×

মুক্তচিন্তা

বিএনপি আবার সরকার পতনের আন্দোলনে?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২১, ১২:৪১ এএম

বিএনপির পক্ষ থেকে আবার সরকার পতনের আন্দোলনের কথা বলা হচ্ছে। সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার জন্য বিএনপি সচেষ্ট আছে বলে শোনা যাচ্ছে। ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ছাত্রদলের মারমুখী আচরণ, কোনো কোনো নেতার আর একটি যুদ্ধের ডাক কিংবা রাজশাহীতে মিজানুর রহমান মিনুর ১৫ আগস্ট স্মরণ করিয়ে দেয়া থেকে কেউ কেউ মনে করছেন বিএনপি কি কোথাও থেকে কোনো ইঙ্গিত পেয়েছে, নাকি এসবই আষাঢ়ে তর্জন-গর্জন? সরকার কি বিএনপির হুমকিতে বিচলিত বোধ করছে? বিএনপির ভেতরের খবরাখবর যারা রাখেন তারা অবশ্য এসব বক্তব্য খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিতে নারাজ। বিএনপির যখন সক্ষমতা ছিল তখনই সরকারকে কাবু করতে পারেনি। এখন বিএনপি সাংগঠনিকভাবে কাহিল অবস্থায় আছে। সরকার বড় ধরনের কোনো ভুল না করলে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের আশঙ্কা কম। ২০২৪ সালের নির্বাচনে কী হবে, সেটা বোঝা যাবে তখন। এখন আগাম গোঁফে তেল দিয়ে লাভ আছে বলে রাজনীতির নিবিড় পর্যবেক্ষকরা মনে করেন না। করোনা মহামারির কারণে ভয়াবহ মৃত্যু-আতঙ্কের মধ্য দিয়েই কেটে গেছে ২০২০ সাল। কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস পৃথিবীর দেশে দেশে মানুষের জীবনে নানা ধরনের দুঃখ-কষ্টের কারণ হয়েছে। এমন মৃত্যুর মিছিল বিশ্ববাসী বহুদিন দেখেনি। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রÑ সবকিছুই করোনার আঘাতে তছনছ হয়ে গেছে। কত নতুন শব্দের সঙ্গে মানুষের পরিচয় হয়েছে বেঁচে থাকার আগ্রহ মানুষের জীবনধারায় এনেছে কত পরিবর্তন। মানুষের চলাচল ব্যাহত হয়েছে। অর্থনীতি বিপর্যন্ত হয়েছে। মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। অনেকের জীবিকারও পরিবর্তন হয়েছে। তেমনি কোনো কোনো দেশে রাজনীতিকেও ঘরবন্দি করেছে। বাংলাদেশের মানুষের রাজনীতি নিয়ে আগ্রহ প্রবল, কিন্তু ২০২০ সালে রাজনীতিতে তেমন কোনো চাঞ্চল্য দেখা যায়নি সেভাবে। বিএনপির স্থবিরতার কারণেই রাজনীতিতে উত্তাপ-উত্তেজনা কম ছড়িয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ অব্যাহতভাবেই চলেছে। বিএনপি দরদি বলে পরিচিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী অবশ্য বিএনপিকেও করোনা আক্রান্ত বলে উল্লেখ করেছেন। বিএনপি দ্রæত সক্রিয় না হলে দলটির সামনে আরো বেশি দুর্দিন অপেক্ষা করছে বলেও তিনি মনে করেন। দলের নেতৃত্ব নিয়ে বিএনপি সংকটে আছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থ, সরকারি অনুগ্রহে কারাগারের বাইরে এসেও রাজনীতিতে সক্রিয় ভ‚মিকা রাখতে পারছেন না। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা অনিশ্চিত। তাকে নিয়ে দলের মধ্যে প্রশ্ন আছে, অস্বস্তি আছে। যারা দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারাও একমত হয়ে চলতে পারছেন না। রাজনৈতিক কর্মসূচি ও কৌশল নিয়ে মতভেদের কথাও এখন গোপন নেই। বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য অস্থিরতায় ভুগছেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন, আন্দোলন করার অবস্থায় দল নেই। নতুন বছরে ঐক্যবদ্ধ শক্তি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নামার কথা বলছেন কেউ কেউ। এসব কারণে দলকে চাঙ্গা করা এবং দলের নেতাকর্মীদের মনোবল ফিরিয়ে আনার জন্যই বিএনপি এখন অসময়ে সরকার পতনের কথা বলছে কিনা, সেটাও ভাবার বিষয়। রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ আওয়ামী লীগ সরকার বা শেখ হাসিনার হাতছাড়া হওয়ার তেমন লক্ষণ রাজনীতি অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা দেখছেন বলে মনে হয় না। টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে (ক্ষমতায় থাকলে ক্ষমতার অপব্যবহার কোন দেশে না হয়?) আওয়ামী লীগ নিয়ে মানুষের মধ্যে কিছু অসন্তোষ তৈরি হয়নি, তা নয়। আওয়ামী লীগের ভেতরেও আবর্জনা জমেছে। কিছু কিছু জায়গায় আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে। নোয়াখালীতে তার নগ্ন প্রকাশ দেখা যাচ্ছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের উপস্থিতিতে দুই গ্রæপের মারামারি, দিনাজপুরে নারী সংসদ সদস্য জুঁইয়ের ওপর হামলার ঘটনা অতি সম্প্রতি ঘটেছে। এগুলো ভালো লক্ষণ নয়। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি মানুষের আস্থা ও সমর্থন অটুট আছে। অনেকে এটাও মনে করেন যে, আওয়ামী লীগের চেয়ে শেখ হাসিনা বেশি জনপ্রিয়। দেশের বাইরেও শেখ হাসিনা অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণাদায়ী নেত্রী হিসেবে মর্যাদার আসনে আছেন। গত ৪ মার্চ ৫৪ দেশের জোট কমনওয়েথের মহাসচিব প্যাট্রেসিয়া স্কটল্যান্ড এক বার্তায় বলেছেন, আমাদের কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আমি তিনজন অসাধারণ নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করতে চাই। তারা হলেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন, বারবাডোসের প্রধানমন্ত্রী মিয়া আমোর মোটলে এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কমনওয়েলথ মহাসচিব আরো বলেছেন, এই তিন ব্যক্তিত্ব বিশ্বের অনেক নারীর পাশাপাশি আমাকে এমন একটি বিশ্ব গড়ে তোলার ব্যাপারে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন, যেখানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার সম্মিলিত সুন্দর ভবিষ্যৎ ও কল্যাণ সুনিশ্চিত ও সুরক্ষিত থাকবে। এমন প্রশংসা শুধু শেখ হাসিনার অবস্থানকে নয়, সরকারকেও সংহত করবে। অবশ্য এটাও লক্ষণীয় যে, বিরোধী রাজনীতিকে অচল করতে সক্ষমতা দেখাতে পারলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের সাফল্য দেখা যায় না। যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে সাধারণ মানুষের জীবন কষ্টকর করে তুলছে। করোনাকালে মানুষের আয় কমছে। ব্যয় বাড়ছে। হিসাব মিলাতে পারছে না বেশিরভাগ মানুষ। বাজার চলছে একশ্রেণির ব্যবসায়ীর মর্জি মাফিক। তারা তাদের লাভের লোভে পুড়িয়ে মারছে সাধারণ ক্রেতা-ভোক্তাদের। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয়া হলো কয়েকগুণ। তারপর পেঁয়াজ এলেও দাম কমার নাম নেই। মানুষ পাইকার-মহাজন-মজুদদার-মুনাফাখোরদের কাছে অসহায়, জিম্মি। রাজনীতির মূল নিয়ন্ত্রণ যেহেতু ব্যবসায়ীদের হাতে চলে গেছে, তাই সাধারণ মানুষের স্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে। পর্যাপ্ত আলু মজুত এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় কোনো ঘাটতি না থাকা সত্তে¡ও আলু কারবারিরা দাম বাড়িয়ে মুনাফা লোটার পথ করেছেন। সরকার আলুর কেজিপ্রতি দাম ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও কে শোনে কার কথা! চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, সবজিসহ সব কিছুরই দাম চড়া। কম শুধু মানুষের আয়-রোজগার। করোনাকালেও কিছু মানুষ অসৎ উপায়ে ধনবান হচ্ছে আর বেশি মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। বৈষম্য বাড়ছে। আবার করোনা মোকাবিলায় এবং টিকা সংগ্রহে শেখ হাসিনার সরকার যে সাফল্য দেখিয়েছে, সেটাও অনেকের কাছে প্রশংসিতই হচ্ছে। মানুষের অভাব-অভিযোগ নিয়ে রাজনীতিবিদদের মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। সাধারণ মানুষকে পাশে পাওয়া, তাদের দুর্দশা লাঘবের চেষ্টা নেই। রাজনীতি যতটুকু আছে সেটা পরস্পর দোষারোপের। এ ওকে দুষে, ও একে। এর থেকে পরিত্রাণের পথ বা উপায় আছে বলে মনে হয় না। আমরা রাজনৈতিকভাবে চরম বিভাজিত জাতি। এক অংশ মনে করেন, শেখ হাসিনার হাতেই দেশ নিরাপদ। তার কোনো উপযুক্ত বিকল্প দেশে নেই। তাই তাকেই অব্যাহতভাবে ক্ষমতায় রাখতে হবে। আবার শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে আর সাধারণ মানুষের কোনো উপকার হবে না বলে মনে করার মতো মানুষও আছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে অনেকের মধ্যেই অসন্তোষ আছে। এই আইনে গ্রেপ্তার লেখক ও উদ্যোক্তা মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে। তবে এসব ঘটনায় সরকার পতনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করলে তা বাড়তি উচ্ছ¡াস তৈরি করবে। দেশে মানুষের আস্থাভাজন বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্বের ঘাটতি আছে। গত শতকের শেষ দশক থেকে মাঝে মাঝেই ‘বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি’র বিষয়টি সামনে আসে। কিছু তৎপরতাও লক্ষ করা যায়। কিন্তু রস জ্বাল দিয়ে গুড় বানানোর কাজটি আর হয় না। আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টিÑ এই তিনটি বাংলাদেশে শাসক দল। অর্থাৎ এই তিন দল বিভিন্ন সময় ক্ষমতায় থেকেছে বা আছে। তবে বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি একই ধারার, একই রাজনৈতিক আদর্শ-বিশ্বাসের দল। আওয়ামী লীগ ভিন্ন ধারা এবং আদর্শ-বিশ্বাসের দল। আওয়ামী লীগের জন্ম এবং বিকাশ এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন থেকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি সামরিক শাসকদের ঔরসজাত দল। তবে এর মধ্যে জাতীয় পার্টি এখন ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি পরস্পরের প্রতিদ্ব›দ্বী হয়ে টিকে আছে। দুই দলেরই পক্ষে-বিপক্ষে মানুষ আছে, সমর্থন ও বিরোধিতা আছে। এই দুই দলের বাইরে একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার তাগিদ আছে। বছরখানেক আগে ১২টি বামপন্থি দল আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে একটি বাম বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার আহŸান জানিয়েছিল। কিন্তু তার আর পর নেই। আহŸানেই সব শেষ। অবশ্য বাম বিকল্পের কথাও নতুন নয়। বাম শক্তি রাজনীতিতে প্রভাবকের ভ‚মিকায় যেতে পারবে বলে বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা দেশে দিন দিনই কমছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাম-ডানের এক অবস্থান মানুষকে উৎসাহিত না করে বরং হতোদ্যম করে। সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারার সভাপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনসহ আরো কেউ কেউ একটি বিকল্প রাজনৈতিক ধারা অথবা শক্তি গড়ে তোলার কথা বলছেন কয়েক বছর ধরেই। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ‘আপদ-বিপদ’ উল্লেখ করে এই দুই দলের হাতে বন্দি রাজনীতিকে মুক্ত করার কথা কেউ বললে সেটা শুনতে খারাপ লাগে না। কিন্তু মুসিবত হলো, মানুষ কম খারাপ থেকে বেশি খারাপ অথবা বেশি খারাপ থেকে কম খারাপের বৃত্তের বাইরে যেতে পারছে না। তাই বিকল্প নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহ বা উৎসাহ কোনোটাই দেখা যায় না। সেজন্য নিন্দা-মন্দ যাই করা হোক না কেন মানুষ আওয়ামী লীগ-বিএনপি ছাড়ছে না। বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং কামাল হোসেনÑ দুজনই প্রবীণ ও শ্রদ্ধেয় মানুষ। কিন্তু তাদের নেতৃত্বে দেশে বড় কোনো রাজনৈতিক শক্তি-সমাবেশ গড়ে ওঠার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সাধারণ মানুষ তাদের আস্থায় নিতে পারেনি বা পারছে না। তারা নিজেরাই তাদের ‘পোটেনশিয়াল’ নষ্ট করেছেন। মানুষের কাছে যাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নেই, তাদের আহŸানে সাড়া দিয়ে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হবেÑ এমন আশা করার কোনো কারণ নেই। তাছাড়া যারা বিকল্প রাজনৈতিক ধারার কথা বলেন, সাধারণ মানুষ তাদের বিদ্যমান ধারার কোনো না কোনো অংশের প্রতিনিধি বলেই মনে করে। তারা ‘আলাদা’ এটা এতদিনেও তারা প্রমাণ করতে পারেননি। তারা কয়েকটি ছোট দল মিলে একটি জোট হয়তো গঠন করতে পারেন কিন্তু আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির আনুক‚ল্য না পেলে তাদের কারো পক্ষে ভোটে জিতে আসা সম্ভব বলে মনে হয় না। ভোটারদের ‘মাইন্ডসেট’ না বদলালে এবং বড় দুই দলের পক্ষপুটে থেকে বিকল্প রাজনৈতিক ধারা গড়ে উঠবে কীভাবে? আজকাল কেউ কেউ আক্ষেপ করে বলেন যে, বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ আর শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এক নয়। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ ছিল গণতান্ত্রিক, উদার এবং প্রগতিমুখীন। আর শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সব মিলিয়ে কিছুটা যেন পশ্চাৎগামী। বিশেষ করে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিয়ে আওয়ামী লীগ এখন পিছু হটার নীতি নেয়ায় অনেকেই উদ্বিগ্ন। প্রশ্ন হলো, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ আর বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ এক থাকার বাস্তব পরিস্থিতি কি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিরাজ করছে? গত শতকের ষাটের দশকে যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রগতিশীলতার পক্ষে পরিবর্তন বা বিবর্তন ঘটছিল, এখনকার পরিস্থিতি তার সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রতিক্রিয়া ও ধর্মান্ধতার পক্ষে বিশ্বব্যাপী যে উন্মাদনা কিংবা অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ তার থেকে চাইলেও বাইরে থাকতে পারবে না, পারছে না। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের ভয়াবহ বিপদ বাংলাদেশেও আছড়ে পড়ছে। বিএনপির মতো চরম সুবিধাবাদী এবং হত্যা-সন্ত্রাসে বিশ্বাসী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আওয়ামী লীগকে আপস-সমঝোতার পথে হাঁটতে হচ্ছে বলে দলের শুভার্থীদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দেয়া স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে সান্ত¡না এটাই যে, বিএনপি যদি আলকাতরা হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ হলো পানি। আওয়ামী লীগের রং পরিবর্তন সম্ভব হলেও বিএনপি বদলাবে না। অনুক‚ল শক্তি সমাবেশ ঘটিয়ে আওয়ামী লীগকে বদলানো গেলেও বিএনপিকে বদলানো যাবে না। ১৫ এবং ২১ আগস্টের বর্বরতা কোনো গণতান্ত্রিক দল নিন্দা না করে পারে? কিন্তু আমাদের দেশে বিএনপি পারছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে শারীরিকভাবে নির্মূলের এই রাজনীতির প্রতি বিএনপির প্রকাশ্য সমর্থন, সহানুভূতি, পৃষ্ঠপোষকতা কোনো গোপন বিষয় নয়। অথচ এজন্য বিএনপির যে নিন্দা-সমালোচনা হওয়া উচিত, বাস্তবে তা নেই। দেশের বিভেদ ও সংঘাতের রাজনীতির জন্য আমরা অনেকেই এক বাক্যে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিকে সমানভাবে দায়ী করে থাকি। কিন্তু একবার ভেবে দেখি না, আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে যদি এমন ঘটনা ঘটত তাহলে আমরা কি করতাম? আমি জানি যে, একজন আমাকে হত্যার জন্য অস্ত্র তাক করে আছে, দুয়েকবার ব্যর্থ হামলাও চালিয়েছেÑ এসব জেনেও ওই সম্ভাব্য ঘাতক বা ঘাতকদের প্রতি কি আমি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিতে পারব? আওয়ামী লীগ সরকারে আছে, রাজনৈতিক সংকট নিরসনে কেন বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসে নাÑ এই প্রশ্ন আমাদের অনেকের মধ্যেই আছে। কিন্তু আমরা আওয়ামী লীগের, বিশেষ করে শেখ হাসিনার কষ্টের দিকটা সেভাবে বিবেচনা করি না।আমাদের রাজনীতিতে যদি সম্প্রীতি-সৌহার্দের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হয় তাহলে প্রথম প্রয়োজন হবে আওয়ামী লীগের প্রতি বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। আওয়ামী লীগকে অস্ত্র দিয়ে প্রতিহত করার ধারণা গণতন্ত্রের সঙ্গে একেবারেই যায় না। বিএনপি যদি আস্তিনের নিচে অস্ত্র লুকিয়ে রেখে গণতন্ত্রের জন্য কান্নাকাটি করতে থাকে তাহলে তাতে আওয়ামী লীগ ভুলবে কেন? দেশের মানুষকেও দলপ্রীতির ক্ষেত্রে বিচার-বিবেচনাবোধের পরিচয় দিতে হবে। অন্ধত্ব পরিহার করতে হবে। আওয়ামী লীগকে যদি সমর্থনযোগ্য মনে না হয়, তাহলে বিএনপি কোন বিবেচনায় সমর্থনের তালিকায় আসে? রাজনীতি অবসর সময় কাটানো কিংবা বিনোদনের বিষয় নয়। দেশ ও দেশের ভাগ্য নিয়ে যেহেতু রাজনীতির কারবার, তাই সারাক্ষণ সময় দেয়ার মতো আদর্শবাদী একদল মানুষ এক হয়ে না দাঁড়ালে আরামপ্রিয় এবং ঝুঁকি নিতে অক্ষম পুরনো ফসিল নেতাদের দিয়ে বিকল্প রাজনীতির ধারণা শক্ত ভিত্তি পাবে না। করোনা-পরবর্তী সময়ে পৃথিবীতে অনেক কিছুই হয়তো আর আগের মতো থাকবে না। বিশ্বজুড়ে রাজনীতিতে পরিবর্তনের ঢেউ দেখা দিতে পারে। জনকল্যাণমুখী কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রতিও মানুষের সমর্থন বাড়তে পারে। করোনার টিকা বা ভ্যাকসিন নিয়ে রাজনীতিও আন্তঃরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে আনতেও পারে পরিবর্তন। কিন্তু নতুন কোনো বিশ্বপ্রবণতার অভিঘাতে আমাদের দেশের রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন আসে কি-না, দেখার বিষয় সেটাই। বিএনপি চাইলেই সরকার পতন হবে না। বিভুরঞ্জন সরকার : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App