×

সাহিত্য

আধুনিকতায় হারাতে বসেছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রিকশাচিত্র

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২১, ০৫:০১ পিএম

আধুনিকতায় হারাতে বসেছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রিকশাচিত্র

ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রিক্সাচিত্র শিল্প।

আধুনিকতায় হারাতে বসেছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রিকশাচিত্র
আধুনিকতায় হারাতে বসেছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রিকশাচিত্র
আধুনিকতায় হারাতে বসেছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রিকশাচিত্র
আধুনিকতায় হারাতে বসেছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রিকশাচিত্র

ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রিক্সাচিত্র শিল্প এখন প্রায় বিলুপ্ত।

রিকশার নগরী ঢাকা। ঢাকার অলিতে গলিতে রাজপথে সব খানেই টুংটাং আওয়াজে দেখা পাওয়া যায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রিকশা। অভিজাত শ্রেণির হাত ধরে ঢাকায় আসা এ রিক্সাকে ঘিরে রয়েছে চিত্রকলার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ চিত্রশিল্প। রিকশার হুডি ও বডির পেছনে যে নকশা বা ছবি দেখা যায় তা কোনো প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান থেকে অর্জিত নয়। রিকশাচিত্রের জন্য শিল্পীরা বহু বছর ধরে তাদের মনের মাধুরি ও কল্পনাকে তুলিতে রূপ দিয়ে আসছেন।

কার রিকশা সাজানো ভালো হয় এ নিয়ে থাকতো প্রতিযোগিতা। শিল্পীদের নিজস্ব তৈরি রঙে নানা রকমের নকশা, কাহিনী চিত্র ও ছবিতে সাজানো সেই রিকশা রাস্তায় চললে ছড়িয়ে পড়ত শিল্পীদের নাম ডাক। রিকশাচিত্রে জায়গা পেয়েছিল ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধের চিত্রপটও।

বর্তমানে রেডিমেড রঙ ও প্রিন্টারে ছাপা ছবি ও নকশায় ছয়লাব হচ্ছে রিকশাচিত্র। কম টাকায় মেশিনে রিকশা পেইন্টিং করা যায় বলেই হুমকির মুখে এ হস্তশিল্প। এছাড়া নিজস্ব মননে সিদ্ধ এই রিকশা চিত্রীদের জন্য সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা বা প্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠায় হারাতে বসেছে ঢাকার প্রায় একশো বছরের ঐতিহ্য।

তবে রিকশাচিত্রের প্রতি বিশেষ আগ্রহ রয়েছে বিদেশিদের। যে কয়েকজন রিকশাচিত্রী সক্রিয় আছেন তারা জানান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের চিত্রকলার এ ঐতিহ্য রক্ষাসহ বিদেশে জায়গা করে নিবে আমাদের দেশের রিকশা চিত্রশিল্প।

জানা যায়, কলকাতা হয়ে ১৯৪০ সালের পর ঢাকার সূত্রাপুরে একজন বাঙালি জমিদার ছয়খানা রিকশা কিনে ঢাকায় রিকশার প্রচলন শুরু করেন। আভিজাত্যের বাহন হিসেবে রিকশা দ্রুতই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এসময় থেকেই রিকশাচিত্র বা রিকশা পেইন্টিং শিল্পের সূত্রপাত। রিকশাচিত্রের যাত্রা প্রবীণ ও বিখ্যাত শিল্পী আর কে দাস, আলী নূর, দাউদ উস্তাদ, আলাউদ্দিন ও কাশেমদের হাত ধরে। এরপর বংশানুক্রমিকভাবে এ পেশা বর্তমান রূপে এসেছে। বর্তমানে ঢাকার কেরানীগঞ্জ, দয়াগঞ্জ, নারিন্দা, লক্মীবাজার ও বংশালে ৮-১০ জন রিক্সা চিত্রশিল্পী আছেন। কেউ চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ বছর আবার কেউ পারিবারিক সূত্রে বিশ থেকে পঁচিশ বছর ধরে আছেন রিকশাচিত্রের সঙ্গে।

রিকশাচিত্রের শুরুতে লোকপ্রিয় বিভিন্ন মিথ ও ধর্মীয় বিষয় আঁকা হয়। যেমন মুসলিম উপাখ্যানের দুলদুল, পঙ্খিরাজ ঘোড়া বোরাক, বিভিন্ন আরব্য রজনীর উপাখ্যান, আলাদিনের প্রদীপ ও দৈত্য, রাজকন্যা, রাজপ্রাসাদ, মানুষ মুখো বাঘ, সিংহ, শেয়াল, বানরসহ বিভিন্ন ফুল, প্রাকৃতিক দৃশ্য, তাজমহল, পালকি ও গ্রামীণ জনপদ। সময়ের সঙ্গে রিকশাচিত্রের বিষয় পাল্টাতে শুরু করে। ভাষা আন্দোলন, মার্শাল ল, ছয় দফা, উনসত্তর ও মুক্তিযুদ্ধের নানা চিত্রপট রিকশাতে রূপ দিলে তা জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এরপর স্বাধীনতার পরে বিভিন্ন চলচ্চিত্রের পোস্টার, নায়ক-নায়িকাদের ছবি তুমুল জনপ্রিয়তা পায় যার রেশ এখনো রিকশাগুলোতে দেখা যায়।

ঢাকার বিভিন্ন স্থানের রিকশা চিত্রশিল্পীরা জানান, রিক্সা চিত্রের জন্য রং আমাদের নিজস্ব তৈরি। তবে ২০০০ সালের পর থেকে প্রিন্টারের ব্যবহার চলে এসেছে। এতে কর্মহীন হয়ে অনেক শিল্পী অন্য কাজে নিযুক্ত হয়েছেন। কেউ কেউ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিদেশিদের সৌখিন জিনিসের ওপর রিকশা পেইন্টিং কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তবে এ সুযোগও অনেক সীমিত।

ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে রিকশা চিত্রী মো. সলেমান বলেন, রিকশাচিত্রের সেই দিন আর নেই। কম টাকায় রিকশাওয়ালারা রিক্সা সাজাতে চাই। হাতে আঁকা এক হাজার টাকার প্লেটের বিকল্প হিসেবে যেখান সেখান থেকে তারা দুইশো আড়াইশো টাকার ডিজিটাল প্রিন্ট ব্যবহার করছে। এ কারণে বেশির ভাগ রিকশাচিত্রী পেশা পরিবর্তন করেছেন। সরকারের কোনো স্বীকৃতি না থাকায় আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হতে চলেছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এ রিকশাচিত্র।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর রিকশা হুডবডি মিত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি সামসুল আলম ভোরের কাগজকে বলেন, আগে হাতের পেইন্টিং এ রিক্সাওয়ালাদের যে আগ্রহ ছিল তা এখন নেই। অবৈধ প্রতিষ্ঠান থেকে রিকশাওলারা কম টাকায় রেডিমেড রঙ আর ছবি দিয়ে রিকশা সাজায়। সরকার যদি পুরাতন আর ঐতিহ্যবাহী রিকশা চিত্রকর ও প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স প্রদান করে এগুলো থেকে রিকশা পেইন্টিং করা বাধ্যতামূলক করে তাহলে এ শিল্পের ঐতিহ্য টিকে থাকবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App