×

আন্তর্জাতিক

পশ্চিমবঙ্গে গেরুয়া ফণা বিজেপির!

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২১, ১২:২০ এএম

পশ্চিমবঙ্গে গেরুয়া ফণা বিজেপির!

কাগজ ডেস্ক : প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গে বিধান সভা নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের তোড়জোড় চলছে এখন। আগামী ২৭ মার্চ শুরু হবে ভোটাভুটি। সেখানে আসন রয়েছে ২৯৪টি। কী ঘটতে যাচ্ছে সেখানে, এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার বিরাম নেই কোনো। সর্বশেষ ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বরাদ্দ মোট ৪২ আসনের মধ্যে তৃণমূল ২২, বিজেপি ১৮, কংগ্রেস ২ আসন পায়। এই ফলাফলে আপাত নজরে তৃণমূল এগিয়ে রয়েছে মনে হলেও, বাস্তবতা হচ্ছে, আগের লোকসভা নির্বাচনের চেয়ে এবার বিজেপি আসন বাড়িয়ে নেয় ১৬টি, তৃণমূলের আসন কমে যায় ১২টি। পাঁচ বছর আগে ২০১৬ সালে এ রাজ্যে সর্বশেষ বিধান সভা নির্বাচনে তৃণমূল জেতে ২১১ আসনে, বিজেপি মাত্র ৩টি আসন। কংগ্রেস ও সিপিএম সেবার পায় যথাক্রমে ৪৪ ও ২৬ আসন। সেবার তৃণমূলের আসন সংখ্যা বাড়ে পূর্বের তুলনায় ২৭টি। অন্যদিকে শূন্য থেকে তিনে উঠে আসে বিজেপি। এবার তার উচ্চাভিলাষী টার্গেট, বিধান সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ ও গদিতে নিজের মুখ্যমন্ত্রী বসানো। কিন্তু সেটি কি আসলেই বাস্তবসম্মত কোনো টার্গেট? পরিসংখ্যানে কিন্তু ইঙ্গিত মিলছে ঠিক তারই। পশ্চিমবঙ্গে গত এক দশকে ধারাবাহিক সমর্থন বেড়েছে বিজেপির। ২০১১ সালের বিধান সভা নির্বাচনে ভোটের খাতায় তার সমর্থন ছিল ৪ শতাংশ, ২০১৬ সালে তা বেড়ে ওঠে ১০ শতাংশে এবং ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে তার ভোটার-সমর্থন উঠে আসে ৪১ শতাংশে। অন্যদিকে তৃণমূল ২০১১ সালে ভোট পায় ৩৯ শতাংশ, ২০১৬ সালে ৪৫ শতাংশ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৪৪ শতাংশ। অর্থাৎ বিজেপির সমর্থন প্রায় ১০ গুণ বাড়লেও তা জনসমর্থন কমাতে পারেনি তৃণমূলের। যদিও আসন কমেছে তাদের, অন্তত লোকসভায়। এনডিটিভির এক বিশ্লেষণ বলছে, বিজেপির উত্থানের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে বিধান সভায় তার আসন ১২৫ ছাড়াবে এবার। একই হারে তৃণমূলের ভাঙনের ধারাও বজায় থাকলে বিধান সভায় তাদের আসন ৫০টি কমে নেমে আসবে ১৬০ এর কাছাকাছি। ফলে এবারের নির্বাচনে তৃণমূল-বিজেপি হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়েরই ইঙ্গিত মিলছে পর্যবেক্ষক মহল থেকে। বস্তুত পশ্চিমবঙ্গে জয়ের লক্ষ্যে এবার সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছেন ভারতীয় রাজনীতির শক্তপাল্লা মোদি-অমিত জুটি। দলের পরীক্ষিত ব্যক্তিবর্গকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি ফাটল ধরাতে শুরু করেছেন মমতার দুর্গের শীর্ষ স্তম্ভে। গত কয়েক মাসে তৃণমূলের অনেক তাবড় নেতা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। মমতার ‘ডান হাত’ শুভেন্দুও সরে গেছেন গেরুয়া শিবিরে। জার্সি বদল থামছেই না। সর্বশেষ গত রবিবার কলকাতা ব্রিগেড ময়দানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঐতিহাসিক জনসভায় হার হাতে হাত মিলিয়ে গেরুয়া ঝাণ্ডা ওড়ালেন জনপ্রিয় অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী। ভোটারদের আশ^াস দিয়ে হুঙ্কার দিয়েছেন, জলঢোড়া নই, আমি গোক্ষুর, এক ছোবলেই ছবি! মোদিও হাত তুলে ‘দিদিকে’ কটাক্ষ করে বলেছেন, লোকসভা নির্বাচনে ‘হাফ’ হয়েছিল দিদির দল, এবার ‘সাফ’ হয়ে যাবে! এদিকে বাতাসে জোর জল্পনা, মমতার বিকল্প মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সৌরভ গাঙ্গুলিকে হাত করতে ব্যর্থ হওয়ার পর এবার ‘ফাটাকেষ্ট’ মিঠুনকেই ভোটারদের সামনে হাজির করতে যাচ্ছে বিজেপি। ২০১৯ সালে বিজেপি তৃণমূল থেকে মাত্র ৩ শতাংশ ভোটে পিছিয়ে ছিল। বিগত দুই বছরে তার ভোট আরো বাড়ার কথা। এ রাজ্যে অপর অংশীজন, যেমনÑ কংগ্রেসের ও বামের ভোট কমেছে ধারাবাহিকভাবে, মূলত যেগুলো চলে যাচ্ছে বিজেপির ঝুলিতে। ২০১১ নির্বাচনে তারা পায় ৩০ ভাগ ভোট, ২০১৬ সালে পায় ২০ ভাগ, আর ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে পায় মাত্র ৬ ভাগ। এনডিটিভির উপাত্ত বিশ্লেষণ বলছে, ২০১৯ এর ভোটের হিসাব এবারো বহাল থাকলে বিজেপি পেতে পারে ১২১ এবং তৃণমূল ১৬৪ আসন। যদি বিজেপির ভোট ২ শতাংশ বাড়ে তাহলে তাদের আসন সংখ্যা হবে ১৫৫ এবং তৃণমূলের ১৩০। অর্থাৎ ২৯৪ আসনের বিধান সভায় বিজেপিকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে গতবারের চেয়ে অন্তত ২ শতাংশ বেশি ভোট পেতে হবে তাদের। বিষয়টিকে আপাত দুঃসাধ্য মনে হলেও অসম্ভব বলে মনে করছে না বিজেপি বাহিনী। ব্রিগেড ময়দানে মিঠুনের নাটকীয় সংলাপে শোনা গেল তার প্রতিধ্বনি। শেষ পর্যন্ত জয় বংলা, নাকি জয় শ্রীরাম, কার হাতে যায় নামের নীল বাড়ির মালিকানা, সেটাই দেখার অপেক্ষা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App