কবিতা
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২১, ১২:৩৯ এএম
শীতের সান্ত¡না শেষে : শ্যামল কান্তি দত্ত
বাউলের গেরুয়া পোশাক ছিন্ন করে
হলুদ মাঠের বিষণœ বুক শুয়ে আছে
হেমন্ত পালিয়ে গেছে কৃষকের ঘরে।
নগ্ন বাউল তাই লজ্জায় নত মুখ
শীতের কুয়াশা কাপড় পরায়
গেয়ো বিধবা নারীর ঢেকে যায় বুক।
ঢেঁকি পাড়ে পাছা দোলে তালে তালে
শিবের গীতের সাথে নারীর শরীর
শীতের চুমোতে তবু কাঁপে থির থির।
সংসার বিরাগী বাউলের অকাল-মৃত্যু
ধারণারা শ্মশানের ধোঁয়ায় কুÐলী
কামনার ফুলকপি হয়ে যেন ওড়ে
শীতের সান্ত¦না শেষে
হৃদয়ের পাতা ঝরে ঝরে ফুল-কলি।
মায়া সমুদ্র ও জলের আকাশ : আরিফ নজরুল
কাঞ্চন জংঘা রূপের ঝলক মায়া সমুদ্র ঢেউ
যে তুমি শরীর বোঝো, মন বোঝনি
মন বুঝলে নদীও বুঝতে, বুঝতে পালকের পরশ
প্রেম-প্রকৃতি-নারী-নদীর করতান
বুঝতে চলে গেল কত বসন্ত!
সিঁদুররাঙা বিকেল মাথা রাখে জোনাকি সন্ধ্যা বুকে
জল-থেরাপি কফির পেয়ালায় হৃদয়
আমাকে দ্যাখে, যেন আমি পারিজাত গুচ্ছ
বসে আছি রানি ভবানির মুখোমুখি
কান্তজির কালের পুরাণ।
বৃষ্টি বিলাস শুভ্র কাঞ্চন জোড়া বক উড়ে গেল
ঝাউ ও নারিকেল পাতার গান শুনে
পাখিকণ্ঠে কবিতা শুনে সাঁতরাই জল আকাশে
নদী ও নারীর কাছে উড়তে শিখি
মায়া সমুদ্র চোখ কি যেন বলে!
চলো দুজনেই চাষ দেই কবিতা ভ‚মি।
উষ্ণতার অপেক্ষায় : আফরোজা লীনা
এখানে হাঁসের দলে সন্ধ্যা নামে।
নেতিয়ে পড়ে একে একে লজ্জাবতীর পাতারা,
ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়ে মসুর-মটোর-অড়হরের ক্ষেত।
আবছা আবীরে ঢেকে যায় সান্ধ্যকালীন আকাশ,
মসজিদে-মন্দিরে-গির্জা-প্যাগোডায় প্রতিধ্বনিত হয় প্রার্থনার আহŸান।
এখানে ফোঁটা ফোঁটা কুয়াশা জমে দূর্বাঘাসে, ধানের শীষে, মরা গাছের ডালে পাতা মাকড়সার জালে।
আধফালি চাঁদকে কেন্দ্র করে ব্যাসার্ধ গড়ে তোলে ঘোলাটে মেঘের দল।
সন্ধ্যা নামে কুঁড়েঘরের চালে বেড়ে ওঠা কচি লাউপাতায়, শিমের মাচায়, বাবুইয়ের শৈল্পিক নীড়ে।
এখানে সন্ধ্যা নামে ধুপের গন্ধ্যে, বালিকার নূপুরের ছন্দে, কিশোর-কিশোরীর অভিমানী দ্ব›েদ্ব।
এখানে এখন কেবলই শীতলতা।
বড্ডো অভাব উষ্ণতার,
এখানে এখন সান্ধ্যকালীন নিস্তব্ধতা,
আর
নির্ঘুম জেগে থাকা
উষ্ণতার অপেক্ষায়।
ফাল্গুনী চাঁদ : মাহমুদা মৌ
ওগো ফাল্গুনী চাঁদ
তুমি যখন রূপালী আলো বিলাও
আমি তোমার প্রেমে পড়ি।
মরা হৃদয় জেগে ওঠে
লুকানো বিরহ, অবহেলার ডালপালা
বিষাদের পাÐুলিপি কাঠ কয়লায় পুড়িয়ে
তোমার রূপের মাদকতায়
আমি তখন তারুণ্যে ফিরি!
ইচ্ছে করে পলাশ রঙা শাড়ি পরি
হাতে একগোছা কাচের চুড়ি
কপালে সিঁদুর রাঙা টিপ
খোঁপায় হলুদ গাঁদা ফুল।
আমি তখন মৃত্যুগন্ধী রাতের কথা
মনে করিনা, ছাইপাশ ভাবিনা
চিরচেনা দুঃখ কষ্টকে
লহমায় দূরে সরিয়ে
আমি কেবল তোমার প্রেমে পড়ি।
স্বপ্নের আঁধার যাত্রা : পারভেজ আহসান
পাথর জমিন চাষে ভাঙে লাঙলের ফলা
আগুন রোদে জোয়াল বন্দি গরু দুটি
স্থির হয়ে দাঁড়ায় কষ্ট ও ক্লান্তি ভুলে যেতে
তথাপিও নোনা জলে ভেজা এক অদম্য কৃষক
প্রান্ত রেখা ছিঁড়ে
ঊষর জমিনের ভেতর খুঁজে উর্বর জমিন।
হঠাৎ এক দুপুরে বিনাশী হাওয়া বয়ে যায়
কেবল জোয়াল ও লাঙল পড়ে থাকে সে প্রান্তরে
স্বপ্নের ফসিল হয়ে।
জীবন কেন এমন : মাহমুদা শিরীন
একাকিত্বের সাঁকো বেয়ে খুঁজে ফিরি অতীতের স্মৃতির ডায়েরি।
আজকাল দুচোখের নোনা জলও নিয়েছে ছুটি।
তীব্র যন্ত্রণাতেও ওরা আমাকে আর ভেজানোর প্রয়োজন মনে করে না।
পথের বাঁকে ফুটে থাকা অনাদরি, পরিচর্যাহীন ফুলের মতোই এখন আমি,
চেনা অচেনা মানুষ থেকে যতœসহকারে নিজেকে আড়াল আবডালে রাখি।
নিঃসঙ্গতার কালো চাদর গায়ে জড়িয়ে পড়ে থাকি কোনো এক কোণে।
পোকামাকড়ের মতো কারও ঘৃণা সমেত দৃষ্টি দহনের প্রতীক্ষায়।
বেদনায় ভেঙে পড়া মন জানিনা কখনো কি পাবে আশার আলো \