্ষে আলোচনা চলছিল। হেফাজত চেয়েছিল, মেডিকেল থেকে লাশ নিয়ে হাটহাজারীতে আনতে। অন্যদিকে পুলিশ বলছিল, লাশ এখন মেডিকেলে আছে, লাশ চট্টগ্রাম শহরে বা অন্যকোনো জায়গায় দাফন করতে হবে, হাটহাজারীতে আনা যাবে না। শেষ পর্যন্ত দুপক্ষ সম্মত হয়েছেন নিহতদের বাড়িতে পুলিশ প্রহরায় লাশ দাফন করা হবে। নিহতরা হলেন মাদারীপুরের মো. মেহরাজুল ইসলাম, ময়মনসিংহের মো. আব্দুল্লাহ মিজান, হাটহাজারীর মো. জসিম ও কুমিল্লার মো. রবিউল ইসলাম।

হেফাজতের জিম্মিদশা থেকে পুলিশ সদস্য মুক্ত : হাটহাজারীতে পুলিশ-হেফাজত সংঘর্ষের ঘটনার সময় তুলে নিয়ে যাওয়া মো. সোলেমান নামে এক পুলিশ সদস্যকে ফিরিয়ে দিয়েছে হেফাজত নেতারা। একদিনের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়া সোলেমান চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার কনস্টেবল। ঘটনার একদিন পর গতকাল শনিবার বিকাল ৫টার দিকে তাকে থানায় নিয়ে যান হেফাজত নেতারা। শুক্রবার সংঘর্ষ চলাকালে সোলেমানসহ ৫ পুলিশ সদস্যকে তুলে নিয়ে যায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা। যদিও ঘটনার পরপর স্থানীয়দের সহযোগিতায় বাকি চারজনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। এদের মধ্যে হাটহাজারী ডাক বাংলা এলাকায় দায়িত্বরত শিক্ষানবিশ পুলিশ সুপার ফারাবি ও এসআই মেহেদীকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে তারা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

এদিকে গতকাল সকালে নগরীর দারুল ফজল মার্কেটে দলীয় কার্যালয়ের নিচে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দীন বাচ্চুর সভাপতিত্বে সমাবেশে যুবলীগ নেতারা বলেন, ধর্মান্ধ-মৌলবাদীরা একেক সময় একেকটি ইস্যু নিয়ে দেশে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। কখনো মুক্তিযুদ্ধ, কখনো বঙ্গবন্ধু, কখনো বাঙালির কৃষ্টি-সংস্কৃতি-প্রগতিকে টার্গেট করে তারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। নৈরাজ্য সৃষ্টি করে তারা দেশের অগ্রগতি রুখে দিতে চায়। কিন্তু তাদের পরিকল্পনা কখনোই বাস্তবায়িত হবে না। যারা বিশ্ব পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে চায়, তাদের অশুভ কর্মকা- কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের নগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, দিদারুল আলম দিদার ও মাহবুবুল হক সুমন এবং সদস্য আনোয়ার হোসেন আজাদ, বেলায়েত হোসেন বেলাল প্রমুখ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App