×

পুরনো খবর

গেরিলাযোদ্ধা থেকে অভিনেতা আসাদ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২১, ১২:৪৫ এএম

গেরিলাযোদ্ধা থেকে অভিনেতা আসাদ

কখনো ‘লালন’, কখনো ‘খ্রিস্টান পাদ্রী’, আবার কখনো বা প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সব হারানো ‘দুখাই’। এমন সব বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অসাধারণ অভিনয়ের মাধ্যমে সিনেমাপ্রেমীদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন রাইসুল ইসলাম আসাদ। বেতার, মঞ্চ, টিভি নাটক কিংবা চলচ্চিত্রÑ অভিনয়ের সব সংস্করণেই পড়েছে তার পদচিহ্ন। কাজ করেছেন ঢাকা কিংবা কলকাতার বিভিন্ন গুণী নির্মাতার সঙ্গে। সম্প্রতি কিংবদন্তি এই অভিনেতা যুক্ত হয়েছেন মুম্বাইয়ের প্রখ্যাত নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত ‘বঙ্গবন্ধু’ বায়োপিকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী অবলম্বনে নির্মিত হচ্ছে চলচ্চিত্রটি। এতে বর্ষীয়ান অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদকে দেখা যাবে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর চরিত্রে। ইতোমধ্যে মুম্বাইয়ের ফিল্ম সিটিতে চলা ‘বঙ্গবন্ধু’ বায়োপিকের শুটিংয়ে দুই দফায় অংশগ্রহণ করেছেন আসাদ। শেষ করেছেন প্রথম লটে তার অভিনয়। ফের বাংলাদেশে বায়োপিকটির শুটিং শুরু হলে যোগ দেবেন তিনি। ‘বঙ্গবন্ধু’ বায়োপিকে কাজ করা প্রসঙ্গে রাইসুল ইসলাম আসাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কাজ করছি। শুটিং অভিজ্ঞতা খুবই ভালো। তবে চলচ্চিত্রটি সম্পর্কে এখনই কিছু বলতে চাই না আমি। আগে কাজ শেষ হোক। দর্শক চলচ্চিত্রটি দেখুক। তারপর মন্তব্য করা যাবে।’ অন্যদিকে এ বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে বাংলাদেশ। দেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামের সঙ্গেও প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছে রাইসুল ইসলাম আসাদের নাম। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। গেরিলাযোদ্ধা হিসেবে লড়াই করেন দেশের স্বাধীনতার জন্য। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের কথা স্মরণ করে রাইসুল ইসলাম আসাদ বলেন, ‘১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরুর আগের সময়ে পল্টনের বাসায় ছিলাম। পুরানা পল্টন লাইনে আমাদের বাড়ি। বয়স তখন ১৮। আমি, বাচ্চু (নাসির উদ্দীন ইউসুফ) একসঙ্গেই ছিলাম। পাশাপাশি বাড়ি আমাদের। ২৫ মার্চ রাতে হঠাৎ গুলির শব্দ শুনতে পাই। তখন বাড়িঘর কম ছিল এদিকে। বুঝতে অসুবিধা হয় না, রাজারবাগ পুলিশ লাইনের দিক থেকেই গুলির শব্দ আসছে। আমরা দেখার জন্য এগিয়ে যাই। জানতে পারি, পাকিস্তান আর্মি অ্যাটাক করেছে। তারপর আরো গুলি চলে। চারপাশে শুধু গুলি আর গুলি। সারারাত গুলির শব্দ। কাছ থেকে না শুনলে কেউ বুঝতে পারবে না, কী ভয়াবহ ছিল সেই শব্দ! এরপর চিৎকার ভেসে আসে। নির্ঘুম রাত কাটে আমাদের।’ যোগ করে তিনি বলেন, ‘২৫ মার্চ রাতের হামলায় অনেক মানুষ মারা যায়। কী ভয়াবহ আক্রমণ তারা করেছিল! কী জঘন্য হামলা তারা চালিয়েছিল! ইতিহাস সাক্ষী। আমরাও সাক্ষী। মনের ভেতর ভীষণ জেদ চাপে রক্তের বিনিময়ে রক্ত দিয়েই এ দেশকে শত্রুমুক্ত করতে হবে।’ কিংবদন্তি অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদের জন্ম ১৯৫২ সালের ১৫ জুলাই, ঢাকায়। ছিলেন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। ১৯৭৯ সালের ৯ নভেম্বর তাহিরা দিল আফরোজের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন আসাদ। তাদের একমাত্র কন্যার নাম রুবায়না জামান। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন এই গেরিলাযোদ্ধা ও অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ। তিনি বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় পুরস্কার পাচ্ছি, এটা তো বড় পাওয়া। দেশ স্বাধীন হয়েছিল বলেই অভিনেতা হতে পেরেছি। এর আগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি।’ উল্লেখ্য, চলচ্চিত্রে গৌরবদীপ্ত অবদানের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে ৬ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন রাইসুল ইসলাম আসাদ। ২০২২ সালে চলচ্চিত্র অভিনয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবেন এ কীর্তিমান অভিনেতা। এরই মধ্যে তিনি অভিনয় করেছেন অসংখ্য চলচ্চিত্রে। উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘আবার তোরা মানুষ হ’, ‘ঘুড্ডি’, ‘অন্য জীবন’, ‘দুখাই’, ‘লালসালু’, ‘কিত্তনখোলা’, ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, ‘লালন’, ‘উত্তরা’, ‘দূরত্ব’ প্রভৃতি। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে রাইসুল ইসলাম আসাদের কাজ করা ‘মিশন এক্সট্রিম’, ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ও ‘আদম’ চলচ্চিত্রগুলো রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়। :: মেলা প্রতিবেদক

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App