×

পুরনো খবর

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনে পক্ষে বিপক্ষে এবং গভীর নীরবতায়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২১, ১২:৪১ এএম

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এ বছর ২৬ মার্চ পালিত হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ এবং এর দেশীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির নানা দিক এ বছর বিশেষভাবে উপস্থাপন করে দিবসটি পালন করা হয়েছে। বিএনপি জন্মলগ্ন থেকেই কোনোবারেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালন করেনি। এ বছর তারা ১ মার্চ থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তাদের এই ঘোষণা নিয়ে শুধু আওয়ামী লীগই নয়, রাজনীতি সচেতন পর্যবেক্ষকরা বেশ কৌতূহল প্রকাশ করছে। এরই মধ্যে বিএনপির উদ্যোগে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের কয়েকটি দিবস পালন উপলক্ষে প্রেস ক্লাব কেন্দ্রিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য শুনেই বুঝা গেছে বিএনপি ১৯৭১ সালের ইতিহাস নিয়ে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে কিছু কথাবার্তা তাদের নেতাকর্মীদের জন্য উপস্থাপন করছে। তবে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন দিবসে তৎকালীন ডাকসুর সহসভাপতি আ স ম আব্দুর রব বিএনপির আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তা হিসেবে উপস্থিত থেকে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তা খুব কম মানুষই গ্রহণযোগ্য বলে মনে করছেন। তাছাড়া আ স ম আব্দুর রব মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী হিসেবে ভূমিকা রাখলেও ১৯৭২ সালের পরই তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল গঠনের অন্যতম একজন উদ্যোক্তা ছিলেন। এই দলের ভূমিকা যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে উগ্র বিপ্লববাদের যে আবহ তৈরি করেছিল সেটির পরিণতি শেষ পর্যন্ত মোটেও সুখকর হয়নি। জাসদ খণ্ড-বিখণ্ড হয়েছে, আ স ম আব্দুর রবও সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ‘অনুগত বিরোধী দল’ হিসেবে সব মহলের কাছে তিরস্কৃত হয়েছেন। আ স ম আব্দুর রব জাতীয় রাজনীতির ইতিহাসে এখন আর সেই মর্যাদায় নেই, যেটি তিনি ১৯৭১ সালে অর্জন করেছিলেন। সুতরাং তার এখনকার বক্তব্য খুব কম মানুষকেই আকর্ষণ করে। বিএনপির কাছে তিনি সাময়িকভাবে সমাদর পেতে পারেন, কারণ তিনি অনেক কিছুই নিজের মনের মতো করে বলেন, যা ১৯৭১ সালের মূল ইতিহাসের বাস্তবতার সঙ্গে তেমন যায় না। এ কারণেই তাকে হয়তো বিএনপির অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাছাড়া গত নির্বাচনের আগে তিনি বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনী জোট গঠন করেছিলেন। আ স ম আব্দুর রবের ১৯৭১ সালের ভূমিকা, ১৯৭২ পরবর্তী দীর্ঘ রাজনৈতিক উত্থান-পতন এবং বর্তমান অবস্থা অনেকটাই তাকে নিঃসঙ্গতার জায়গায় নিয়ে গেছে। বিএনপি তাকে হয়তো কিছুটা ব্যবহারের মাধ্যমে লাভবান হতে চেষ্টা করছে। একাত্তরের ৭ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী গঠনাবলির সবচেয়ে মহিমান্বিত দিবস। এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণসহ স্বাধীনতায় উজ্জীবিত জনগণকে প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান এবং স্বাধীনতা ও মুক্তির যে ডাক দেন সেটি স্বাধীনতার প্রকৃত ঘোষণা হিসেবে পূর্ব বাংলার জনগণ গ্রহণ করে। ৭ মার্চের এই ভাষণ শুধু ভাষণ হিসেবেই নয়, এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার যৌক্তিকতা, পাকিস্তান রাষ্ট্রের বৈষম্যমূলক আচরণ, নিপীড়ন এবং বঞ্চনার যে ইতিহাস তুলে ধরেছে তাই পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের অস্তিত্ব পূর্ব বাংলার জনগণের কাছে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ব্যাখ্যা হিসেবে তুলে ধরা হয়। এই ভাষণটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে ৯ মাস পরিচালিত করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্ব জনগণ এবং স্বাধীনতাকামী সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ইস্পাত কঠিন ঐক্যে জাগ্রত করেছিল। সে কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে এই দিনটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করার বিষয়। ইউনেস্কো ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটিকে আন্তর্জাতিক প্রামাণিক দলিলের ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। এ বছর ভাষণটি জাতিসংঘের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে ইউনেস্কোর কেন্দ্রীয় দপ্তরে গ্রন্থ আকারে প্রকাশিত হয়েছে। দুঃখজনক অভিজ্ঞতা হলো ৭ মার্চের এমন ঐতিহাসিক তাৎপর্যমণ্ডিত দিবস উদযাপনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত স্বতঃস্ফূর্তভাবে উদযাপন করেতে পেরেছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর যেসব সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার অংশ হিসেবে ৭ মার্চের তাৎপর্যকে উপস্থাপনে বাধা প্রদান করে দীর্ঘদিন এই ভাষণটি প্রচারেও রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ রেখেছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সর্বপ্রথম ভাষণটি বেতার ও টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়। দীর্ঘদিন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু এবং তার দেশ শাসন নিয়ে নানা ধরনের মিথ্যাচার, অপপ্রচার দেশের রাজনীতি ও পাঠ্যপুস্তকে অবাধে ছিল। ফলে স্বাধীনতার পরবর্তী প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস শেখার শিকারে পরিণত হয়। তারা এই ভাষণটি সম্পর্কেও তেমন কিছু জানতে পারেনি। ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস খণ্ডিত ও বিকৃত আকারেই সামরিক শাসন, বিএনপি এবং জোট সরকারের শাসন আমলে প্রচারিত হয়েছে। ৭ মার্চ কোনো সময়ই তারা পালন করতে দেয়নি। ফলে যে বিষয়টি লক্ষ করা যাচ্ছে তা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আওয়ামী লীগ সব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বলার চেষ্টা করে এসেছে, মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনা ও দিবস পালনের চেষ্টাও করে এসেছে। স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা পাকিস্তানকালের অন্যসব দল ও নেতার চেয়ে অনেক বেশি ছিল। পাকিস্তানকালে কোনো কোনো দল পূর্ব বাংলার জনগণের কিছু কিছু অধিকার নিয়ে কিছু সময়ের জন্য আন্দোলন করলেও পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার বিষয়টি তাদের চিন্তা-ভাবনায় ছিল এমনটি খুব বেশি পাওয়া যায় না। তাছাড়া কিছু কিছু বামপন্থি দল পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করলেও স্বাধীনতা সংগ্রাম সংঘটিত করার শক্তি যেমন তাদের ছিল না, তেমনি তাদের কোনো পরিকল্পনা ছিল বলে জানা যায়নি। একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই পাকিস্তানের জন্মের পর ভাষা আন্দোলন থেকে পরবর্তী সব রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংবিধানিক দাবি-দাওয়ার আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আপসহীনভাবে লড়াই করেছেন, সংগঠনও সেভাবে তৈরি করেছেন। এজন্য তাকে বারবার কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। ষাটের দশকে তিনি পূর্ববর্তী সব রাজনৈতিক নেতাকে অতিক্রম করে ছয় দফা প্রদানের মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে যেভাবে অগ্রসর করে নিয়েছিলেন তাতে তিনি গণজাগরণ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এর মাধ্যমেই তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান প্রাণপুরুষ হয়ে উঠেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি পূর্ব বাংলার জনগণের নিরঙ্কুশ রায় লাভ করেন। তাকে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা অর্পণ না করার ফলে যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় তাতে স্বাধীনতার ডাক দেয়া এবং জনগণকে এর জন্য প্রস্তুত করার সব পরিকল্পনা ও পথ নির্দেশনা করতে হয়। জনগণের কাছে তিনিই তখন স্বাধীনতার প্রধান নেতা হিসেবে আসীন হন। দুঃখজনক হলেও সত্য স্বাধীনতার আগে এবং পরে অনেক রাজনৈতিক দলই বঙ্গবন্ধুর এই ভূমিকাকে যথাযথভাবে স্বীকৃতি প্রদান করতে কার্পণ্য বোধ করছে। এমনকি যেসব রাজনৈতিক দল ২৫ মার্চের পর মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশগ্রহণ করেছিল তারাও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পূর্বাপর ঘটনাগুলো তোলে ধরা, প্রচার করা কিংবা দিবস পালন করার ক্ষেত্রে নীরবতা পালন করছে। যারা মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করেছিল তারা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভূমিকাকে সব সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছে, মুক্তিযুদ্ধকেও তারা যথাযথভাবে শ্রদ্ধার চোখে দেখছে না বা দিবসগুলো পালন করছে না। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক গুরুত্বও তাদের কাছে সমাদৃত হচ্ছে না। এ বছর বিএনপি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের অংশ হিসেবে ৭ মার্চ পালন করেছে। তবে কোনো আনুষ্ঠানিকতা কিংবা শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদানের কর্মসূচি দেখা যায়নি। কেবলমাত্র ঢাকায় যুবদলের উদ্যোগে আয়োজিত একটি আলোচনা সভায় কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। এতে মির্জা ফখরুল সাহেব যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তা খুবই বিভ্রান্তিকর এবং ৭ মার্চের ইতিহাসের মর্যাদার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। বিএনপি প্রকৃত অর্থে ৭ মার্চের গুরুত্বকে তুলে ধরার পরিবর্তে যেসব বক্তব্য দিয়েছে তা ইতিহাস বিকৃতির বিএনপির এতদিনকার ধারাবাহিকতারই বহিঃপ্রকাশ। এতে অনেক এলোমেলো কথাবার্তা যেমন ছিল তেমনি মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেয়াকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে। বলা হয়েছে সবাই এই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। সুতরাং বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে মির্জা ফখরুল সাহেব আলাদাভাবে দেখতে রাজি নন। বরং তিনি দাবি করছেন আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বের কর্তৃত্ব এককভাবে নিচ্ছে। মির্জা ফখরুলের এই দাবি মোটেও ইতিহাসসম্মত নয়। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদানে বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের ভূমিকা অন্য সব দলের সঙ্গে ভূমিকার চেয়ে অনেকগুণ বেশি ছিল, জনগণের সমর্থনও ছিল বঙ্গবন্ধু এবং তার রাজনৈতিক দলের প্রতি। সুতরাং তখন আওয়ামী লীগ এবং জনগণের ভূমিকা যদি এতখানি নিবিড় এবং ঐক্যবদ্ধ না হতো তাহলে এতবড় মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত করা কিংবা পাকিস্তানি সামরিক শক্তিকে পরাজিত করা ক্ষুদ্র কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ দিয়ে মোটেও স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা যেত না। বঙ্গবন্ধুর ষাটের দশক থেকে তিলে তিলে সেই জনভিত্তি এবং আস্থা তৈরি করতে পেরেছিলেন বলেই তাকে জনগণ সত্তরের নির্বাচনে এত বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছিল। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাকে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ষড়যন্ত্রের পর ষড়যন্ত্র এঁটে ২৫ মার্চ পূর্ব বাংলায় গণহত্যা শুরু করে। এই পরিস্থিতিতেও জনগণ বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল ছিল। ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের সামরিক, প্রশাসনিক, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে পেরেছিল। এটি মির্জা ফখরুল সাহেবের দাবি মোতাবেক অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে দেয়ার কথা কল্পনাও করা যায় না। সুতরাং তিনি এবং তার দল মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক ভূমিকাকে ছোট করার মাধ্যমে যেভাবে ইতিহাস বিকৃত করতে চাচ্ছেন, সেটি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মাত্র দুটি বামপন্থি দল (ন্যাপ ও সিপিবি) এবং খণ্ডিতভাবে ভাসানী ন্যাপ ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক দল মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। সুতরাং বিএনপি নেতৃবৃন্দ রাজনৈতিক দলীয় বিবেচনা থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সামগ্রিক বাস্তবতাকে অস্বীকার কিংবা বিকৃত করার চেষ্টা করে কোনোভাবেই মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছে না। বিএনপির জন্ম মুক্তিযুদ্ধের আট বছর পর। সুতরাং বিএনপি যদি সত্যি সত্যি মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতো তাহলে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজনৈতিক বাস্তবতাকে অস্বীকার, খণ্ডিত, বিকৃত কিংবা জোড়াতালি দেয়ার মোটেও চেষ্টা করত না। সেটি করা হলেই প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক শক্তির কাজ হতো। কিন্তু বিএনপিতে যেহেতু অতি ডান, অতি বাম সুবিধাবাদী এবং মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী অনেক ব্যক্তি ও গোষ্ঠী সম্মিলন ঘটেছে, তাই তারা মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে পঁচাত্তরের পর থেকে যে নীতি ও কৌশল নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে সেটি বাস্তবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে অস্বীকার, অপছন্দ, বিকৃত, খণ্ডিত এবং দখল করার মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ। সুবর্ণজয়ন্তী পালন উপলক্ষে বিএনপি সেই বিশ্বাস ও মানসিকতারই পুনঃবহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে, মর্যাদার সঙ্গে দিবস পালনের কোনো উদাহরণ বা মনোবৃত্তি প্রদর্শন করেনি। এছাড়া আরো কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাম রাজনৈতিক দল রয়েছে তারাও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আওয়ামী লীগকে কটাক্ষ করে নানা ধরনের বক্তব্য প্রদান করে। তাদেরও রাজনৈতিক বিশ্বাস মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রতি মর্যাদাশীল বলে মনে হয় না। এ ধরনের বাস্তবতায় বাংলাদেশে ৫০ বছর ধরে ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক মার্চের তাৎপর্যপূর্ণ দিবসগুলো আওয়ামী লীগের উদ্যোগে পালিত হয়, আওয়ামীবিরোধী শক্তি ধারা দিবসগুলো পালনের আয়োজনকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছে। তবে দিবসগুলো নিয়ে তাদের মনগড়া বিকৃত ইতিহাস তুলে ধরা হয়। এবার সুবর্ণজয়ন্তীতেও সেই অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত), ইতিহাসবিদ ও কলাম লেখক।

[email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App