×

মুক্তচিন্তা

অদম্য বাংলাদেশ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২১, ১২:২৮ এএম

অদম্য বাংলাদেশ

স্বাধীনচেতা বাঙালি পশ্চিম পাকিস্তানের নয়া সাম্রাজ্যবাদ শাসকের বিরুদ্ধে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই দেশের সাধারণ জনগণ পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের ধর্মীয়ভাবে সাদৃশ্য থাকলেও নৃগোষ্ঠীগত ও সাংস্কৃতিকভাবে বৈসাদৃশ্য রয়েছে। এই দেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক স্বাধীনচেতা আদর্শে বিশ্বাসী হওয়ায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তা মেনে নিতে পারেনি। আমাদের ওপর ইচ্ছামতো সামরিক দমন-নিপীড়ন চালিয়েছে। ৭ মার্চে ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পরোক্ষভাবে জনগণের কাছে পৌঁছে যায়। তথা এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ২৬ মার্চ প্রত্যক্ষ স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত হয়। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন-সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নেয়। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত, দারিদ্র্য ক্ষুধা নিপীড়িত দেশকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়ে এগিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতা-পরবর্তী কিছু স্বার্থলোভী রাজনৈতিক চক্র ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারকে হত্যা করে। যার ফলে স্বাধীন বাংলাদেশে নেমে আসে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা তথা ক্ষমতার পালাবদল বা নেতৃত্বের সংকট সৃষ্টি হয়। এই সময়কে বাংলার মাৎস্যন্যায়ের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। সপ্তদশ ও অষ্টদশ শতকে বাংলায় মাৎস্যন্যায় ঘটেছিল, যেখানে রাজা শশাঙ্ক মৃত্যুর পরে বাংলার শাসন ক্ষমতা নিয়ে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্ট হয়েছিল। এছাড়া একে ওপরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকত কোনো সুনির্দিষ্ট শাসক ছিল না। যে যেভাবে পারে বাংলার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে। ঠিক ’৭৫-পরবর্তী মাৎস্যন্যায়ের মতো বাংলাদেশও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। যেখানে একের পর এক রাজনৈতিক ক্ষমতার পালাবদল ঘটতে থাকে। এই সূত্র ধরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়ে। কেননা মালয়েশিয়া ও কাতার আমাদের সঙ্গে স্বাধীনতা লাভ করে আজ তারা বিশ্বে অর্থনৈতিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত। কিন্তু ’৭৫-পরবর্তী যদি বাংলাদেশে রাজনৈতিক মাৎস্যন্যায় না ঘটত তাহলে পাঁচ দশকের বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বব্যাপী দাপটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলত। বর্তমানে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছে, যা স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে আত্মপ্রকাশ করেছি। এটি আমাদের গৌরবের বিষয় তবে এই মর্যাদা আরো অনেক আগে পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেশীয় স্বার্থলোভী রাজনৈতিক চক্রের কারণে আমরা পিছিয়ে পড়েছিলাম। বর্তমানে বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিকভাবে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। আবার সামাজিকভাবে তথা শিশু মৃত্যুর হার, খাদ্য নিরাপত্তা ও অন্যান্য বিষয় ছাড়াও আইএমএফের গত বছরের তথ্য মতে এই বছরে জিডিপিতে ভারতকেও বাংলাদেশ ছাড়িয়ে যেতে পারে এমন আভাস দিয়েছে। যে বাংলাদেশকে উপহাস করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ একটি তলাবিহীন ঝুড়ি’। আজ সেই আমেরিকা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও বিশ্বের বুকে রোল মডেল হিসেবে অদম্য এগিয়ে যাওয়ার অগ্রগতি দেখে ঢাকার দিকে ঝুঁকছে। প্রযুক্তি বিশ্বে বাংলাদেশ বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন শহরে অত্যাধুনিক হাইটেক পার্ক নির্মাণে অব্যাহত রয়েছে। দেশের অবকাঠামো নির্মাণ ও আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা প্রচলন ছাড়াও দেশের নিরাপত্তা বাহিনীদের আধুনিক প্রশিক্ষণ ও অত্যাধুনিক অস্ত্রের সরবাহের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ শক্তিতে জানান দিচ্ছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশের জন্য শুভকামনা ও আগামীর বিশ্বে বাংলাদেশ অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা হবে এইটাই আমাদের প্রত্যাশা।

মো. বিপ্লব আলী : শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App