কবিতা
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২১, ১২:২৩ এএম
ব্যারিকেড ভেঙ্গে নামে যে বীজ : এ কে এম আব্দুল্লাহ
ক্ষেতের গলি দিয়ে চলে গেলে সূর্যদানা-জমিনের শরীর ঘষে নেমে আসে সন্ধ্যা। পৃথিবীর তলপেট নড়ে ওঠে। আর আমরা ভুলে যাই কান্নার স্বাদ এবং পবিত্রতা ঘুমিয়ে গেলে মৃত বালিশে। তুমি আমার বুকে মাথা রেখে হও স্বপ্নীল।
এরপর, তোমার নাভির পাশে কান পাতি। শুনিÑ শিশুর নিরাপদ হাসির ধ্বনি। আমি পূর্বপুরুষের পথে জমা ধুলো সরিয়ে তোমার চোখের দিকে তাকাই। দেখিÑ পৃথিবীর গলি ঘুঁজি আলোকিত করে আসছে আমাদের সন্তান। আর কমলাপুর রেলস্টেশন ছেয়ে যাচ্ছে কালিজিরা ঘ্রাণ।
এখন প্রতিটি রুপালি রাতে টের পাইÑ নিজেদের ভেতর জ্বলে উঠছে নিজস্ব আগুন।
ক্ষমা করো বঙ্গপিতা : আব্দুল্লাহ আল-মেহেদী
উৎসর্গ করেছ জীবন-যৌবন তব
দেশের তরে দিয়ে গেছো প্রাণ
আমার যত সম্ভ্রম স্বাধীনতা
বঙ্গপিতা, এ তো তোমারই অবদান।
দানিয়াছো স্বাধীনতা, দিয়েছ স্বদেশ
মরণের সকাশে পেয়েছ অমরত্বের বেশ।
তোমারই পরিচয়ে পরিচিত আমি
তাবৎ পৃথিবীর পথে
চির অভিভাবক মম
হিমালয় সম
মহাকালের মহারথে।
রবির বেশে জ¦লে পুড়ে
দানিয়েছিলে আলো উত্তাপ
স্বর্গ মাঝে সপরিবারে সুখে থাক পিতা
অভাগা জাতিরে করে দিয়ে মাফ।
বোধের সিঁড়িতে আদিম উল্লাস : ফিরোজা সামাদ
নৈরাশ্যের ভারে নোয়ানো হৃদয়
নিঃসঙ্গ স্মৃতিকাতর এক শালিকের মতো
তোমার কাছে কি সবই মøান?
কৃত্রিমতার চমকপ্রদ ঘোরলাগা নতুন ভোর যেন এক শরতের পালক
আমার অন্ধ প্রচেষ্টায় সহজ সরল উপলব্ধি
হাজারো কবিতায় পৃথক রেখার মাঝে
আমি এঁকে যাই শ্রমঘন কারুকাজ
বেদনার্ত ভাষায় থাকবে তুমি স্বপ্ন তাড়িত হয়ে
শৈশবের ঝাপসা ঘ্রাণে
অমৃত কথায় তোমার সাজানো বাগানে
আমি যেন এক বেদনার আমিষ
জীবনে সত্য যখন ঘৃণার চরম ছায়া হয়ে আসে
তখন বহুদিনের চেনা পথকেও মনে হয়
এ যেন প্রথম দেখা অচেনা কোনো পথ॥
আমার ভালোবাসার ত্রিসীমানায় কখনো এসো না তুমি
তাহলে তোমায় যে শুনতে হবে
অদৃশ্য কোনো দুঃখের পাচালি
তুমি কি গোলকধাঁধা দেখেছো কভু?
সেই ধাঁধা যেন এক স্বাপ্নিক বিহ্বল॥
নদী কেঁদে যায় নিরবধি তার প্রণয় সংগীতের সুরের তানে
আজকাল ধোঁয়াশাচ্ছন্ন জীবন যেন মায়াজালে আবৃত
আলো ঝলমলে কাব্যের বাসনায় অনিবার্য আহ্বান॥
প্র্রভাতের আলোতে দেখি মেহেদি রঙ মাখা
তোমার ভালোবাসাই সৃষ্টি করে অনিবার্যতা
ভালোবাসা কঠিন-বায়বীয়-তরলে শূন্য
বোধের সিঁড়ি বেয়ে গড়িয়ে পড়ে
হৃদয়ের আদিম উল্লাস॥
অনাচারে ডুবে গেছে সত্তার বিবেক
আর উথাল-পাথাল ঢেউয়ে ভাসছে শূন্য হৃদয়
সে হৃদয়ের কান্না কেউ শুনতে পায় না
না তুমি, না আমি, না অন্য কোনো জন॥
হৃদয় আবাস : রফিক হাসান
যে গ্রামে আমার নিবাস সেটি মাঝে মাঝে হারিয়ে
যায় কোথাও খুঁজে পাই না দিঘির জলে গাছের
পাতায় ঘাসের ডগা শিশিরে তার ছায়া কাঁপে না
মনোরম আবাস আধা দৃশ্যমান আধা অদৃশ্য
যেখানে পথ শুরু হয়ে ঘুরে বাঁক নেয় অনন্তে
কোনো খাবার নেই শুধু বাণী খেয়ে বাঁচে সকলে
যাওয়ার স্থান নেই সকল জায়গা এমনি আসে
মরণ হয় না সবাই মৃত্যুর কাছাকাছি থাকে
অপেক্ষারত যমদূতের সাথে খোশগল্পের
ফুলের ঘ্রাণে ভরে থাকে সকল নির্জন প্রান্তর
কোনো পাখি নেই গান ডানা মেলে ডালে ডালে ওড়ে
ঝড়বৃষ্টি কালবোশেখী নেই শীতল বায়ু আছে
ঝগড়াবিবাদ হিংসা দ্বেষ নেই ভালোবাসা আছে
গোপন আবাস লুকিয়ে স্বপ্নে শোণিত কণিকায়
জানি লজ্জা পাও হানা দিতে দৃশ্যমান ঠিকানায়
আগমন হোক হৃদয় আবাসে নিরালা নিভৃতে
খেলাঘর : রওশন রুবী
বনের ভেতর অজগর, তার ভেতর খেলাঘর।
ঘরে বিদ্যুৎ খুঁটি, সাঁতারের সরঞ্জাম পাশে নিয়ে
মাতোয়ারা মন্দিরা। বনের ভেতর ঝড়, অজগরের প্রলয়,
খেলাঘরে হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটে শাখা-প্রশাখা।
যমুনা গড়ায় গঙ্গায়, তারপর সমুদ্র কর্ষণ।
কি এক অদ্ভুত শিহরণে ভেঙে পড়ে তাম্রবলয়।
বিদ্যুৎ চলে গেছে। অগ্নিবাণে কাঁপে ভূমণ্ডল।
অসুখ নিমজ্জিত হৃদয়। ফাদার, পুরোহিত,
ইমামের কণ্ঠে চলছে প্রলয়ের বিপক্ষে উচ্চারণ।
খুলে দেয় টসটসে বাহু গল্পের মুরতি;
খসে পড়ে আক্রান্ত হৃদয় থেকে শাণিতআবেগ;
আচম্বিতে দেখি খেলাঘর পিরামিডের অবিকল।
ছায়াস্মৃতি : ঋতা জিয়াসমিন
অপরিণত প্রেমের মৃত্যু হলে
সন্তপ্ত হৃদয়ের শ্মশানে
স্মৃতিদাহ করি।
চোখ ছুঁয়ে থাকে জল।
এই শূন্য করোটি, দুঃখের
নুড়িুপাথরে ভারী বুক,
নিথর দু’টো পায়ে উঠে দাঁড়ালেও
আমি আর হাঁটতে পারি না
জীবনের অসম পথে।
কোথাও সান্ত্বনা নেই..
তাই বিনাশ হয় না স্মৃতির!
শেষমেশ
প্রিয় প্রেমিকের
দীর্ঘ দেহের ছায়া আঁকড়েই
রুক্ষ, ঊষর পথটুকু হেঁটে ফিরি।
চাওয়া : মোহাম্মদ ইকবাল
বাজি হেরে রাতের মালিকানা স্বত্ব আমাকেই লিখে দিলে
রাত এখন আমার,
একান্ত আমার!
পোষা বেড়ালের মত যখন ইচ্ছে ছুঁয়ে দিতে পারি তার উষ্ণ শরীর
ক্রমেই তার তুলতুলে নরম থাবা থেকে বেরিয়ে আসছে ভয়ংকর নখ
আমাকে সুকৌশলে নিয়ন্ত্রণ করে হিংস্র নখের অভিশঙ্কা,
মালিকের মালিকানা স্বত্ব চুপিসারে লুট!
তুমি বললে; চাইলে শুধু ভালোবাসাই দিতে পারতাম, কিন্তু তুমি চাইলে আগুন!
আমি নিরন্তর দগ্ধ হই আগুনের শীতল দহনে
আর ভালোবাসার নিদ্রা পান করি তোমার বুকের পাত্রে!