×

পুরনো খবর

ক্রমেই অস্তিত্ব সংকটে কৃষিজমি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২১, ১২:৪৬ এএম

জমির উর্বরতা কমে যাওয়ার ফলে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক কৃষিজমি। বর্তমানে জমিতে পুকুর খনন করার দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। এভাবে আবাদি জমি ক্রমহ্রাসমান। বাংলাদেশে মোট ভূমির সিংহভাগই কৃষিজমি। কিন্তু কৃষি উপযোগী আমাদের দেশে কৃষিজমি রক্ষা করা যাচ্ছে না। গ্রামীণ জনপদের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল কেন্দ্র কৃষিভিত্তিক শিল্প। দেশের মোট জনসংখ্যার দেড় কোটির বেশি মানুষ কৃষি কাজে নিয়োজিত। কিন্তু নগরায়নের আগ্রাসনে খাদ্যের প্রধান উৎস কৃষিজমি এখন অস্তিত্ব সংকটে। দিন দিন কমছে কৃষিজমি। জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় কৃষকের সংখ্যাও নগণ্য হচ্ছে। এছাড়া আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারেও কমেছে কৃষকের সংখ্যা। এভাবে কৃষিজমি কমতে থাকলে দেশের প্রায় ৬৮ শতাংশ মানুষের জীবন-জীবিকা চরম হুমকির সম্মুখীন হবে। ইতোমধ্যে অনেক মানুষ কৃষি কাজ ছেড়ে পেশা বদল করেছে। জীবিকার তাগিদে কেউ কেউ শহরে পাড়ি জমাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দেশে জনসংখ্যা। দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩০-৩৫ লাখ জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু সে তুলনায় কৃষিজমি এক শতাংশও বাড়ছে না। বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক হারে নগরায়ন ঘটছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যানের তথ্য অনুসারে, গত ২০ বছরে গ্রামাঞ্চলে জনসংখ্যা বেড়েছে ২ কোটি ৬০ লাখ। এর মধ্যে ২ কোটি ৪০ লাখই দরিদ্র। বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ১১ কোটিই গ্রামে বাস করে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১ শতাংশ হারে আবাদি জমির পরিমাণ কমছে। নিয়ন্ত্রণহীন জনসংখ্যার ফলে আবাদি কৃষিজমিতে গড়ে উঠেছে নগরায়ন। কৃষিজমিতে অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে আশপাশের জমিগুলোতে মাটির উর্বরতা ও ফসল উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। এভাবে প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে আবাদি জমির পরিমাণ। বাংলাদেশের কৃষি পরিসংখ্যান বলছে, দেশে মোট কৃষিজমির পরিমাণ ৮৫ লাখ ২০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে প্রতি বছর দেশের ৬৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর চাষাবাদযোগ্য জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ২ কোটি ১ লাখ ৫৭ হাজার একর বা ৮০ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ নানা কারণে প্রতি বছর দেশের প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি বছরই এ দেশ থেকে ১ শতাংশ হারে কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন কমছে প্রায় ২১৯ হেক্টর আবাদি জমি। কৃষিজমি রক্ষা করে আমাদের দেশে খাদ্যে চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি জমিতে উৎপাদিত ফসল বিদেশে রপ্তানি করার অপার সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু কৃষিজমি ধ্বংসের প্রক্রিয়া চলমান থাকায় সে সম্ভাবনায় ভাটা পড়েছে। ক্রমাগত কৃষিজমি হ্রাস ও খাদ্য উৎপাদন কমে যাওয়ার ফলে দেশে একসময় খাদ্য সংকট দেখা দেবে। ফলে আগামীর অর্থনীতি হয়ে উঠতে পারে অনেকটাই আমদানিনির্ভর। কৃষিজমির পরিমাণ কমতে থাকায় পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এখনই কৃষিজমি রক্ষা করতে না পারলে ভবিষ্যৎ এ ইট-পাথরের দালান ছাড়া কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির অস্তিত্ব থাকবে না। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কৃষিজমি রক্ষা ও ফসল উৎপাদনে গতিশীলতা জরুরি। কৃষিজমি রক্ষা এখন বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি দেশকে সমৃদ্ধ করতে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু কৃষিজমির পরিমাণ কমতে থাকায় কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির গতিশীলতা অনেকটা কমে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হবে। দেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেকটা পিছিয়ে পড়বে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কৃষির ভূমিকা রয়েছে। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির দাপট ফিরিয়ে আনতে সরকারের নেই বিশেষ কোনো পদক্ষেপ। তাই কৃষিজমি রক্ষায় মানুষকে সচেতন করতে হবে। সেই সঙ্গে অপরিকল্পিত নগরায়ন রোধ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, বাণিজ্যিক কাজে কৃষিজমির ব্যবহার বন্ধ, জমি খনন করে পুকুর তৈরি, মাটির উর্বরতা শক্তি বজায় রাখতে জমিতে ইটভাটা ও কলকারখানা নির্মাণ বন্ধ ও পরিবেশ রক্ষায় কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির দাপট ফিরিয়ে আনতে কৃষিজমি সুরক্ষার জন্য সরকারিভাবে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।

আরিফুল ইসলাম : শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থী, চট্টগ্রাম। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App