×

মুক্তচিন্তা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কি ভাবছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২১, ১২:১৬ এএম

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কি ভাবছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়?
আজহার মাহমুদ করোনার কারণে এক বছরের বেশি সময় বন্ধ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রাথমিক থেকে শুরু করে মাধ্যমিক পর্যন্ত সবাইকে পাস করিয়ে দেয়া হয়েছে। অনলাইনে ক্লাস এবং অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে মোটামুটি বছরটা শেষ হলো। এইচএসসি অটোপাস দিয়ে ওই শিক্ষার্থীদেরও একটা বছর রক্ষা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ দিতেই হয়। কিন্তু যারা অনার্স পড়ছে, যাদের আর কিছুদিন পরই পরিবারের হাল ধরতে হবে পড়াশোনা শেষ করে, তাদের বছরটা কীভাবে গেল? কেউ কি খোঁজ নিয়েছেন? এই শিক্ষার্থীদের একটা বছর যে নষ্ট হয়ে গেল এটা নিয়ে কোনো শিক্ষাবিদ চিন্তা করছেন না কেন আমি সেটাই বুঝতে পারছি না। বিশেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছুই থমকে আছে। এত এত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কী সেটাই এখন বড় ভাবনার বিষয়। এই একটা বছর কষ্ট করে পার করেই দিলাম আমরা। কিন্তু করোনা যেন আমাদের পিছু ছাড়বে না। আবারো সেই কঠিন সময়ে আমরা ফিরে যাচ্ছি। রোজ হাজারের ওপর আক্রান্ত। এবং মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। এক্ষেত্রে আবারো সবার মনে আশঙ্কা জেগেছে। টিকা নেয়ার পরও সবাই এই সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যথেষ্ট সচেতনতা অবলম্বন করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেলে কিংবা এই পরিস্থিতি থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া উচিত হবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও জানিয়েছেন এমন পরিস্থিতি থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তারিখ পেছাতে পারে। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে এটা আমিও মানি। উপলব্ধি করতে পারি পরিবেশ এবং পরিস্থিতি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অবস্থা কি কোনো বিশেষজ্ঞরা বুঝেন না? আমি সেসব শিক্ষার্থীর কথা বলছি, যারা বছরের পর বছর পরীক্ষা না দিয়ে একই শ্রেণিতে বসে বসে পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছে। আমার এক বড় ভাই রয়েছে। যিনি মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছেন ২০১৮ সালে, কিন্তু এখনো তার সেই পরীক্ষা শেষ হয়নি। অন্যদিকে যারা অনার্সে রয়েছে তাদের তো একটা বছর ইতোমধ্যে শেষ। এখন এই বছরটাও যদি এভাবে চলে যায় তাহলে তাদের পড়াশোনা শেষ করতে কতদিন লাগতে পারে সেদিকে কি নজর রেখেছেন? কোনো বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে ভেবেছেন কি-না আমি জানি না। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই বিষয় নিয়ে ভাবা উচিত। ভাবতে বলারও যথেষ্ট কারণ আছে। আমাদের চাকরির বয়সসীমা থাকে ৩০ বছর পর্যন্ত। অথচ একজন শিক্ষার্থীর সাধারণভাবে পড়াশোনা শেষ করতে সময় লাগে ২৪-২৫ বছর। আর ৫-৬ বছরে তার চাকরি খুঁজে নিতে হবে। ৩০ পার হয়ে গেলে অনেকটাই অনিশ্চিত জীবনে পাড়ি দিতে হবে। কারণ আমাদের দেশে এখনো মধ্যবিত্তদের সংখ্যা বেশি। তাই পড়াশোনা করে ব্যবসা করার চেয়ে একটা ভালো সরকারি চাকরি খুঁজে বেশিরভাগ তরুণ। আবার কেউ বিসিএসের জন্য পড়াশোনা করলে তার এই সময়গুলোতে পড়াশোনা করতে হবে। আর তখন তার জন্য চাকরি পাওয়া আরো কঠিন হবে, যদি বিসিএসে চান্স না পায়। তবুও এদেশের শিক্ষর্থীরা এই বিষয়টা বিষের মতো হজম করে আছে। অনেকেই আবার এটা নিয়ে আন্দোলন, লেখালিখিও করেছে। চাকরির বয়স ৩৫ পর্যন্ত করার দাবি তাদের। তবে আমার কথা হচ্ছে, বছরের পর বছর এক শ্রেণিতে বসে থাকা শিক্ষর্থীদের নিয়ে। তাদের পড়াশোনা শেষ করতে করতে বয়সও শেষ হয়ে যাবে। তখন তাকে চাকরি কে দেবে? কিংবা তার স্বপ্ন পূরণের সময়গুলো কে ফিরিয়ে দেবে? দুই বছর যদি অনার্সে অতিরিক্ত যায় এবং এক বছর মাস্টার্সে অতিরিক্ত গেলে ২৭-২৮ বছরে পড়াশোনা শেষ হবে। এর মধ্যে অনেকের বয়স বেশিও থাকতে পারে। আবার অনেকে বিসিএস করার স্বপ্নও দেখতে পারে। কিন্তু বয়স তাদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে তখন। এ বয়স কে ফিরিয়ে দেবে? বিশেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। অনেক নারী শিক্ষার্থীর তাই পড়াশোনার মাঝখানে পরিবারের চাপে বিয়ের পিঁড়িতেও বসতে হয়। অথচ এতদিনে তারা স্নাতক পাস একজন শিক্ষার্থী বলে নিজেদের দাবি করতে পারত। সেশনজট থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনেক মুক্ত হয়েছে, কিন্তু এখন প্রাকৃতিকভাবে এই সেশনজট আবার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এটা শিক্ষার্থীদের জন্য ভয়ঙ্কর একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এসব শিক্ষার্থীর জন্য কি করা যায় সেটা ভাবতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে। শুধু ভাবলে হবে না, এর সমাধানও দিতে হবে। এবং সেই সমাধান হতে হবে শিক্ষার্থীবান্ধব। পরিশেষে বলতে চাই, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তারিখ পিছিয়ে দেয়া যায়, তবে শিক্ষার্থীদের বয়স পেছানো যায় না। যদি এটাও যেত তাহলে আর কোনো শিক্ষার্থীর মনে কষ্ট থাকত না। অন্তত পক্ষে বয়সের কারণে চাকরি না পাওয়ার ভয় থেকে মুক্ত থাকত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থী, ওমরগনি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App