×

মুক্তচিন্তা

দুয়ারে কড়া নাড়ছে বইমেলা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২১, ১২:৩২ এএম

বারো মাস দিয়ে সাজানো প্রত্যেকটি বছর। বিভিন্ন মাস বিভিন্ন কারণে মর্যাদাপূর্ণ কিংবা তাৎপর্যপূর্ণ। ১২ মাসের একেকটি মাস একেকজনের কাছে স্মরণীয় বা প্রিয়। সবাই চায় তার প্রিয় মাসটি সুখ-সমৃদ্ধি নিয়ে তার কাছে বারবার ফিরে আসুক। ফিরে আসুক পুরনো সুখস্মৃতি নিয়ে। ঠিক তেমনি করে ফেব্রুয়ারি মাস বইপ্রেমী থেকে শুরু করে লেখক-প্রকাশক, বই বিক্রেতা-ক্রেতার কাছে বছরের একটি প্রত্যাশিত মাস। আনন্দের মাস। উদযাপনের মাস। আমাদের পৃথিবী প্রায় এক বছর ধরে কোভিড-১৯ ব্যাধিতে আক্রান্ত। কোভিড থেকে বাঁচতে জনমানুষের ভিড় এড়াতে এই বছর ফেব্রুয়ারিতে যথা সময়ে বই মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। যদিও আমরা পূর্বেই এ বিষয়ে অবগত ছিলাম। তারপরও আমাদের সুখস্মৃতিময় ফেব্রুয়ারিকে মাসজুড়েই শূন্যতায় অনুভব করেছি। লেখক-পাঠক সংশ্লিষ্ট সবাই। পৃথিবীতে কত ধরনের মেলায় তো হয়। কিন্তু কতিপয় শুদ্ধ মানুষের মনে ফেব্রুয়ারি মাস আলাদা করে জায়গা করে নিয়েছে বইমেলার জন্য। বলা চলে হাজার-লক্ষ্যাধিক বইয়ের মানুষ ফেব্রুয়ারির জন্য অপেক্ষা করে। দিনাতিপাত করে। আশায় বুক বাঁধে। কবে ফেব্রুয়ারি আসবে। পাঞ্জাবি-শাড়ি পরে বইমেলায় যাবে। নিজের পছন্দের লেখকের বই কিনে ঘরে ফিরবে। স্টলে স্টলে ঘুরে নানান লেখকের নানা মতের বই উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে দেখবে। বইমেলায় অনেক প্যাভিলিয়ন থাকে। বাংলা একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত প্রধান বইমেলাটি আয়োজিত হয় বাংলা একাডেমির চত্বরসহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। প্রতি বছর এখানে লক্ষাধিক বইপ্রেমীর মিলনমেলা ঘটে। দেশের নানা প্রান্তের বইপ্রেমীরা ছুটে আসেন বইমেলার টানে-ভালোবাসায়। মেলা চলাকালীন নিত্যদিন নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হতে থাকে মেলা প্রাঙ্গণে। হাসি ফুটে নতুন কোনো লেখকের মুখে। প্রত্যাশার দুয়ার ভাঙে কোনো প্রকাশক গোষ্ঠীর। এমনও শোনা যায় পাঠকপ্রেমীরা নিজে নতুন জামা না কিনে সারা বছর অর্থ জমিয়ে রাখে বইমেলায় বই কেনার জন্য। এই সবটুকুই বইয়ের প্রতি ভালোবাসা। বইমেলার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের চেয়ে আমাদের বাংলাদেশের বইমেলায় আলাদা জৌলুস থাকে, উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজমান করে ফেব্রুয়ারিজুড়ে। এই বছর বাংলা একাডেমি কর্তৃক বইমেলা এখনো অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে লেখক-প্রকাশকরা বসে নেই। বিভিন্ন জেলায় ছোট্ট পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে করে নতুন বই লেখকরা খানিকটা উপকৃত হচ্ছেন। পাঠকরাও বইমেলার হালকা আবহ পাচ্ছে। তবে দিনশেষে বাংলা একাডেমির বইমেলার সঙ্গে দেশের অন্যান্য জেলার বইমেলার তুলনা করতে নেই। চট্টগ্রামে ও জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামের আউটডোরে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রামের অনেক বইপ্রেমী ঢাকায় যাওয়ার সুযোগ পায় না। কিংবা সাহস করে ঢাকার বইমেলার উদ্দেশ্য লম্বা পথ পাড়ি দেয় না। তাই চট্টগ্রামে মানুষের কাছে বাংলা একাডেমির বইমোলার চেয়ে স্থানীয় বইমেলা কোনো অংশে কম নয়। তারা নিজেদের মতো করে উদযাপন করে। চট্টগ্রামের বইমেলার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, মেলার পাশেই হলরুমের মতো করে শামিয়ানা টাঙিয়ে, স্টেজ, চেয়ার-টেবিল দিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মেলা চলাকালীন প্রত্যেক সন্ধ্যায় বড় বড় সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, কবি ও ভাষাবিদরা আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন। তারা এখানে বাংলা ভাষার ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে আলোচনা করে থাকেন। গত বছর জাফর ইকবাল, প্রথম আলোর আনিসুল হক স্যারসহ পশ্চিম বাংলার অনেক কবি-সাহিত্যিক উপস্থিত ছিলেন। এ বছর করোনায় সব লণ্ডভণ্ড। বইমেলার সবচেয়ে উত্তেজনা মুহূর্ত হলো লেখক-পাঠকের সাক্ষাৎ। সবাই তার পছন্দের লেখকের বই কিনে তার থেকে অটোগ্রাফ-সেলফি নিতে তুমুল ব্যস্ত থাকে। লেখকরাও স্বাচ্ছন্দ্যে পাঠকদের অটোগ্রাফ দেন। হাসিমুখে ছবি তুলেন। সত্যি সেই মুহূর্তগুলো নয়নাভিরাম। আনন্দের স্বপ্ন পূরণের। আশা করি বিপদ কেটে যাবে। দেশজুড়ে ভ্যাকিসিনিশন চলছে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আগামী দিনগুলোতে যথা সময়ে বইমেলা-প্রাণেরমেলা, মনের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হবে।

তাসনিম হাসান মজুমদার : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App