×

জাতীয়

‘বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র শিক্ষা নিতে পারে’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২১, ১২:৩৯ পিএম

‘বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র শিক্ষা নিতে পারে’

ফাইল ছবি

নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র শিক্ষা নিতে পারে বলে । নিকোলাস ক্রিস্টোফের লেখা ‘হোট ক্যান বাইডেন’স প্ল্যান ডু ফর পোভার্টি? লুক টু বাংলাদেশ’ শিরোনামে এ প্রতিবেদনটি বুধবার প্রকাশিত হয়েছে।

এতে বলা হয়, সবচেয়ে অব্যবহৃত সম্পদ বাংলাদেশ তার দরিদ্রদের পেছনে বিনিয়োগ করেছে। এক্ষেত্রে বেশি নজরে পড়েছেন সবচেয়ে প্রান্তিকরা ও অনুৎপাদনশীলরা। এখান থেকেই সবচেয়ে বেশি রিটার্ন আসতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও একই কথা সত্য হতে পারে। বিলিয়নিয়ারদের কাছ থেকে আমরা আমাদের অধিক পরিমাণ উৎপাদনশীলতা কমিয়ে আনতে যাচ্ছি না।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে সাতটি শিশুর মধ্যে একজন শিশু, যদি আমরা যারা অর্থের অভাবে হাইস্কুলের গ্র্যাজুয়েট সম্পন্ন করতে পারে না, তাদের সাহায্য করতে পারি, তাহলে ব্যাপক সুবিধা পাবো।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এ কারণেই শিশুদের দারিদ্র্য দূর করার উদ্যোগ নিয়েছেন জো বাইডেন। হয়তো সেটা তিনি পারবেন। এজন্যই এটা কেন্দ্রীয় ইস্যু হয়ে উঠেছে। স্থায়ীভাবে সৃষ্টি করা উচিত রিফান্ডেবল চাইল্ড ট্যাক্স ক্রেডিট।

বাংলাদেশ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, প্রান্তিক পর্যায়ে থাকা শিশুদের পেছনে বিনিয়োগ শুধুই সহানুভূতি জানানো নয়, একই সঙ্গে মাথা তুলে দাঁড়াতে সাহায্য করে তা জাতিকে ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইতিহাসে এ দেশটি সব থেকে ধনী ও সবচেয়ে শক্তিধর, যা যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে কলঙ্কিত একটি বিষয়। তা সত্ত্বেও শিশুদের দারিদ্র্যের লেভেল এখানে আশ্চর্যজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।

বুধবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ১.৯ ট্রিলিয়ন ডলারের রেসকিউ প্ল্যান চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সেই কলঙ্ক মুছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা শিশু দারিদ্র্য দ্রুত হ্রাস করবে।

কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষণায় বলা হয়েছে, শিশু দারিদ্র্য অর্ধেক কমে যেতে পারে যদি এসব পদক্ষেপ স্থায়ী হয়।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট প্রবীণ নাগরিকদের জন্য সোশ্যাল সিকিউরিটির মাধ্যমে যেমনটা করেছিলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার সঙ্গে সাদৃশ্য রেখেই ঘটাতে পারেন শিশুদের উন্নতি।

এটি বিপ্লব ও মার্কিন নীতির প্রতিনিধিত্ব করে বিলম্বে স্বীকার করে নেওয়া হয় যে, দরিদ্র শিশুদের জন্য অর্থ বিনিয়োগের দায়িত্ব আছে সমাজের সবার।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ৫০ বছর আগে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল গণহত্যা, অশান্ত অবস্থা ও দুর্ভিক্ষের মধ্য দিয়ে ।

যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক হেনরি কিসিঞ্জার  ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ সব ছবি দেখে তখনকার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। তার এ উক্তি ব্যাপকভাবে আলোচিত-সমালোচিত হয়।

তিনি আসলে দেশটির তখনকার আশাহীনতাকে বোঝাতে চেয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে একটি ঘূর্ণিঝড়ে এক লাখ মানুষ মারা যান কমপক্ষে।

ওই পরিস্থিতি কভার করে আমি একটি হতাশাজনক লেখা লিখেছিলাম দ্য টাইমসে। তাতে বলেছিলাম, দেশটি দুর্ভাগা প্রথমত । আমি সঠিক ছিলাম এ জন্য যে, শুধু জলবায়ু পরিবর্তন নয়, বাংলাদেশকে বিপুল পরিমাণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে।

কিন্তু সর্বোতভাবে আমার সেইসব হতাশা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তারপর থেকে প্রায় তিন দশক ধরে বাংলাদেশ ব্যতিক্রমী অগ্রগতি অর্জন করেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার অবিচ্ছিন্নভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের মতে, করোনা মহামারির আগের চার বছর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রতিবছরে বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৭ থেকে ৮ ভাগ। এটা ছিল চীনের চেয়েও দ্রুত গতির প্রবৃদ্ধি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের গড় আয়ুষ্কাল ৭২ বছর এখন । মিসিসিপির ১০টি কাউন্টিসহ যুক্তরাষ্ট্রের অল্প কয়েকটি জায়গার চেয়ে বাংলাদেশের গড় আয়ুষ্কাল বেশি এখন।

একসময় বাংলাদেশ হয়তো হতাশার রূপ ধারণ করেছিল। কিন্তু কীভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করতে হয়, তা বিশ্বকে শিখাতে যথেষ্ট কিছু আছে বাংলাদেশের কাছে।

বাংলাদেশের কী এই গোপন রহস্য? এর উত্তর হলো বালিকা ও শিক্ষা। এক-তৃতীয়াংশেরও কম বাংলাদেশি আশি দশকের শুরুতে স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করতেন।

বিশেষ করে বিরল ছিল মেয়েদের শিক্ষা। অর্থনীতিতে উপেক্ষিত ছিল তাদের অবদান। তারপর নারীদের শিক্ষাসহ শিক্ষাকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ নেয় সরকার ও নাগরিক সংগঠনগুলো।

বর্তমানে শতকরা ৯৮ ভাগ বাংলাদেশি শিশু স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে। বিস্ময়কর খবর হলো-এখানে লিঙ্গবৈষম্য আছে ঐতিহাসিকভাবে। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের হাইস্কুলগুলোতে এখন ছেলেদের তুলনায় মেয়ের সংখ্যা বেশি।

বাংলাদেশে এবং বিশ্বের অন্যান্য স্থানে ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা প্রফেসর ড. মুহম্মদ ইউনূস শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রথম বাংলাদেশি। তিনি আমাকে বলেছেন, বাংলাদেশে নারীদের মর্যাদার পরিবর্তন সবচেয়ে নাটকীয়ভাবে ঘটেছে।

সবচেয়ে দরিদ্র নারীদের থেকে এর শুরু হয়েছে । গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছেন ড. মুহম্মদ ইউনূস। যা নারীদেরকে উদ্যোক্তা হিসাবে গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে।

বাংলাদেশ যেহেতু  শিক্ষিত ও ক্ষমতাবান করেছে নারীদের, এতে ওইসব নারী বাংলাদেশের অর্থনীতির স্তম্ভ হয়ে উঠেছেন। নারীদের উন্নত সুবিধা দিয়েছে দেশটির গার্মেন্ট কারখানাগুলো।

আপনি যে শার্ট পরছেন, তা হয়তো তাদের কেউ একজন বানিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে চীনের পরেই বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তৈরি পোশাকের রপ্তানিকারক এখন বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশকে একটি উৎসাহমূলক কাহিনি হিসাবে উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক দারিদ্র্য হ্রাসে। এ দেশটি ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে তুলে আনতে পেরেছে ১৫ বছরে।

১৯৯১ সাল থেকে প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে শিশুদের অপুষ্টিতে ভোগার হার । বর্তমানে এই হার ভারতের চেয়েও কম।

 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App