×

জাতীয়

ধুলায় ধূসর বর্ণিল বইমেলা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২১, ১১:১৬ পিএম

ধুলায় ধূসর বর্ণিল বইমেলা

শনিবার বইমেলার স্টলে পাঠকের আনাগোনা। ছবি: শাহাদাত হোসেন

ধুলায় ধূসর বর্ণিল বইমেলা
ধুলায় ধূসর বর্ণিল বইমেলা

কথা ছিল বসন্তের সুবাস মেখে অমর একুশে বইমেলার দুয়ার খুলবে। পলাশ আর শিমুলের রঙ ছড়িয়ে পড়বে মেলা চত্বরে। ভাষার গানে গানে প্রভাত ফেরি এসে মিশবে সেখানে। প্রাণের উৎসবে মুখরিত হবে বইমেলা। তার সঙ্গে বসন্তের রঙে তরুণ-তরুণীর উচ্ছ্বাস কোলাহলে মেতে উঠবে চারদিক। তবে এসবের কিছুই হয়নি এবারের বইমেলায়। করোনার চোখ রাঙানিতে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের দোলাচলে দুলছিল আয়োজনের সিদ্ধান্ত। তবে পাঠক-বইপ্রেমীদের দুর্নিবার টান আর প্রকাশকদের আবেদনে অবশেষে সাড়া দিয়েছে বাংলা একাডেমি। ভাষার মাস পেরিয়ে অবশেষে স্বাধীনতার মাসে দুয়ার খুলেছে প্রাণের বইমেলার। তবে ভাষার মাসে বসন্তের সেই রঙিন মেলার চিরচেনা চিত্রটি এবার নেই। চারদিকে ধূলি-ধূসরিত বিষণ্ন বাতাস।

অনেক দোলাচলের পর গেল ১৮ মার্চ দুয়ার খোলার পর কেটে গেছে তিন দিন। তবে শুরুর সেই আমেজ আজও কাটছে না। যেন আড়মোড়া না ভেঙে শুরুতেই আটকে আছে। এখনো মেলাচত্বরে হাতুড়ি-বাটালের খুটখাট আওয়াজ, মিস্ত্রি-শ্রমিকদের আনাগোনা, নির্মাণ সামগ্রির আনা নেয়া চলছেই। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল চত্বরজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা স্টলগুলোতে যেন সমন্বয়হীন অদৃশ্য রেষারেষি। আনাচে কানাচে এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। খোড়াখুড়ি থেকে আলগা হওয়া মাটি পায়ে পায়ে পিষছে, ধূলি হয়ে উড়ছে। দূরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা স্টলগুলোতে যাওয়ার মসৃণ কোনো পথ নেই। সৌন্দর্যবর্ধন আটকে আছে কিছু প্যাভিলিয়নের মধ্যেই, ছুঁতে পারেনি পুরো চত্বরকে।

[caption id="attachment_272690" align="alignnone" width="960"] শনিবার বইমেলার মাঠে ধূলোর ওড়াউড়ি। স্টলের রঙিন সাজসজ্জা সে ধুলোয় কেমন মলিন হয়ে পড়ে। অস্বস্তিতে পড়েন আগত পাঠকরাও।[/caption]

মেলার চত্বর জুড়ে বসন্তের মাতাল সমীরণ কিংবা কোনো সুবাস নেই। নেই প্রজাপতি বা মধূকরের উড়াউড়ি। বাসন্তি রঙের শাড়ি পরা তরুণীদের চঞ্চল বিচরণ অথবা প্রেমিক প্রেমিকার রোমান্টিক ঘোরাঘুরিও নেই। করোনার ঘরবন্দিকালে হাঁফিয়ে উঠা নগরবাসী কিংবা বইপ্রেমীরা খোলা হাওয়ায় নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য মেলা চত্বরে ছুটে এলেও ধূলি ধূসরিত পরিবেশ হতাশ করেছে। মাস্ক ভেদ করে আলগা ধূলা বালি ঢুকে যাচ্ছে চোখে মুখে। স্বস্তির টানে এসে যেন অস্বস্তির একশেষ।

এমনই একরাশ অস্বস্তির চিহ্ন দেখা গেল মেলায় দুই মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে আসা বিমান কর্মকর্তা সেলিনা শেহনাজের চোখে মুখে। মেয়ে দুটো চারদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কি যেন খুঁজছিল। বই নয় যেন তারা খুঁজছিল বসন্তের সুবাসিত বাতাস কিংবা কৃষ্ণচুড়া-শিমুলের রঙ। মাকে জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, রাজধানীজুড়ে বায়ু আর ধূলাদুষণে আমরা কাহিল। এখন মেলাতেও যদি এমন পরিস্থিতি দেখি তাহলে আসবো কী করে। মেয়েদের মন্তব্যও একই রকম। বললো, চারদিকে কেমন ধূলোবালি। বড্ড বিরক্ত লাগছে। কোন স্টলে পছন্দের কী কী বই আছে তা দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছি।

রাজধানীর উত্তরা থেকে আসা কয়েকজন বইপ্রেমী মেলাচত্বরে আড্ডা দিচ্ছিলেন। কেমন লাগছে জানতে চাইলে তারা বলেন, করোনায় দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। আমরা কোথাও যেতে পারি না। ভাবলাম, মেলায় গিয়ে বইও কিনি, বন্ধু-সহপাঠীদের সঙ্গে তাতে দেখাও হয়ে যাবে। তবে মেলায় এসে একদিকে গরম অন্যদিকে পায়ে পায়ে ধূলা উড়ছে। মেলায় পদচারণা যত বাড়ছে ধূলা ততই লাগামছাড়া হচ্ছে। এতে মেলার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। আয়োজকদের উচিত মেলার পরিবেশ সুন্দর রাখা।

[caption id="attachment_272689" align="alignnone" width="658"] কেনার আগে বইয়ের পৃষ্ঠায় এক পলক চোখ বুলিয়ে নিতে মনোযোগী একদল পাঠক।[/caption]

বইমেলার একটি স্টলের বিক্রয়কর্মী রোহানও বিরক্তি প্রকাশ করলেন। বললেন, সারাদিন ধরে যেখানে থাকতে হচ্ছে সেখানকার পরিবেশ কমফরটেবল না হলে অস্বস্তিবোধ তো হবেই। মাস্ক পরে থাকছি, তারপরেও ধূলা থেকে রেহাই পাচ্ছি না। পাঠক বা ক্রেতারা এমন অস্বস্তি বোধ করলে মেলায় এসে আনন্দ পাবে না। তাতে আমাদের ক্ষতিই হবে।

করোনাকালের বইমেলা নিয়ে লেখক প্রকাশকদের কিছু অতৃপ্তি থাকলেও সব কিছু উপেক্ষা করে পাঠক-বইপ্রেমীদের আগমন স্বস্তির বার্তা দিচ্ছে।

মেলায় নতুন বই : বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপ-বিভাগের তথ্যমতে, শনিবার মেলায় নতুন বই প্রকাশ হয়েছে ১০৪ টি। এখন পর্যন্ত মোড়ক উন্মোচিত হওয়া মোট বইয়ের সংখ্যা ১৫৯টি। গতকাল শনিবার আসা নতুন বইয়ের মধ্যে কবিতা ২১টি, উপন্যাস ১৬টি, কাব্যগ্রন্থ ১১টি, প্রবন্ধ ৬টি, গল্প ৪টি, রচনা ৩টি, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক বই ২টি, গল্পগ্রন্থ ২টি, অনুবাদ ২টি, অন্যান্য ৩৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে আগামী প্রকাশনী থেকে এসেছে আবদুল গাফফার চৌধুরীর ‘হাসিনা ও রেহানা অ-রূপকথার দুই বোন’, হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘দিনলিপি ২০২০’, বিমল গুহের ‘শেখ মুজিবের তর্জনী’, মোনায়েম সরকারের ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ভূমিকা’, মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানের ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু’, বিমল গুহের কাব্যগ্রন্থ ‘শেখ মুজিবের তর্জনী’, কথা প্রকাশ থেকে আহমদ রফিকের ‘স্মরণীয় বরণীয় আপন বৈশিষ্ট্যে’, হাসান আজিজুল হকের কাব্যগ্রন্থ ‘সুগন্ধি সমুদ্র পার হয়ে’, অন্যপ্রকাশ থেকে মোস্তফা কামালের ‘১৯৭৫’, সময় প্রকাশন থেকে মুহম্মদ জাফর ইকবাল‘যেটুকু টুনটুনি সেটুকু ছোটাচ্চু’ আনিসুল হকের ‘চার কিশোর অভিযান’, বলাকা প্রকাশন থেকে কবি ও ছড়াকার তৌহিদ আহমেদের মুক্তগদ্য ‘জল জোছনার নীল কুয়াশায়’ ও কাব্যগ্রন্থ ‘আমি সেই আগুনে ঘুমাই’ অন্যতম।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App