×

মুক্তচিন্তা

তুমি যত বড় মাপের মানুষ ও নেতা, আমরা ততটা হইনি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২১, ১২:৩০ এএম

আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বছরের শেষ দিন, আগামীকাল ১০১তম জন্মবার্ষিকী। এই এক বছর আমরা মুজিব শত বছর পালন করেছি। রাষ্ট্র ও সরকারের উদ্যোগে বছরব্যাপী নানা কর্মসূচি ও আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বছর পালনের প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ তাতে ছন্দপতন ঘটায়। মুজিব বছরে দুই ধরনের উদ্যোগ রাষ্ট্র ও সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছিল। এক, জাতির নতুন প্রজন্মকে মুজিব জীবনের জানা-অজানা অনেক তথ্য ও উপাত্ত নিয়ে মুজিবকে জানা ও জানানোর চেষ্টা ছিল। দুই, মুজিব বছরে গৃহহীন ও আশ্রয়হীন মানুষদের সরকারি ও বেসরকারিভাবে ঠিকানা, বাড়িঘর এবং কর্মসংস্থানের আয়োজন করা। এই আয়োজন বেশ কঠিন ও সময়সাপেক্ষ হলেও সরকার ২০২১ সালের মধ্যে লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে চলেছে। দ্বিতীয় উদ্যোগটি অত্যন্ত মহৎ এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য একটি মাইলফলক ঘটনা। এটি বাস্তবায়িত হলে গৃহহীনরা শুধু গৃহই পাবে না, কর্মসংস্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থসামাজিক উন্নয়নে দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় উঠে আসার সক্ষমতা অর্জন করবে। যারা মুজিব শত বছরের আয়োজনকে নিতান্তই আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দেখেছেন, তারা রাষ্ট্রের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্ত করার সরকারি প্রচেষ্টাকে এতদিন হয়তো উপলব্ধি করতে পারেননি। তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতা মুজিবের জন্মশত বছর পালনকে নিতান্ত উৎসব আয়োজনে সীমাবদ্ধ রাখেননি, তিনি তার পিতা এবং আমাদের জাতির জনকের আজীবনের লালিত স্বপ্ন তথা দরিদ্র ও হতদরিদ্র দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চিন্তাধারাকে বাস্তবে রূপ দিতে চাইলেন। এরই মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার গৃহহীন-আশ্রয়হীন মানুষ রাষ্ট্রের কাছ থেকে ঠিকানা বুঝে পেয়েছেন, আরো ৮ লাখের বেশি মানুষ পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। নিঃসন্দেহে মুজিব শত বছর পালনের এই দিকটি আমাদের জাতীয় জীবনে শুধু স্মরণীয় হয়েই নয় বরং দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠনেও বড় ধরনের ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। সেই দেশে লাখ লাখ মানুষ আশ্রয়হীন জীবনযাপন করলে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের পূর্ণতা কিছুতেই অর্জিত হওয়ার নয়। সেই বিবেচনা থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিব জন্মশত বছর পালনের তাৎপর্য খুঁজেছেন মুজিবের সারাজীবনের রাজনীতির চিন্তাধারা থেকে। মুজিব যখন স্কুলের ছাত্র ছিলেন তখন তাঁর সহপাঠী দরিদ্র শিক্ষার্থীকে নিজ পরিবারের গোলা থেকে ধান তুলে নিয়ে স্বহস্তে দান করেছেন। এরপর দেশ ও জাতির মুক্তি এবং কল্যাণে নিজেকে প্রতিদিন, প্রতি বছর গড়ে তুলছিলেন আর যুক্ত হয়েছিলেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে স্বাধীনতা লাভের জন্য। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে তিনি নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মানসিকতায় বেড়ে উঠছিলেন। চল্লিশের দশকের সেই হানাহানি রাজনীতিতে তিনি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অসহায় মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। দেশভাগ হয়ে যাওয়ার পর ভগ্ন হৃদয় নিয়ে কলকাতা ছেড়ে তিনি টুঙ্গিপাড়া এবং অবশেষে ঢাকায় হাজির হলেন। পাকিস্তান সৃষ্টিতে পূর্ব বাংলার জনগণ মর্যাদা পাবে না, অধিকার পাবে না বরং আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও ভাষা সাংস্কৃতিকভাবে বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার হবে, এটি তিনি ১৯৪৭ সালেই উপলব্ধি করছিলেন। নিজেকে ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসেই যুক্ত করলেন ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে, এরপর শিক্ষার্থীদের শিক্ষার আন্দোলন, রাজনৈতিক দল গঠন, সমঅধিকারের দাবি উত্থাপন এবং মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকারের দাবি উত্থাপনে। বলা চলে ’৪৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তরুণ মুজিব পূর্ব বাংলার জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে অতি অল্প সময়ে পরিণত হতে থাকেন। এর জন্য তাকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী মামলায় জড়িয়ে বন্দি করে রাখছিল। শেখ মুজিব আদ্যোপান্ত একজন পূর্ব বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেকে সমর্পণ করলেন। তিনি কোনো চাকরি নিলেন না, ব্যবসায়ও বাগিয়ে নিলেন না। হতে চেয়েছিলেন স্বাধীন একজন উকিল, যিনি ওকালতি পেশাকে রাজনীতিতে টিকে থাকার জন্য উপযুক্ত মনে করেছিলেন। কিন্তু সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে দিল। কিন্তু তাতেও তাকে দমানো গেল না। পিতার আর্থিক সীমিত সচ্ছলতার ওপর নির্ভর করেই তাঁর ঢাকায় রাজনৈতিক জীবনে মামলা-মোকদ্দমা, কারাভোগ, পরিবার বিচ্ছিন্নতা আবার পরিবারকে ঢাকায় এনে থাকার কষ্টকর এক জীবন পাড়ি দেয়ার অভিজ্ঞতা অতিক্রম করতে হয়। এভাবেই মুজিব পঞ্চাশের দশকে অগ্রজ-অনুজদের কাছে একজন বলিষ্ঠ, সাহসী, দৃঢ়প্রত্যয়ী এবং রাজনীতির পাঠ রপ্তকারী নেতা হিসেবে পাকিস্তান রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে সবার কাছেই ব্যতিক্রমী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। শেখ মুজিব পূর্ব বাংলার আনাচে-কানাচে জনগণের অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগকে গড়ে তুললেন। জনগণকে সংগঠিত করতে থাকলেন। একই সঙ্গে পাকিস্তান রাষ্ট্রব্যবস্থায় পূর্ব বাংলার জনগণের বঞ্চিত হওয়ার সব ক্ষেত্র একে একে চিহ্নিত করছিলেন। পাকিস্তান রাষ্ট্রব্যবস্থায় পূর্ব বাংলার জনগণের মুক্তির সম্ভাবনা নেই এই বিষয়টি জনগণকে সচেতন করে তুলেন। পঞ্চাশের দশকের রাজনীতিতে তাঁর অবস্থান তিনি নির্মাণ করেন। পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন, অর্থনৈতিক শোষণ মুক্তি, সামাজিক বঞ্চনা থেকে মুক্ত হওয়া এবং গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে পূর্ব বাংলার মানুষ যেন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে সেটি তিনি এবং তাঁর দল পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদ এবং পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে প্রতিষ্ঠা করার লড়াই করে গেছেন। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ছিল প্রতিক্রিয়াশীল। সামন্ত ভূস্বামী ও সামরিক শক্তিতে বিশ্বাসী, ধর্মীয় ও জাতিগত দৃষ্টিভঙ্গিতে ছিল তারা বাঙালিবিরোধী, পূর্ব বাংলার জনগণের প্রতিপক্ষ। সেই পরিস্থিতিতে শেখ মুজিবের লড়াই-সংগ্রামকে স্তব্ধ করতে সামরিক শাসন, জেলজুলুম নতুনভাবে শুরু হয়। ষাটের দশকে প্রবীণ অনেক নেতাই আর বেঁচে ছিলেন না। ভাসানীসহ অনেকেই রাজনৈতিক পথ পরিবর্তন করলেন। কিন্তু মুজিব পূর্ব বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের অবিচল থাকলেন। ৬ দফা উত্থাপনের মাধ্যমে তিনি পাকিস্তানকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন। পাকিস্তানের সরকার তাকে ও তাঁর দলকে নিশ্চিহ্ন করার সব চেষ্টাই একের পর এক করতে থাকল। কিন্তু সেই চেষ্টাও শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে কারাগার থেকে মুক্ত হলেন, ৬ দফাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক চেতনা পূর্ব বাংলায় তখন বিস্ফোরিত হলো, পাকিস্তান তলিয়ে যেতে থাকল। শেখ মুজিবের নির্বাচনের দাবি অবশেষে গৃহীত হলো। শেখ মুজিব সেই নির্বাচনে পূর্ব বাংলার জনগণের নিরঙ্কুশ রায় নিয়ে পাকিস্তানের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার আইনগত অধিকার লাভ করেছিলেন। পাকিস্তান সেই অধিকার থেকে শেখ মুজিবকেই নয়, পূর্ব বাংলাকেও বঞ্চিত ও অবজ্ঞা করার পথে হাঁটে। সেখান থেকেই মুজিব ও জনগণ স্বাধীনতার জন্য একাকার হয়ে গেলেন। ৭ মার্চ মুক্তি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক এলো মুজিবের কণ্ঠ থেকে। পাকিস্তানিরা সেটি কামান ও বন্দুক দিয়ে গুঁড়িয়ে দিতে চাইল। কিন্তু জনগণের ও নেতৃত্বের ঐক্যবদ্ধ শক্তি কামান, বন্দুক, গোলাবারুদের চাইতে কত বেশি শক্তিশালী সেটি ২৬ মার্চ থেকে ৯ মাসের জনযুদ্ধে ধীরে ধীরে উদ্ভাসিত হতে থাকল। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের বিজয় হলো, আর পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ ঘটল। এই ২৩ বছরেই পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি পূর্বাঞ্চল হারিয়ে নিজের ভূখণ্ডে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে তখন এবং এখনো অবস্থান করছে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে এলেন এক যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে। তাঁর উপস্থিতিতে যুদ্ধপীড়িত বাংলাদেশের মানুষ প্রাণ ফিরে পায়। তিনি যদি ফিরে না আসতে পারতেন তাহলে এমন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ জাতীয় ঐক্যের সুযোগ পেত কিনা জানি না। তবে নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কঠিনতম চ্যালেঞ্জ মাথায় তুলে নিলেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। এই রাষ্ট্রটিকে তিনি গড়ে তুলতে চাইলেন সবার জন্য, কেউ যেন গৃহহীন না থাকে, কর্মহীন, খাদ্যহীন, চিকিৎসাবিহীন, শিক্ষাবিহীন না হতে হয়। সে কারণের সংবিধান প্রণয়ন, ১ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, নতুন শিক্ষা কমিশন গঠন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন, যুদ্ধবিধস্ত দেশ গঠন, ভারতে আশ্রয় নেয়া ১ কোটি মানুষের পুনর্বাসন, পাকিস্তান ফেরত ৪ লাখ মানুষের চাকরি ও কর্মসংস্থান, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং নারীদের আশ্রয়দানের ব্যবস্থা করাসহ অসংখ্য কাজে হাত দিলেন। তিনি স্বপ্ন দেখালেন একটি শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা গঠনেরÑ যেখানে বৈষম্য থাকবে না, মানুষ দুবেলা পেট পুরে ভাত খেতে পারবে। তিনি বিশ্বাস করতেন আমাদের উর্বর মাটি আছে, পরিশ্রমী মানুষ আছে। সুতরাং এ দেশে খাদ্যের অভাব থাকবে না। প্রয়োজন শুধু বণ্টন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার। সে কারণে তিনি অর্থনৈতিক নানা ধরনের সংস্কারের একের পর এক উদ্যোগ নিলেন। রাষ্ট্রীয় খাতের পাশাপাশি ব্যক্তি ও বেসরকারি খাতও বিকাশের সুযোগ করে দিলেন। সে কারণে ১৯৭২ সালে যে দেশের মাথা পিছু আয় ছিল মাত্র ৯৩ ডলার, ১৯৭৫ সালের জুন মাসে তা দাঁড়ায় ২৭৩ ডলারে। বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে ছিল হতদরিদ্র দেশের তালিকায়, ’৭৫ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় উন্নীত হয়। জিডিপি ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। এমন একটি রাষ্ট্র এই বাংলার মানুষ তখন স্বপ্ন দেখছিল অচিরেই উন্নত সমৃদ্ধ জীবন ব্যবস্থা গড়ে তোলার। সেভাবে প্রশাসন কৃষি অর্থনীতি, শিল্প, ব্যবসায়-বাণিজ্য নতুন করে ঢেলে সাজানো হচ্ছিল। বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি হিসেবে এসব উদ্যোগ গ্রহণ করছিলেন, এভাবে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলছিলেন সেটি খুব দ্রুত দৃশ্যমানও হচ্ছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে যারা এমন রাষ্ট্রব্যবস্থা পছন্দ করছিল না। বাংলাদেশ একটি কল্যাণবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা হিসেবে তৃতীয় বিশ্বে আবির্ভূত হোক সেটি যারা পছন্দ করছিল না তারা এবং তাদের কিছু এ দেশীয় দোসর ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টে রক্তাক্ত হত্যাকাণ্ড সৃষ্টি করে। বাংলাদেশ এরপর থেকে উল্টোপথে হাঁটে। ২১ বছর ধরে দেশ থেকে ১৯৪৭-এর পাকিস্তানি ভাবাদর্শে ফিরিয়ে নেয়ার ও শাসন করার কূটকৌশল অবলম্বন করা হয়। এখনো সেই অপশক্তি বাংলাদেশের রাষ্ট্র, রাজনীতি, প্রশাসন ও সমাজ জীবনে বিরাজ করছে। তারা পাকিস্তান হারানোর বেদনায় এখনো আক্রান্ত, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামের যে ইতিহাস-ঐতিহ্য বঙ্গবন্ধু সৃষ্টি করেছিলেন, পূর্ব বাংলার জনগণের যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ গঠন করার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যুদ্ধোত্তর স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু বাস্তবে রূপ দিতে চাচ্ছিলেন তাঁর সব কিছুকেই তারা হত্যা, ক্যু এবং অপপ্রচারের মাধ্যমে বিলীন করে দিতে চাইলেন। অনেক বছর তো তারা ক্ষমতায় ছিলেন, কিন্তু জনগণের ভাগ্যের কি পরিবর্তন তারা করছিলেন? রাষ্ট্রের কি গুণগত পরিবর্তন তারা আনতে পেরেছিলেন? রাষ্ট্রের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক কি উন্নয়ন তারা করতে পেরেছিলেন? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে তেমন কিছুই খুঁজে পাওয়া যাবে না। অথচ তারা এখনো প্রতিদিন জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা, মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবিস্মরণীয় নেতৃত্বদান এবং স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনে তাঁর দূরদর্শিতা, রাষ্ট্রচিন্তার বহিঃপ্রকাশ ইত্যাদিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার হীন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আসলে টুঙ্গিপাড়ার খোকা কালে কালে হয়ে উঠলেন বাংলা, বাঙালির ও এই ভূখণ্ডে বসবাসকারী সব জাতি-গোষ্ঠীর স্বাধীনতার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সংগঠক ও নেতারূপে। ২৩ বছরেই তিনি তাঁর দেশপ্রেম দিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রকে এই ভূখণ্ড থেকে অকার্যকর করার এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ে নেতৃত্ব প্রদান করলেন। এই রাষ্ট্রটি হয়ে উঠতে যাচ্ছিল তৃতীয় বিশ্বের এক অনন্য ব্যতিক্রমী রাষ্ট্র হিসেবে। এটি শেখ মুজিবের মতো যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদেরই কাজ হতে পারে। তিনি ছিলেন সেই মাপের মানুষ এবং নেতা, যাকে সেই সময়ের গোটা বিশ্ব এক নামে চিনতে পেরেছিল, এখনো তিনি মুক্তিকামী বিশ্বমানবতার নেতা হিসেবে স্বীকৃত আছেন। জাতি হিসেবে আমরা কতজন তাঁর এই দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মর্যাদা দানের যোগ্যতা রাখি? এবার তাঁর জন্মশত বছরে আমাদের সুযোগ হয়েছে মানুষ ও নেতা হিসেবে তাকে চেনা, জানা, বোঝা এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রটিকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সোনার বাংলা তথা জনকল্যাণবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করা। তাহলেই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন হবে যথার্থ।

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত), ইতিহাসবিদ ও কলাম লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App