×

আন্তর্জাতিক

মিয়ানমারে আরেকটি রক্তাক্ত নৃশংস দিন, নিহত ৩৯

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২১, ০৪:২৬ এএম

মিয়ানমারে আরেকটি রক্তাক্ত নৃশংস দিন, নিহত ৩৯

রবিবার সেনাবাহিনী ও দাঙ্গা পুলিশের টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও তাজা গুলি থেকে আত্মরক্ষার চেষ্টা বিক্ষোভকারীদের। ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারে আরেকটি রক্তাক্ত নৃশংস দিন, নিহত ৩৯

বিক্ষোভকারীদের আত্মরক্ষার চেষ্টা। ছবি: গার্ডিয়ান

মিয়ানমারে আরেকটি রক্তাক্ত নৃশংস দিন, নিহত ৩৯

রাজপথে আগুন জ্বালিয়ে সেনাবাহিনীর ট্রাক প্রতিরোধের চেষ্টা। ছবি: গার্ডিয়ান

মিয়ানমারে আরেকটি রক্তাক্ত নৃশংস দিন, নিহত ৩৯

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে ‘বিপ্লবের’ ডাক দিয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু কির নেতৃত্বাধীন দল এনএলডির আত্মগোপনকারী নেতা মান ‍উয়িন খাইং থান। রবিবার (১৪ মার্চ) এই আহ্বানের পর পাল্টা জবাবে গণতন্ত্রপন্থিদের রক্তে রাজপথ লাল করে দিয়েছে ক্ষমতালুলুপ সেনাবাহিনী। এ দিন দেশটিতে সেনা নিয়ন্ত্রিত পুলিশ বাহিনীর গুলিতে রাজপথে প্রাণ দিলেন অন্তত ৩৯ জন মানুষ। এর মধ্য দিয়ে মিয়নমারে গণতন্ত্র ফেরানোর চলমান আন্দোলনের ইতিহাসে রবিবার রেকর্ডভাঙা নৃশংস দিনে পরিণত হয়। এর আগে গত ৩ মার্চ একদিনেই প্রাণ দেন ৩৮ জন। গণতন্ত্রকে ভালোবেসে ও অভ্যুত্থানকে প্রত্যাখ্যান করে রাজপথে নেমে আসা লাখ লাখ মানুষের দেড় মাস ধরে চলা শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলনে সেনা নৃশংসতার বলি হয়েছেন অন্তত ১৩৫ জন। খবর ইরাবতী, গার্ডিয়ান, বিবিসি ও রয়টার্সের।

রবিবার ইয়াঙ্গুনে ২২জন, সাউথ ডগন উপশহরে ৩ জন, বাগো শহরে ১ নারী ও ১ কিশোর, কাচিন রাজ্যের পাকান শহরে ১ জন, দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরে ১ নারী নিহত হয়েছেন। অন্যান্য জায়গায় আরও ৯ বিক্ষোভকারী প্রাণ দিয়েছেন। এছাড়া এক পুলিশ সদস্যও নিহত হয়েছেন। রাজবন্দিদের অধিকার নিয়ে কাজ করে অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি)। এ সংস্থাটিই এসব তথ্য জানিয়েছে।

[caption id="attachment_271323" align="alignnone" width="788"] বিক্ষোভকারীদের আত্মরক্ষার চেষ্টা। ছবি: গার্ডিয়ান[/caption]

সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইয়াঙ্গুনের হ্লাইং থারিয়ার এলাকায় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেটেটের পাশাপাশি সরাসরি তাজা গুলি ছোঁড়ে। এতে অন্তত ২২ জন নিহত হন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। তাদের কারো কারো অবস্থা গুরুতর। নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলেই আশংকা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশের নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে বিক্ষোভকারীরা এ দিন লাঠি ও ছুরি নিয়ে রাজপথে নেমেছিলেন।

চীনের অনেকগুলো কারখানা রয়েছে হ্লাইং থারিয়ার এলাকায়। বিক্ষোভকারীরা সেগুলোতে হামলা চালাতে পারেন আশঙ্কায় সেখানে বেইজিংয়ের অনুরোধে সামরিক আইন জারি করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। বেইজিংয়ের তরফে খবরে বলা হয়, মানুষজন লোহার রড, কুড়াল ও পেট্রোল নিয়ে হামলা চালিয়েছে দশটি কারখানায়। বেশ কয়েকজন চীনা নাগরিক আহত হয়েছে। এছাড়া চীনা একটি রেস্তোরাঁতেও হামলা হয়েছে। চীন মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে সমর্থন দিচ্ছে বলে মনে করে বিক্ষোভকারীরা। বেইজিং সরকার অবশ্য এ ধরনের গুঞ্জন ‍অস্বীকার করেছে।

[caption id="attachment_271326" align="alignnone" width="942"] রাজপথে আগুন জ্বালিয়ে সেনাবাহিনীর ট্রাক প্রতিরোধের চেষ্টা। ছবি: গার্ডিয়ান[/caption]

রবিবার হ্লাইং থারিয়ার এলাকায় বিক্ষোভের ভিডিওতে নিরাপত্তা বাহিনীর মুখোমুখি হওয়ার সময় বিক্ষোভকারীদের অনেককে ঘরে বানানো ঢাল ধরে থাকতে ও হেলমেট পরিহিত অবস্থায় দেখা গেছে। সেখানে কালো ধোঁয়ার আস্তরণও দেখা গেছে। ওই এলাকার দুটি কারখানায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

চিকিৎসাকর্মীদের বরাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরাপত্তাবাহিনী রাবার বুলেট ও তাজা গুলি ছোড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শী একজন সাংবাদিক বলেন, ‘এটা ভয়ঙ্কর। আমি চোখের সামনে গুলি করে বিক্ষোভকারীদের হত্যা করতে দেখেছি। এমন নৃশংস দৃশ্য জীবনে ভুলতে পারব না।’

এক চিকিৎসাকর্মী বলেন, আমি চিকিৎসার দেওয়ার সময় চোখের সামনেই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আমি আরও দুজনকে হাসপাতালে পাঠাচ্ছিলাম। এই মুহূর্তে এটুকুই আমি বলতে পারি।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সারা দিন গুলির শব্দ শোনা গেছে। রাস্তায় সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া ট্রাকের টহল চলছে।

এক পুলিশ সদস্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটকে লিখেছেন, পুলিশ ভারি অস্ত্র ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে। পরে মুছে ফেলা টিকটক পোস্টে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, হ্লাইং থারিয়ারে কোনও দয়া দেখাবো না।

গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে মিয়ানমারে রাজনৈতিক সংকট শুরু হয়। অভ্যুত্থানের পর গ্রেফতার করা হয়েছে সু চিসহ তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) শীর্ষ নেতাদের। সেনাবাহিনীর অভিযোগ,গত নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতি করে জয় পেয়েছে এনএলডি। তবে এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। দেশটিতে বর্তমানে জান্তা শাসকদের বিরুদ্ধে টানা বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। তবে তাতে দমছেন না আন্দোলনকারীরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App