×

সম্পাদকীয়

রাজাকারের তালিকা প্রকাশে অগ্রগতি হোক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২১, ১২:১৯ এএম

প্রথম পর্যায়ে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ১৯১ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রকাশ করেছে সরকার। গত বৃহস্পতিবার বিকালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সংবাদ সম্মেলন এ তালিকা প্রকাশ করেন। উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। এজন্য সরকারকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। তবে তালিকায় জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোশতাকের নামও রয়েছে। এই নিয়ে প্রশ্নও উঠছে। পাশাপাশি দাবি উঠছে, স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, আলবদর, আলশামসের তালিকা তৈরি ও তা প্রকাশের উদ্যোগ যেন দ্রুত বাস্তবায়ন হয়। এই তালিকা প্রকাশে একটি সাব-কমিটি রয়েছে। কমিটির কর্মতৎপরতা আমরা দেখতে চাই। আমরা আশা করছি, এই তালিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে একাত্তরের ঘাতকদের নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে। তবে তালিকা যেন নির্ভুল থাকে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের বিতর্কিত তালিকা প্রকাশের পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে তা বাতিল করে সরকার। গত ৭ ডিসেম্বর রাজাকার ও স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা প্রণয়নের বিধান রেখে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ২০২০-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তালিকা প্রকাশে এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। স্বাধীনতা লাভের পরপরই যুদ্ধাপরাধী, রাজাকারসহ এদের তালিকা চূড়ান্ত করা যুক্তিযুক্ত ছিল। কিন্তু সেটি করতে না পারার ব্যর্থতায় বাঙালি জাতিকে এখনো মূল্য দিতে হচ্ছে নানাভাবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের আন্দোলন ও শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ থেকেও উচ্চারিত হয়েছিল রাজাকারদের তালিকার দাবিটি। জানা গেছে, একাত্তরের মে মাসে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালি নিধনে পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তা দিতে গঠিত হয় রাজাকার বাহিনী। খুলনায় খান জাহান আলী রোডের একটি আনসার ক্যাম্পে ৯৬ জন পাকিস্তানপন্থি কর্মী নিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। পরে দেশের অন্যান্য অংশেও গড়ে তোলা হয় এই বাহিনী। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৭ সেপ্টেম্বর জারি করা এক অধ্যাদেশ বলে রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের সেনাবাহিনীর সদস্যরূপে স্বীকৃতি দেয়। এর সংখ্যা ছিল অন্তত ৫০ হাজার। শাহ আজিজ, গোলাম আযম, সবুর খান, আয়েনউদ্দিনসহ ইসলামি দলগুলোর নেতারা রাজাকার বাহিনীর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তবে সবকিছুর পেছনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা বাহিনী এবং তাদের জেনারেলরা সরাসরি রাজাকার বাহিনী তৈরি করেছিল। রাজাকার ছাড়াও স্বাধীনতাবিরোধী আলবদর, আলশামস এবং শান্তি কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠন ছিল, বাকি সংগঠনগুলোর সদস্যদের তালিকাও পর্যায়ক্রমে প্রকাশের উদ্যোগ রয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। অসংখ্য রাজাকার, আলবদর, আলশামস দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তাদের তালিকা তৈরি করে প্রকাশ করলে এই জাতি ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানতে পারবে স্বাধীনতাবিরোধী কারা। তালিকা তৈরির পর এদের সামাজিকভাবে প্রত্যাখ্যানের ডাক দিতে হবে। তবে সতর্কও থাকতে হবে রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ যেন বিতর্কমুক্ত হয়। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থে কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যাতে তালিকা তৈরি না হয়, সে ব্যাপারে শতভাগ সততার পরিচয় দিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App