×

জাতীয়

টিকায় মেলে না শতভাগ সুরক্ষা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২১, ০৮:২৫ এএম

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টিকা নেয়ার পরও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, স্পেন, ভারত, নরওয়ে, বেলজিয়াম, পেরুসহ কয়েকটি দেশে এমন ঘটনা ঘটেছে। টিকা নেয়ার পরও বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবারই টিকা নেয়ার পর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল। টিকা নেয়ার মাসখানেক পর গতকাল করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। তিনি ১০ ফেব্রুয়ারি করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়েছিলেন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়লে ৮ মার্চ ইউনাইটেড হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে ভর্তি হন তিনি।

এখন অনেকের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, টিকা কি তাহলে সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্য নয়? সুরক্ষা যদি নাই মিলে তাহলে কেন টিকা নেবে মানুষ? এদিকে টিকা নিয়ে এখনো মানুষের মনে সংশয় রয়েছে। টিকা কার্যক্রম শুরুর আগে থেকেই বিশেষজ্ঞরা টিকা নেয়ার পাশাপাশি মাস্ক পরা, সাবান পানি দিয়ে ঘনঘন হাত ধোয়া, জনসমাগম এড়িয়ে চলার মতো স্বাস্থ্যবিধিগুলো মানার ওপর জোর দিয়ে আসছেন। তারা বলছেন, বিশ্বজুড়ে অনুমোদিত টিকাগুলো বেশ কার্যকর হলেও করোনার মূল জীবাণুর বিরুদ্ধে সেগুলো শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারবে না। টিকা মারাত্মক সংক্রমণ ও মৃত্যু কমাবে। টিকা নেয়ার পর সংক্রমিত হওয়ার অর্থ এই নয়, ওই টিকা অকার্যকর। ব্যক্তি যদি সচেতনভাবে জীবনযাপন না করেন তাহলে পুনরায় সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। অন্যান্য শারীরিক সমস্যা বা কো-মরবিডিটিতে আক্রান্তদের থাকবে মৃত্যুঝুঁকিও। কারণ কোনো টিকাই শতভাগ সুরক্ষা নিশ্চিত করেনি। তাই সামান্য অসতর্কতায় ঘটতে পারে চূড়ান্ত বিপদ।

এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও করোনা প্রতিরোধে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, টিকা নেয়ার পর পরই তা কাজ শুরু করবে তেমনটা কিন্তু নয়। শরীরে করোনার জীবাণু প্রবেশের পর যদি তারা টিকা নেন, তাহলে সেটি কাজ নাও করতে পারে। কারণ ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশের পর এর শক্তিকাল ১৫ দিন। তার আগেই তারা আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। টিকার বুস্টিং ডোজ বা দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে। তবে কারো যদি অন্য শারীরিক সমস্যা বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে, তাহলে তিনি আবারো আক্রান্ত হতে পারেন। তবে সে সংখ্যা খুবই কম। সংখ্যাটি ১০ হাজারে একজন হতে পারে। এই বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে করোনা থেকে সুরক্ষার একমাত্র হাতিয়ার টিকা নয়।

টিকা নেয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও করোনার জাতীয় টিকা বিতরণ সংক্রান্ত কোর কমিটির সদস্য ডা. এ এস এম আলমগীর।

তিনি বলেন, টিকা নেয়ার পরও পৃথিবীর বহু দেশে অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। টিকা নিলে কেউ করোনায় আক্রান্ত হবেন না, এমন কোনো নিশ্চয়তা কিন্তু বিজ্ঞানীরা দেননি। টিকা নেয়ার সময় যদি কেউ করোনা ভাইরাসে আগে থেকেই আক্রান্ত হয়ে ইনকিউবেশন পিরিয়ডে থাকেন, তবে তিনিও সংক্রমিত হতে পারেন। ইনকিউবেশন পিরিয়ড দুই থেকে ২১ দিন হতে পারে। আবার প্রথম ডোজ দেয়ার ১৪ থেকে ২১ দিন পর শরীরে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি হয়। এটি তৈরি হলেও করোনার সংক্রমণ হতে পারে।

তবে কেন মানুষ টিকা নেবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, টিকা নিয়ে শরীরে এন্টিবডি তৈরি হওয়ার পর করোনা আক্রান্ত হলে সেই সংক্রমণ হবে মৃদু। মৃত্যুঝুঁকিও কমাবে। আমাদের মনে রাখতে হবে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকা একটি অন্যতম পন্থা। একমাত্র পন্থা নয়। মাস্ক ব্যবহার এবং স্বাস্থ্যবিধি আমাদের মানতেই হবে। কারণ এর কোনো বিকল্প নেই।

টিকা নেয়ার পরও ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারেন কিনা- এমন প্রশ্নে বিদেশি একটি গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে ব্রিটেনের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট ড. জুলিয়ান ট্যাং বলেছেন, আমাদের হাতে যেসব উপাত্ত আছে তা থেকে দেখা যায়, কিছু মানুষ টিকা নেয়ার পরও সংক্রমিত হতে পারেন। টিকা নেয়ার পরের দিন বা এক সপ্তাহ পর যদি ভাইরাস ব্যক্তির দেহে ঢুকে, তাহলেও ওই ব্যক্তি সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ে যাবেন এবং অন্যদের সংক্রমিত করবেন। তবে যারা টিকা একেবারেই নেননি তাদের তুলনায় টিকা নেয়া ব্যক্তিরা কম অসুস্থ হবেন এবং তাদের দেহে ভাইরাসের মাত্রাও থাকবে অনেক কম। ব্যক্তি যে ধরনের টিকাই নিন না কেনো বেশির ভাগ টিকার ক্ষেত্রে প্রথম ডোজ নেয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর সেটি কাজ করতে শুরু করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App