×

পুরনো খবর

দখল এবং দূষণমুক্ত নদী

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২১, ১২:২২ এএম

নদীমাতৃক দেশে নদীর অস্তিত্ব আজ সংকটে। মানুষের লোভ আর অসচেতনতার প্রভাবে প্রমত্তা নদীগুলো আজ মরতে বসেছে। আর এর প্রভাব পড়ছে আমাদের জলবায়ুতে। বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকের নেই বর্জ্য শোধনাগার। সেই বর্জ্য যাচ্ছে নদীতে। সম্প্রতি প্রকাশিত জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকার চার নদীতে প্রতিদিন ৬০ হাজার কিউবিক মিটার বর্জ্য সরাসরি মিশছে। এসব বর্জ্যরে মধ্যে রয়েছে টেক্সটাইল, ডাইং, প্রিন্টিং ও ওষুধ শিল্প কালকারখানা বর্জ্য। এর প্রভাব মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। শুকনো মৌসুমে অবস্থা আরো প্রকট হয়। অথচ নদীগুলো বর্জ্য ফেলার কোনো ভাগাড় হতে পারে না। নদী থাকবে নদীর স্বাভাবিক গতিতে। আর নদীকে ঘিরে কর্মচঞ্চল থাকবে অর্থনীতি। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু দখল থেমে থাকে না। দেশের বহু নদীর তীর দখল করে প্রভাবশালীরা তাদের ব্যবসা, বহুতল ভবন বানিয়ে রেখেছে। বালি ফেলে ভরাট করতে করতে নদীর অস্তিত্ব হারিয়ে যেতে বসেছে। সেসব দখলকারীর দখলকৃত স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ধরে রাখতে হবে। কারণ এসব নদ-নদীই দেশের প্রাণ। আর দেশের প্রাণ মানে দেশের মানুষের প্রাণ। মাদকের মতো এসব দখলকারীর বিরুদ্ধেও জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। যে কোনোভাবেই এসব দখলকারী প্রভাবশালীর হাত থেকে সম্পূর্ণভাবে নদী মুক্ত করতে হবে। নদীর সঙ্গে আমাদের জীবনধারার সুখ-দুঃখ জড়িত। আবহমানকাল ধরেই এ উপমহাদেশের নদীর সঙ্গে জীবন জড়িত। নদীকে কেন্দ্র করে যুগে যুগে রচিত হয়েছে কালজয়ী সব গান। বারবার লেখক-কবির লেখায় স্থান পেয়েছে নদী। রচিত হয়েছে নদী ও নদীপারের মানুষের জীবন সংগ্রাম নিয়ে পদ্মা নদীর মাঝির মতো কালজয়ী উপন্যাস। কিন্তু দখল, দূষণ, কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবসহ নানা কারণে নদীমাতৃক দেশের আজ করুণ অবস্থা। নদীর দেশ বাংলাদেশের আজ নদীমাতৃক পরিচয়টাই হারিয়ে যেতে বসেছে। আমরা ক্রমেই মরুভূমির দেশের বৈশিষ্ট্যে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সাম্প্রতিক আবহাওয়া পরিবর্তন সেদিকের ইঙ্গিত বহন করে। বিশেষজ্ঞদের মতে দেশের অভ্যন্তরে বহমান নদ-নদী ও খালগুলো সুরক্ষায় কোনো পরিকল্পনা না থাকায় নদীর ইতিহাস-ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। নদ-নদী খনন না করায় দেশের প্রধান নদীগুলোর অবস্থা মৃতপ্রায়। সেসব নদীর স্থলে এখন ফসলের আবাদ অথবা মাঠের পর মাঠ ধু-ধু বালি। বর্ষায় যদিও নদীর অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়। নদীগুলো যেন প্রাণ ফিরে পায়। তবে সেই অবস্থা খুব অল্প সময়ই থাকে। শুকনো মৌসুম শুরুতেই নদী যৌবন হারিয়ে ফেলে। বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে অনেক নদী। আরো নদী এখন মৃতপ্রায়। এভাবে একের পর এক নদী দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। হয়তো একদিন অনেক নদীর নাম কেবল বইয়ের পাতায় থেকে যাবে। যেভাবে হারিয়ে গেছে ২১ হাজার কিলোমিটার নৌপথ। প্রতি বছর নদীগুলো বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ১.২ বিলিয়ন টন পলি বহন করে নিয়ে যায়। এই পলি নদীর তলদেশ ভরাট করে ফেলে। নদ-নদী মানুষ ছাড়াও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বহু প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল রয়েছে নদীতে। নদী তার আপন সৌন্দর্য হারানোর সঙ্গে সঙ্গে এসব প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল বিলুপ্ত হচ্ছে। এসব কিছু প্রভাব ফেলছে জীববৈচিত্র্যে। একের পর এক নদী শুকিয়ে যাওয়ার ফলে এর সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের জীবনধারণে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। যেসব নদী এখনো কোনোরকমে মানুষের অত্যাচারের ফলেও টিকে রয়েছে সেসব পলি পড়ার ফলে তলদেশ ভরাট হয়ে আছে। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই দুকূল ভাসিয়ে সময়ে-অসময়ে বন্যা হয়ে দুকূল ভাসিয়ে দিচ্ছে। আবার অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে প্রতিনিয়তই সৃষ্টি হচ্ছে ভাঙনের। এসব ভাঙনে হাজার হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়াচ্ছে। দেশে বাড়ছে উদ্বাস্তু ও ভবঘুরে বেকার মানুষের সংখ্যা। মোটকথা নদীমাতৃক এই দেশে নদীর সঙ্গে আমাদের অস্তিত্ব ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এভাবে নদী যদি তার স্বাভাবিক গতিপথ হারায় তার বিরূপ প্রভাব আমাদের ওপরই পড়বে। তাই নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থেই নদীগুলো টিকিয়ে রাখা জরুরি। নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের আরো কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। যদি নদীগুলো এভাবে তাদের অস্তিত্ব হারাতে থাকে তাহলে অচিরেই পরিবেশের ভারসাম্য মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে। যা আমাদের চিরায়ত জলবায়ুর বিরুদ্ধে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। আর এসব কারণেই দেশের নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থেকে দখলমুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি নদীকে দূষণমুক্ত রাখার দায়িত্বও আমাদের। এ কাজে সাধারণ মানুষ কর্তৃপক্ষের পাশে থাকবে।

অলোক আচার্য  : শিক্ষক ও লেখক।

[email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App