×

সরকার

কারো কাছে হাত না পেতেই অবকাঠামো উন্নয়ন করবো: প্রধানমন্ত্রী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২১, ১২:৪৯ পিএম

কারো কাছে হাত না পেতেই অবকাঠামো উন্নয়ন করবো: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কারো কাছে হাত না পেতেই অবকাঠামো উন্নয়ন করবো: প্রধানমন্ত্রী

সোমবার গণভবন থেকে বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ভোরের কাগজ

কারো কাছে হাত পেতে বা ধার না করে নিজেরা নিজেদের অর্থায়নে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন করার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার (১৫ মার্চ) গণভবন থেকে বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি। অপরপ্রান্ত সচিবালয়য়ে বক্তব্য রাখেন- অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। অনুষ্ঠানে একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আজকে উন্নয়নশীল দেশ। জাতির পিতার যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে স্বল্পোন্নত দেশ রেখে গিয়েছিলেন। ২০১৫ সালে আমরা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০২১ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এখন আমাদেরকে নিজের পায়ে চলতে হবে। নিজেদের অর্থায়নে চলতে হবে। আমরা আমাদের দেশকে উন্নত করবো। এটাই আমাদের লক্ষ্য।‌ সেজন্য অনেক কাজ করার প্রয়োজন আছে।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে আমাদের জীবনযাত্রা সীমিত হয়ে পড়েছে। তারপরেও আমাদের রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈদেশিক রেমিটেন্স বৃদ্ধি পেয়েছে। খরচ কমে গিয়েছিল। আমরা চিন্তা করেছি এই রিজার্ভের টাকা দেশের উন্নয়নে কীভাবে ব্যয় করতে পারি। বারবার শুধু অন্যের কাছে হাত পেতে বা কারো কাছে থেকে ধার না করে নিজেদের অর্থায়নে কিভাবে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন করতে পারি। সেই সঙ্গে সঙ্গে যারা বিনিয়োগ করতে আসবে তারাও যেন সেখান থেকে অর্থ নিয়ে উন্নয়ন কাজ করতে পারে। এতে একদিকে দেশেরও লাভ হবে আবার অন্যদিকে আমাদের আত্মবিশ্বাসও জন্মাবে, আত্মমর্যাদাবোধ আসবে। আমরাও যে করতে পারি সেটা বিশ্বের কাছে দেখাতে পারব।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের রিজার্ভের ৬ মাস আমদানির টাকা রাখতে হবে। কেননা প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ বাংলাদেশ। দুর্যোগ-দুর্বিপাক বন্যা হতে পারে। এতে ফসল নষ্ট হতে পারে। সেজন্য খাদ্য ক্রয় বা অন্য প্রয়োজনে ৬ মাসের খরচের টাকা রেখে বাকি টাকা কিভাবে বিনিয়োগ করতে পারি সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে। আর সেজন্যই আমরাই নিজস্ব তহবিল গঠন করেছি।

পায়রা বন্দর এর উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চিন্তা করি আমাদের একটা বন্দর আরও প্রয়োজন। গভীর সমুদ্র বন্দর করতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা মংলা বন্দর চালু করেছি। যদিও বিএনপি আমলে সেটি বন্ধ করা হয়েছিল। আরেকটা বন্দর আমরা তৈরি করছি সেটা আরো উন্নত হবে সেটা হল মহেশখালী মাতারবাড়ি বন্দর। সেখানেও উন্নত বন্দর করা হচ্ছে। আর পায়রা বন্দরটা আমরা নিজেদের উদ্যোগেই করি। এ পায়রা বন্দর হলে আমাদের একটা সুবিধা আছে। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের কিছু সুবিধা রয়েছে। আমরা ভারত নেপাল ভুটান কে ইতোমধ্যে বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছি। ভবিষ্যতে আরও অনেক দেশ বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। আমরা গভীর সমুদ্র বন্দর করব পায়রা বন্দর কে ঘিরে। এতে আমাদের দেশ লাভবান হবে এবং আরও অনেক এগিয়ে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে অত্যন্ত আনন্দের দিন। এই প্রথম আমরা একটি বৈদেশিক মুদ্রা তহবিল করে আমরা নিজেদের ক্ষেত্রে নিজেরা অর্থায়নের একটা সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলাম।

এ সময় তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ ৭৫ এর ১৫ আগস্ট নিহত পরিবারের সদস্যদের স্মরণ করে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বাবা বেঁচে নেই। কিন্তু তিনি যে বাংলাদেশকে এত গভীরভাবে ভালোবাসতেন। বড় মেয়ে হিসেবে আমি সেটা অনুধাবন করতে পেরেছি। আর তাকে সবসময় সহযোগিতা করতেন আমার মা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। আজকে তারা যদি জানতে পারতেন যে বাংলাদেশ সত্যি এগিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়েছে, তাহলে তারা সবচেয়ে খুশি হতাম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা দেশের উন্নয়ন তখনই হবে দেশটাকে যদি কেউ চিনতে পারে, জানতে পারে, দেশের মানুষকে ভালবাসতে পারে এবং উন্নয়ন দেশটার জন্য যে অপরিহার্য সেটা যদি কারো চিন্তা চেতনায় থাকে তখনই দেশের উন্নতি সম্ভব। আমাদের সীমিত সম্পদ। ভৌগোলিক সীমানার তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি। এদেশে ধারাবাহিক গণতন্ত্র চলেনি। সামরিক শাসকরা সময় সময় কখনো দৃশ্যমান কখনো অদৃশ্যমান ভাবে এ রাষ্ট্রপরিচালনা করেছে। ক্ষমতা যখন যুদ্ধাপরাধী আর খুনিদের হাতে থাকে সেদেশের কখনো উন্নতি হওয়া সম্ভব না।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আমরা অনেকগুলি পদক্ষেপ নিয়েছি। যেটা জাতির পিতা করতে চেয়ে ছিলেন। আমাদের আশু করণীয় মধ্যমেয়াদি স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এভাবে যথাযথ পরিকল্পনা নিয়েই আমরা কাজ করেছি বলেই আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশ ছিল ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস বন্যার প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। একমাত্র আওয়ামী লীগ ছাড়া পচাত্তরের পর যারাই ক্ষমতায় ছিল তাদের প্রবণতায় ছিল বিদেশীদের কাছে হাত পেতে চলা, ভিক্ষা চাওয়া। নিজের টাকা দিয়ে চলতে হবে বা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হবে এই চিন্তাটাই তাদের ছিলনা এটা হলো বাস্তবতা। আওয়ামীলীগের চিন্তা হলো আত্মমর্যাদা নিয়ে চলতে হবে দেশকে উন্নত করতে হবে। আজকের বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে রোল মডেল। অনেকে অনেক সময় জিজ্ঞেস করেন উন্নয়নের ম্যাজিকটা কি। আমি তাদেরকে বলি ম্যাজিক কিছুই না, ম্যাজিক হচ্ছে দেশ প্রেম। দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ কর্তব্যবোধ। আমি আমার বাবার কাছ থেকে শিখেছি। দেশের মানুষকে দু পায়ে দাড় করিয়ে তাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা সেটাই হলো একমাত্র লক্ষ্য। কারো কাছে হাত পেতে চলব না, নিজের পায়ে দাঁড়াবো।

৮১ সালে দেশে ফেরার পরবর্তী বর্ণনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সব হারিয়ে বাংলাদেশে ছয় বছর পর্যন্ত আসতে দেওয়া হয়নি আমাকে। আওয়ামীলীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করার পর এক প্রকার জোর করে আমি দেশে ফিরে আসি। এমন সময় এমন জায়গায় ফিরে আসলাম তখন আমার বাবার মায়ের খুনিরা ছিল রাষ্ট্র ক্ষমতায়। জাতির পিতা যে সব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন তাদের অভিযোগ ছিল। কিন্তু আমার একটি লক্ষ্য ছিল যে উদ্দেশ্য নিয়ে জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করেছেন তা আমি পূরণ করব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App