×

মুক্তচিন্তা

বিএনপির ৭ মার্চ : ভ‚তের মুখে রাম নাম?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২১, ১২:৪৯ এএম

ভেবেছিলাম রাজনীতি ঘুরে দাঁড়ানো শিখেছে। বিএনপি মাঝে মাঝে ঝটিকা সফরের মতো রাস্তায় দু-একবার এলেও বাস্তবে নেই। আগুন-সন্ত্রাসের পর দলটির অবস্থা শোচনীয় হয়ে দাঁড়ায়। এমন এক পরিবেশ যাতে খাতায় আছে গোয়ালে নেই মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। তারা সবসময় বলেন, প্রশাসন আর বাহিনী ব্যবহার করে তাদের দমিয়ে রাখা হচ্ছে। কথা পুরোপুরি অসত্য বলা যাবে না। কিন্তু এটাও মানতে হবে আজ দেশে উন্নয়নের যে ধারা তার সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলে সে রাজনীতি মানুষ নেবে না। এখন লম্ফঝম্ফ বা মিছিল-মিটিংয়ের সময় নেই। এসব আর চলে না। চাই সুষ্ঠু-স্বাভাবিক সহজ রাজনীতি। আমরা ভেবেছিলাম বিএনপি বিষয়টা বুঝেছে। তাছাড়া এটাও তাদের অজানা নয় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার ব্যাপারে দল আসলে কিছুই করতে পারেনি। বরং বাজারে জোর গুজব তিনি নাকি সমঝোতার আবরণে বাইরে আছেন। মাঝে মাঝে এমন খবরও পাই খালেদা জিয়া তার নেতাদের সঙ্গে নাকি দেখা করতেও চান না। তিতিবিরক্ত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী যদি তা করেনও তা কি আসলেই অন্যায্য? যে দলের নেতারা শীর্ষ নেতাকে জেলে রেখে আয়েশে দিনযাপন করেন, মৌসুমি মাঠ গরম করেন, তাদের কথা শোনার দরকার কি তার? মিডিয়া লিখছে : আওয়ামী লীগের কোনো পুঁজি নেই, একটাই পুঁজি ৭ মার্চের ভাষণ। যে ভাষণে পুরো দেশ স্বাধীনতার ঘোষণা আশা করেছিল, তা আসেনি বঙ্গবন্ধুর ভাষণে। বঙ্গবন্ধু ও জিয়াউর রহমানের যার যার অবস্থান নির্ধারণ করবে ইতিহাস। কারো বানানো ইতিহাসে জিয়াকে ছোট আর বঙ্গবন্ধুকে বড় করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। যদিও মির্জা আব্বাস একবারের জন্যও বঙ্গবন্ধু বলেননি। তিনি মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান বলে সম্বোধন করেছেন। কিন্তু মিডিয়া তাদের নিজেদের ভয়ে বা অন্য কোনো কারণে তা না লিখে বঙ্গবন্ধু লিখেছে। এমন বাস্তবতায় বিএনপির ৭ মার্চ পালন ছিল কৌত‚হলের। আশা করেছিলাম এবার তারা তাদের অতীতের ভুল শুধরে নতুন কথা বলবেন। আর কে কী বলেছেন জানি না, তবে সামাজিক মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যাওয়া একটি ভিডিওতে মির্জা আব্বাস যা বলেছেন শুনলে সবাই বুঝবেন বিএনপি বদলায়নি। মির্জা আব্বাস একজন প্রবীণ নেতা। মন্ত্রিত্ব, মেয়র সবই ছিল তার দখলে। বিএনপির এই কঠিন সময়ে তার এই বক্তৃতা নিঃসন্দেহে নিন্দাজনক। মির্জা আব্বাস বলেছেন, ৭ মার্চের জনসভায় তিনি উপস্থিত ছিলেন। শুধু তাই নয়, এলাকা থেকে লোকজন নিয়ে গিয়েছিলেন জনসভায় যোগ দিতে। তার ভাষ্যমতে মঞ্চে জায়গা না পেলেও ছিলেন মঞ্চের নিচে মাইকের গোড়ায়। এই বক্তব্য থেকে এটা প্রমাণিত মির্জা আব্বাস আওয়ামী লীগের ডাকে জাতির জনকের সেই ভাষণ শুনতেই রেসকোর্সে গিয়েছিলেন। তাও মিছিল নিয়ে। তো জনাব আপনি কেন গেলেন সে দিন? কেন গেলেন না আপনার নেতা জিয়াউর রহমানের ডাকে? তিনি তখন কোথায় ছিলেন মির্জা সাহেব? তার জন্য এত টান, এত পেয়ার কেন ছুটে গেলেন না চট্টগ্রামে? জনাব আব্বাস আপনি ভুলে গেছেন তখন বাংলার আকাশে জ্বলজ্বলে রাজনৈতিক তারা নূরে আলম সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, আবদুল কুদ্দুস মাখন। সে মঞ্চে ছিলেন তোফায়েল আহমেদের মতো নেতারা। আপনি সেখানে বেমানান। উটকো এক ছোকরা মাত্র। আপনি তো নিচেই থাকার কথা জনাব। মির্জা আব্বাস আরো বলেছেন, ভাষণজুড়ে নাকি বঙ্গবন্ধু তার ভাষায় মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি কাঠামোয় কীভাবে প্রধানমন্ত্রী হয়ে থাকা যায় তার ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। এসব বধির মানুষজনকে কে মনে করিয়ে দেবে সব? মির্জা আব্বাস যখন এই বিকৃত বক্তব্য রাখছিলেন তখনও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বাজছিল ৭ মার্চের অমর ভাষণ। কান পাতলেই শুনতে পারতেন নেতা গর্জন করে বলছেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, আমি এদেশের মানুষের অধিকার চাই’। বধির মির্জা আব্বাসরা তা শোনেন না বা শুনলেও ভুলে যান। মির্জা আব্বাস বলছেন, এই ভাষণে যদি কিছু থাকে তো তার চেয়ে বেশি কিছু আছে ২৭ মার্চে তখনকার মেজর জিয়াউর রহমানের ঘোষণায়, কিন্তু সেটা কী? তা কিন্তু পরিষ্কার করতে পারেননি। বরং এক পা এগিয়ে বললেন, আওয়ামী লীগ যদি ২৭ মার্চের ঘোষণা না মানে তো তারাও নাকি ৭ মার্চ মানবেন না। তা জনাব কে আপনাদের মানতে বলেছে? আপনারা কি মানেন আর না মানেন তার ওপর যদি এদেশের মানুষের বিশ্বাস থাকত কিংবা আস্থা থাকত আজ রক্তমাখা কেক কাটা বন্ধ হতো না। আজো আপনারা যেসব বিষয়ে দেশ-জাতি একমত হলে রাজনীতি সুগম হতো, তাতে সায় দিতে নারাজ। মাঝখানে মাঠে না থাকা বিএনপির জন্য যদি একটু দরদও থাকে কারো এমন কথা শুনতে থাকলে অচিরেই তা লোপ পাবে। এটা এখন বুঝা সম্ভব কেন আপনারা বাপে তাড়ানো মায়ে খেদানো একটি দলের নেতায় পরিণত হয়েছেন। আপনি বলছেন ৭ মার্চ ছাড়া আওয়ামী লীগের কোনো পুঁজি নেই। কান খুলে শুনুন সরকারি দল সম্পর্কে এখন না আছে কোনো উচ্চাশা বা না কোনো ভালোবাসার পাহাড়। কিন্তু সত্য এইÑ আওয়ামী লীগের যা আছে তা আপনারা এই জীবনে না, কোনো জীবনেও অর্জন করতে পারবেন না। স্বাধীনতা, মার্চ, ১৪ এপ্রিলের মুজিবনগর সরকার, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ সবই তাদের। যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কি আপনাদের নেতা ছিলেন, না কর্নেল ওসমানী? ১৬ ডিসেম্বরে বিজয় দিবসে স্বাধীনতার কথিত ঘোষক কোথায় ছিলেন জনাব? মোদ্দা কথায়, একাত্তরজুড়ে আপনারা কোথাও নেই। তাই এই আস্ফালন, এসব আহাজারি। মায়া কান্না আর ইতিহাস বিকৃতি গেল না আপনাদের। মির্জা আব্বাস, আপনি প্রমাণ করলেন কোনো কোনো লেজ ১২ বছর চোঙ্গায় রাখলেও সোজা হয় না। ১২ বছর নির্বাসনে থাকার পর সে কথাই প্রমাণ করল বিএনপির ৭ মার্চ। হায়রে রাজনীতি। অজয় দাশগুপ্ত : কলাম লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App