×

জাতীয়

পোড়া ক্যাম্পেই ফিরছে রোহিঙ্গারা, মৃতের সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২১, ০৯:৩০ পিএম

আগুন নিয়ন্ত্রনে আসার পর মঙ্গলবার সকাল থেকে পুড়ে যাওয়া স্থানেই ফিরতে শুরু করেছে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা পরিবারগুলো। সোমবার (২২ মার্চ) বিকাল ৩ টার দিকে উখিয়ার বালূখালী ক্যাম্প-৮ ডব্লিউ থেকে আগুনের সূচনা হয়। ক্যাম্প ৮ এইচ, ৯,১০,১১ তে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে সরকারের তরফ থেকে ৫ জনের প্রাণহানির কথা বলা হয়েছে।

বলা হয়েছে ৯ হাজার ৬’শ ঘর ও ১২ শতাধিক দোকান পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) শাহ রেজওয়ান হায়াতকে প্রধান করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো: শামসুদ্দৌজা নয়ন।

তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনে সম্ভব সবকিছু করা হচ্ছে। যাতে তারা দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে। তিনি আরও জানান , শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার অফিস, জেলা প্রশাসন, আর্ন্তজাতিক সংস্থা ও দেশীয় সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের এ দুর্ভোগ কাটিয়ে তুলতে সমন্বিতভাবে কাজ করছে। অপর এক প্রশ্নে তিনি অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সঠিক পরিসংখ্যান এখনও পাওয়া যায়নি বলে জানান। তবে পুলিশের চট্টগ্রাম বিভাগের ডিআইজি মঙ্গলবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে ৫ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।

তিনি আরও জানান, ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি পুলিশও কাজ করছে।

অন্যদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে তথ্য দিয়েছে রোহিঙ্গা রেসপন্স ইন্টারসেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি) কক্সবাজার। তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে উল্লেখ করা হয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের ২৪ ঘন্টায় প্রাণ হারিয়েছে ১৫ জন। আহত হয়েছে ৫৬০ জন মানুষ। ১০ হাজার পরিবারের ৪৫ হাজারেরও বেশী ব্যস্তুচ্যুত হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে ৪’শতাধিক মানুষ। যদিও দিন শেষে অন্যত্র আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলো ক্যাম্পের স্ব স্ব স্থানে ফিরে আসায় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিখোঁজ লোকজনও আপনজনের সন্ধান পাচ্ছে।

সোমবার (২৩ মার্চ) বিকাল ৩ টার দিকে উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প -৮ এ অগ্নিকাণ্ডের সুত্রপাত ঘটে। আগুন ভয়াবহ আকার ধারন করে রাত ১১টা পর্যন্ত বহমান ছিল। এতে ক্যাম্প ৮ ছাড়াও ক্যাম্প-৯,১০ এবং ১১ থে ছড়িয়ে পড়ে। এ পর্যন্ত দমকল বাহিনী মৃতের সংখ্যা ৭ জন বলে জানালেও তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি। এদিকে এ ঘটনার পর থেকে সরকার ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার দায়িত্বশীলরা ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন।

সোমবার রাতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুন উর রশীদ, জেলা পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান ও শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) শাহ রেজওয়ান হায়াত ঘটনাস্থল ঘুরে গেছেন। ২৩ মার্চ মঙ্গলবার সকালে পুলিশের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, ইউএনএইচসিআর, আইওএমসহ আর্ন্তজাতিক ও দেশীয় সংস্থার প্রতিনিধিরা ঘটনা পর্যবেক্ষণ ও কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণে তৎপরতা শুরু করেন। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গারা নিজের তাদের আগের ঠিকানায় মাথা গোঁজার ঠিকানা আবারও তৈরী করতে শুরু করেছে। পাশাপাশি কিছু এনজিও সংস্থা তাবু বিতরণ করে প্রাথমিক বসতির ব্যবস্থা করতে দেখা গেছে। অনেকে রান্না করা ভাত, পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ বাঁশ , গাছ, পলিথিন ইত্যাদি দিয়ে নতুন করে অস্থায়ীভাবে বসতঘর নির্মাণ করছে।

মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা পুড়ে ছাই হওয়া সেই বাসস্থানে ফিরে আসছেন। দলে দলে পরিবারসহ ফিরছেন পুরোনো ঠিকানায়। অনেকেই নতুন কাঠ, বাস নিয়ে ফিরছে নতুন বাসস্থান তৈরির আশায়। এছাড়া আহতদের সেবা দিচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীরা। আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ এক রোহিঙ্গা বলেন, “আমাদের বাড়িঘর ও খাবারসহ সব পুড়ে গেছে। আমরা পরিবারসহ খোলা আকাশের নিচে ছিলাম। সর্বস্ব হারিয়ে এখন পুড়ে যাওয়া স্থানেই ফিরেছি।

ক্ষতিগস্ত আরেক রোহিঙ্গা বলেন, “বাড়িঘর পুড়ে যাওয়ায় পরিবারসহ পাশের ক্যাম্পে অবস্থান নিয়েছিলাম। সকালে আবারও পরিবারসহ এখানে এলাম।”

এ ঘটনায় স্বজন হারানো এক রোহিঙ্গা বলেন, “আমাদের আত্মীয়ের মধ্যে দুজন শিশু মারা গেছে বলে জেনেছি। তার মধ্যে একজন আড়াই বছর বয়সী মুশরফা, আরেকজন সাড়ে তিন বছর বয়সী তসলিমা।”

এদিকে স্থানীয়রা জানান, অগ্নিকাণ্ডের পর হাজার হাজার রোহিঙ্গা বিভিন্ন স্থানে চলে গেছেন। অনেকেই বিভিন্ন ক্যাম্পে তাদের স্বজনদের বাড়িতে চলে গেছে। এছাড়া হাজারো রোহিঙ্গা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পরিবারসহ স্থানীয় গ্রামগুলোতে ঢুকে পড়েছে। তাদের মধ্য থেকে অনেকেই স্থান না পেয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও খোলা আকাশের নিচেও ছিলেন।

স্থানীয় পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরীও আগুনে পুড়ে যাওয়া স্থানীয় এবং রোহিঙ্গাদের মাঝে খাবার বিতরণ করেন। এদিকে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানা যায়নি।

উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কর্মকর্তা ডা. রনজন বড়ুয়া রাজন জানান, বর্তমানে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে অনেক উন্নত ও আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহত সকলকে শিবিরের ভেতরে অবস্থিত চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রগুলোয় চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাদের চিকৎসাসেবা দেওয়ার জন্য মোট ১১টি দল গতকাল বিকাল থেকে আজ পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছে।

উদ্ধার করা মরদেহগুলো রোহিঙ্গা শিবিরের কবরস্থানে ক্যাম্প প্রশাসনের সহযোগিতায় দাফন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে আরআরআরসি কার্যালয়। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও)শাহীন মোহাম্মদ আবদুর রহমান চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত কিংবা আহত কাউকে ও এ হাসপাতালে আনা হয়নি।

এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মোহাম্মদ মোহসীন কক্সবাজার জেলা শহরে অবস্থিত আরআরআরসি কার্যালয়ের সভাকক্ষে আজ বিকাল ৫ টায় সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন "এ পর্যন্ত ১১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কেউ নিখোঁজ রয়েছে এমন তথ্য আমাদের কাছে নেই। কেউ নিখোঁজ আছে কি না তা যাচাই করা হচ্ছে। এমনও হতে পারে হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের অনেকেই অন্য শিবিরে অবস্থানরত তাদের নিকট আত্বীয় স্বজনদের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন। কাল এ বিষয়ে জানা যাবে। এ জন্য কাজ করছে ক্যাম্প ইনচার্জ ও আরআরআরসি অফিস।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App