×

সারাদেশ

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদন বন্ধ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২১, ০৯:৫৪ পিএম

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদন বন্ধ

সোমবার চার দফা দাবিতে সংবাদসম্মেলনে শ্রমিক নেতারা

করোনার সময়ে ৭ মাস খনি অভ্যন্তরে অবরুদ্ধ থাকার পর প্রধান ফটক খুলে বের হয়ে এসেছেন পার্বতীপুর বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ৬০৪ জন শ্রমিক। রবিবার (৭ মার্চ) রাত সোয়া ৮ টার দিকে এই শ্রমিকরা বিদ্রোহ করে একযাগে খনি থেকে বের হয়ে আসেন। ফলে খনির কয়লা উৎপাদন প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কয়লা উৎপাদন কাজ নিয়োজিত চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এক্সএমসি-সিএমসি কনর্সোটিয়াম চীনা শ্রমিক দিয়ে খনি রক্ষণাবেক্ষণসহ কোনো রকমে এক শিফট কয়লা উত্তালন করছে।

এ ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) সৈয়দ ইমাম হাসান বাদী হয়ে পার্বতীপুর মডেল থানায় ৩৮ জনসহ অজ্ঞাতনামা অনেককে আসামি করে মামলা করার পর পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে। মামলার আসামি খনি শ্রমিক ইব্রাহিম, রবিউল, আসাদুজ্জামান, মহিবুল ও নুরে মুজাহিদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযানের মুখে কোনো শ্রমিক বাসায় থাকতে পারছেন না। এ ছাড়া খনির কাজেও যোগদান করতে পারছেন না। এ জন্য খনির কয়লা উত্তোলন কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম জানান, পার্শ্ববর্তী মধ্যপাড়া পাথর খনিসহ দেশের সব প্রতিষ্ঠানের গেট উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কাজকর্ম চলছে। কিন্তু বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির শ্রমিকরা দীর্ঘদিন থেকে ভেতরে বন্দি অবস্থায় থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

তিনি বলেন, এ অবস্থায় খনির প্রধান গেট উন্মুক্ত করা এবং সব শ্রমিককে করোনা ভ্যাকসিন প্রদান করে স্ব-স্ব কাজে যোগদানসহ ৩ দফা দাবি জানানো হয়। কিন্তু খনি কর্তৃপক্ষ কালক্ষেপণ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় বাধ্য হয়েই শ্রমিকরা রবিবার রাত সোয়া ৮টায় খনি থেকে বের হয়ে এসেছেন।

শ্রমিক আনোয়ার হাসান অভিযাগ করেন, সম্প্রতি তার মায়র মত্যু হলেও কর্তৃপক্ষ তাকে খনি থেকে বের হতে দেয়নি।

খনি শ্রমিক আব্দুর রহিম অভিযাগ করেন, করোনা স্বাস্থ্যবিধির জন্য গত সাত মাস ধরে আমি বাথরুমে ছিলাম। আমরা খনি থেকে বেরিয়ে এসেছি। কারণ সেখানে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছিল।

রবিবার দুপুর দিনাজপুর জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকি, পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাশিদ কায়সার রিয়াদ অচলাবস্থা নিরসনের জন্য খনি কর্তৃপক্ষ এবং আন্দোলনকারী খনি শ্রমিকদের নিয়ে আলোচনা সমোঝোতা ছাড়াই শেষ হয়। পর রাত সোয়া ৮টার দিকে শ্রমিকরা একযোগে খনির মেইন গেট খুলে বের হয়ে আসেন।

খনি এলাকার নিরাপত্তায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল দিনাজপুর পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

এ ব্যাপারে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকশলী কামরুজ্জামান খান জানান, এখানে কাজ করছে চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিএমসি-এক্সএমসি। চীনারা করোনার ব্যাপারে বেশ উদ্বিগ। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কাজ করতে হবে। যখন ইচ্ছে তখন বের হওয়া যাবে না, আবার প্রবেশও করা যাবে না। শ্রমিকদর এমন সম্মতিতেই তারা কাজে যোগ দেয়।

রবিবার রাতে শ্রমিকদের বের হওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি জানান, এখন চীনা শ্রমিকদের দিয়ে তিন শিফটের পরিবর্তে এক শিফট কয়লা উত্তালন চলছে। তবে বিকেল ৪টার দিক আন্দোলনকারী ১১৮ জন শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছেন।

পার্বতীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোখলছুর রহমান জানান, বড়পুকুরিয়া খনির ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) সৈয়দ ইমাম হাসান বাদি হয় ২৩ খনি শ্রমিকের নামসহ অজ্ঞাত সংখ্যক শ্রমিককে আসামী করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ইব্রাহিম আলী (৪৫) রবিউল সরকার (৩৯), আসাদুজ্জামান জীবণ (৩৩) ও মহিবুল ইসলাম ডালিম (৪৩) নাম ৪ শ্রমিককে গ্রেফতার করেছে।

পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাশিদ কায়সার রিয়াদ বলেন, পরিস্থিতি এখন শান্ত, শ্রমিক বিক্ষোভ এখন নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App