×

জাতীয়

৫৪ নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা দাবিতে ঢাকা-তিস্তা রোডমার্চ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২১, ০৪:২৪ পিএম

৫৪ নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা দাবিতে ঢাকা-তিস্তা রোডমার্চ

শুক্রবার বাসদের আয়োজনে শুরু হয়েছে তিনদিন ব্যাপী ঢাকা-তিস্তা রোডমার্চ। ছবি: ভোরের কাগজ

ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার আর সরকারের নতজানু নীতির প্রতিবাদে এবং তিস্তাসহ ৫৪টি অভিন্ন আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে ঢাকা-তিস্তা রোডমার্চ শুরু করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ। বাসদের পক্ষ থেকে আজ শুক্রবার (১৯ মার্চ) তিন দিনব্যাপী রোড মার্চ কর্মসূচি শুরু হয়েছে যা ২১ মার্চ নীলফামী জেলার তিস্তা ব্যারেজে গিয়ে সমাপনী সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।

শুক্রবার (১৯ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রোডমার্চের উদ্বোধনী সমাবেশ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন, কেন্দ্রীয় পাঠচক্রের সদস্য নিখিল দাস ও জুলফিকার আলী। সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ কমরেড সাইফুল হক।

নেতারা বলেন, বাংলাদেশ আজ পানির অভাবে মরুকরণের হুমকির মুখে। চীন, নেপাল, ভুটান ও ভারত থেকে আসা নদীগুলো বাংলাদেশের প্রাণ প্রবাহ। কিন্তু আন্তর্জাতিক সমস্ত আইন ও নীতি লঙ্ঘন করে ভারত ৫৪টি নদীর উজানে বাঁধ দিয়ে একতরফা পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ার আগ্রাসী তৎপরতার ফলে পানির প্রবাহ কমে গেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশের অভ্যন্তরে নদী দখল ও দূষণ। এক সময় দেশে ১ হাজার ২০০টি নদী ছিল। সরকারসমূহের ভ্রান্তনীতি ও দখল-দূষণের কারণে নদী মরে গিয়ে এখন ২৩০-এ নেমে এসেছে। খরা মৌসুমে বেশিরভাগ নদীতেই পানি থাকে না। একসময়ের প্রমত্তা অনেক নদীই এখন খাল-নালায় পরিণত হয়েছে।

তারা জানান, দেশের চতুর্থ বৃহত্তম আন্তর্জাতিক নদী তিস্তার ভূগর্ভস্থ ও ভূ-উপরিস্থিত জলপ্রবাহ নিয়ে এর অববাহিকার পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার বর্গ কি.মি.। যার মধ্যে বাংলাদেশে ২০ হাজার বর্গ কি.মি. আর ভারতে ১০ হাজার বর্গ কি.মি.। বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে প্রায় ৭০ কি.মি. উজানে গজলডোবায় বাঁধ দেওয়ার কারণে শুষ্ক মৌসুমে ২০১১ সালের পর থেকে পানি পাচ্ছে না বাংলাদেশ। খরা মৌসুম আসতে না আসতেই পানি প্রবাহ আশঙ্কাজনকভাবে কমে কখনো ৫০০ কিউসেক এর নিচে নেমে যায়। অথচ ঐতিহাসিক গড় (১৯৭৩-১৯৮৫) অনুযায়ী পানির প্রবাহ থাকার কথা কমপক্ষে ১০ হাজার কিউসেক। তিস্তা ব্যারেজের বিভিন্ন ক্যানেলের মাধ্যমে সেচ মওসুমে লক্ষ্যমাত্রা রংপুর, দিনাজপুর ও নীলফামারী কমান্ড এলাকায় ১ লক্ষ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে যে সেচ সুবিধা প্রদান করা হতো। এখন তা কমে শুধু নীলফামারীতে ৮ হাজার হেক্টরে নেমে এসেছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাবার কারণে বিকল্প সেচ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।

বাসদ নেতারা বলেন, আজ প্রমত্তা তিস্তার এই বেহাল দশা কেন? পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্রের পরে তিস্তা চতুর্থ বৃহত্তম নদী। ৩১৫ কি.মি. দীর্ঘ তিস্তা আন্তর্জাতিক নদী হওয়া সত্বেও ভারত বাংলাদেশের স্বার্থ উপেক্ষা করে একতরফা বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ৫ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের জন্য পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ পানি পাচ্ছে না।

নেতারা আরও বলেন, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যাসহ ভারত থেকে আগত সকল আন্তর্জাতিক নদীর পানি বণ্টনের বিষয়টি ভারতের শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগিয়ে সমস্ত প্রকারে বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করে চলেছে। বাংলাদেশের বর্তমান ভোট ডাকাতির সরকারসহ অতীতের সকল সরকার নির্লজ্জভাবে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ভারতের প্রতি নতজানু থেকেছে। আমাদের শাসক শ্রেণির একাংশ ভারতকে বন্ধু রাষ্ট্র এবং আরেকাংশ হিন্দু রাষ্ট্র বলে ভোটের রাজনীতিতে ফায়দা তুলতে চায়। কিন্তু বাস্তবে ভারত বন্ধু বা হিন্দু রাষ্ট্র নয়, একটি সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র। তাই পার্শবতী দেশের উপর তারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক, সাংস্কৃতিক কর্তৃত্ব ও প্রভাব বিস্তার করতে চায়। সুন্দরবন ধ্বংস করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, বাংলাদেশের উপর দিয়ে ট্রানজিট ও বন্দর ব্যবহারে একের পর এক চুক্তি করে যাচ্ছে। অথচ তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা এবং নেপাল-ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মাত্র ৩০ কি.মি. করিডোর করতে দিচ্ছে না। তদুপরি সীমান্ত হত্যা, বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি দূর করতে কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। বাংলাদেশে নজরদারি করার জন্য উপকূলে রাডার স্থাপন করছে ভারত। তাছাড়া সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর, তিস্তা নদীর পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প যা চীন নিজ খরচে সমীক্ষা করে দিয়েছে সেটাও না করতে ভারত বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে। একি বন্ধুত্বের নমুনা!

নেতারা বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদী বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা আসবেন। এর আগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দোহাই দিয়ে ভারত সরকার তিস্তা চুক্তি পাশ কাটিয়ে গেছে। এটা একটা ছেলে ভুলানো যুক্তি। কারণ চুক্তি হবে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে। ভারত সরকার আন্তর্জাতিক নীতি লংঘন করে ভাটির দেশ বাংলাদেশের ন্যূনতম স্বার্থ বিবেচনা না করে একের পর এক নদীর পানি প্রত্যাহার করছে। বাংলাদেশের সরকারের উচিত আন্তর্জাতিক সমস্ত ফোরামে বিষয়টি উপস্থাপন করা। কিন্তু সে ধরনের কোন পদক্ষেপ আজও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বাসদসহ বিভিন্ন বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলসমূহের পক্ষ থেকে বারবার দাবি জানানো সত্ত্বেও ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের কারোরই কানে এই দাবি প্রবেশ করছে না। কারণ ভোটের রাজনীতির কাছে দেশ, জনগণ, নদী ও প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ কোন কিছুই গুরুত্ব পায় না। সম্প্রতি তিস্তা ড্রেজিং করে গভীরতা বৃদ্ধি, দুপাড় সংরক্ষণ, পর্যটন, শিল্পায়ন নিয়ে পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু ভারতীয় পানি আগ্রাসন ও দেশের অভ্যন্তরে প্রকল্পের নামে দুর্নীতি বহাল থাকলে এই প্রকল্পও তিস্তা ব্যারেজের মতো ব্যয়বহুল ব্যর্থতার নিদর্শন হওয়ার আশঙ্কা আছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App