×

অর্থনীতি

দিনে দিনে বাড়ছে ঘাটতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২১, ০৮:৫২ এএম

দিনে দিনে বাড়ছে ঘাটতি

টাকা/ ফাইল

রাজস্ব ঘাটতি সাড়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা। রিটার্ন দেন না ৩৭ লাখ টিআইএনধারী।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে অর্থবছরের আট মাস চলে গেছে। এই সময়ে এনবিআর রাজস্ব আদায় করেছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এদিকে, অর্থবছরের আরো বাকি ৪ মাস। সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে এই সময়ে এনবিআরকে আদায় করতে হবে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এনবিআর আট মাসে যে পরিমাণে রাজস্ব আদায় করেছে তার থেকে বেশি আদায় করতে হবে শেষ চার মাসে। অর্থনীতির বিশ্লেকরা বলছেন, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন প্রায় অসম্ভব। বিশেষত, টিআইএনধারী নাগরিকদের অর্ধেকের বেশি যেখানে রিটার্ন দেন না। তাদের মতে, বড় রাজস্ব ঘাটতির মুখে পড়তে যাচ্ছে এনবিআর।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছরই বাজেটে করের আওতা বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও সুফল মিলে না কর আদায়ে। প্রতি বছর গৎবাঁধা একটা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এর পেছনে ছুটেন রাজস্ব কর্মকর্তারা। বছর শেষে কাটছাঁট লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ আয়কর দেন। ভারতে এই সংখ্যা ৪ শতাংশ, নেপালে ৬ শতাংশ। বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত বর্তমানে ১০ দশমিক ৫, যা বিশ্বে সর্বনিম্ন। প্রতিবারের মতো চলতি বছর বাজেটে অন্তত এক কোটি লোককে করের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। কিন্তু এবার বড় বাধা করোনা।

এনবিআরের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের টিআইএনধারীর সংখ্যা ৬১ লাখ ৭ হাজার ৫০২ জন। এর মধ্যে রিটার্ন জমা দেন ২৫ লাখ ৫৪ হাজার ৪৩ জন। অর্থাৎ রিটার্ন দেন না ৩৭ লাখ ২ হাজার ৫৯ জন। অথচ মোটা দাগে করযোগ্য আয় রয়েছে- এমন সব টিআইএনধারীর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক। আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ৩১ ধরনের কাজের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে ১২ ডিজিটের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নিতে হবে। এছাড়া সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশের প্রায় ৬৭ শতাংশ মানুষ করযোগ্য আয় থাকার পরও কর দেন না। এখানে অনেকে আছেন যারা কোটি টাকা আয় করলেও কর দেয়ার নজির তাদের নেই।

সূত্র আরো জানায়, প্রতি বছর বাজেটে চলতি বছরের মতো এনবিআরকে বিশাল অঙ্কের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। যদিও বছর শেষে কাটছাট করতে হয়। অনেক সময় সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন সম্ভব হয় না। এবারো এর ব্যতিক্রম হয়নি। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রথম ৮ মাসে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৯৬ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে এনবিআর আদায় করেছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রথম আট মাসে এনবিআরের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। বিগত ৫ বছর রাজস্ব আদায়ের গড় প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের বেশি থাকলেও চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি অর্ধেকেরও কম। ৮ মাসে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ০৫ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকার প্রতি বছরই এনবিআরকে উচ্চাবিলাসী একটা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়। অর্জন হোক না হোক এসব বিবেচনায় নেয়া হয় না। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- বর্তমানে অটোমেশনের কিছু কাজ হলেও আগে তা ছিল স্থবির। করের হার না বাড়িয়ে করজাল বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। সেই সঙ্গে যাদের করযোগ্য আয় রয়েছে তাদের চিহ্নিত করারও পরামর্শ তাদের।

এ বিষয়ে কথা হয় বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, নানা পরিকল্পনা নেয়া হলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেই। অটোমেশন থেকে শুরু করে নানা ধরনের পরিকল্পনা নেয়া হলেও কাজ হচ্ছে না। পুরনো পদ্ধিতেতেই চলছে এনবিআর। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে রাজস্ব প্রসাশসনে বড় ধরনের দুর্বলতা রয়েছে। এসব দুর্বলতা দূর করতে সংস্কার আনতে হবে। করদাতারা সহজে যাতে কর দিতে পারেন সেই ব্যবস্থা করতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- করদাতাদের কর পরিশোধের জন্য কোনো খরচ করতে হবে না, সে বিষয় এনবিআরকে নিশ্চিত করতে হবে। ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলেও তার গতি খুবই মন্থর। যার কারণে কাক্সিক্ষত রাজস্ব আহরণ করতে পারছে না এনবিআর।

সূত্র আরো জানায়, অর্থবছরের প্রথম আট মাসে আমদানি-রপ্তানিতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬২ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে আদায় হয়েছে ৪৬ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ আট মাসে আমদানি রপ্তানিতে রাজস্ব ঘাটতি ১৬ হাজার ২২১ কোটি টাকা। ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৭ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ৫৮ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ শুধু ভ্যাট আদায়ে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৯ কোটি টাকা। আয়করে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৬ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ৪৬ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ আয়করে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ের ৩টি খাতেই ঘাটতি বেড়ে চলছে। সবচেয়ে বেশি রাজস্ব ঘাটতি বাড়ছে ভ্যাটে। নতুন আইন করে নানা ধরনের প্রণোদনা দিয়েও ভ্যাটে কার্যকর সাফল্য আসছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের ভ্যাট বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য ড. আব্দুল মান্নান শিকদার ভোরের কাগজকে বলেন, ইএফডি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় জোর দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২ হাজার ইএফডি মেশিন ব্যবসায়ীদের মধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে। জুনের মধ্যে সারাদেশে ১০ হাজার ইএফডি মেশিন বসানোর প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া ভ্যাট বাস্তবায়ন বাড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান এনবিআরের এই কর্মকর্তা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App