×

সারাদেশ

‘নারী দিবস’ সম্পর্কে ধারণা নেই পঞ্চগড়ের অনেক নারীর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২১, ০৬:১২ পিএম

‘নারী দিবস’ সম্পর্কে ধারণা নেই পঞ্চগড়ের অনেক নারীর

প্রতি বছর নারী দিবস যায় আসে, কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হয়না পঞ্চগড়ের নারী পাথর শ্রমিকদের।

পঞ্চগড়ের সিএন্ডবি এলাকায় একটি পাথর ভাঙ্গার মেশিনে কাজ করেন তাসলিমা বেগম (৩২) নামে এক নারী। বছর কয়েক আগে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় তার। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে সংসারের হাল ধরতে নেমে পড়েন পাথর শ্রমিকের কাজ করতে। দুই ছেলে নিয়ে কোনোমতে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সংসারের জন্য প্রতিনিয়তই করছেন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পাথরের কাজ করে পান মাত্র ৩০০ টাকা। তা দিয়েই সংসারের প্রতিদিনের খরচ, দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ, নিজেদের পরিধেয় কাপড়-চোপড় কেনা সহ নানান খরচ করতে সামান্য আয়ে হিমশিম খেতে হয় তাকে ।

ওই নারী শ্রমিকের বাড়ি বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের জেমজুট এলাকায়। তার সঙ্গে কথা হয় জেলার সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের সিএন্ডবি এলাকার মুসা নামে এক ব্যক্তির ব্যবসায়ীর পাথরের সাইডে। নারী দিবস কি? এ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় কি? কেন এ দিবস পালন করা হয়? এসব প্রশ্ন তাকে করা হলে অনেকটা হেসেই উড়িয়ে দেন তিনি। নারী দিবস সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই তার। বললেন, এসব জেনে আমাদের কি হবে। কাজ করে খেতে হবে। ওসব দিবস জেনে আমি কি করব। কাজের মুজুরী বৈষম্য বা অন্য কোন বিষয়ে মাথা ব্যাথাও নেই তাসলিমার।

এমনিভাবে কথা হয় রোকেয়া, ফেন্সী, হালিমা সহ জেলার বিভিন্ন এলাকার শ্রমজীবি নারীর সঙ্গে। তারা জানান. জীবিকার তাগিদে তাদের করে যেতে হচ্ছে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম। নারী দিবস বা এ দিবস কি কারণে পালন করা হয় সে সমন্ধে কোন ধারণাই নেই তাদের।

পঞ্চগড়ের পাথর শিল্পের প্রাণ নারী শ্রমিকরা। নদী ও সমতল ভূমি থেকে পাথর তোলার পর বাছাই করাসহ পাশ্ববর্তী ভারত ও ভূটান থেকে আনা বিশালাকৃতির পাথর ভাঙ্গার কাজের জন্য নারী শ্রমিকরাই একমাত্র ভরসা। কাজে ফাঁকি দেওয়ায় প্রবণতা কম থাকায় পাথর ব্যবসায়ীরা এ সকল কাজের জন্য নারী শ্রমিকদেরকেই বেশী প্রাধান্য দেয়। অথচ উদয়াস্ত পরিশ্রম করে এখনও পুরুষদের সমান মজুরি পাচ্ছেন না পঞ্চগড়ের নারী পাথর শ্রমিকরা। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়েও বেশি কাজ করে থাকেন তারা। কিন্তু তাদের পারিশ্রমিক পুরুষদের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। যেখানে একজন পুরুষ শ্রমিক সারাদিন কাজ করে পান ছয়শ’ টাকা থেকে সাতশ টাকা সেখানে একজন নারী শ্রমিক পান তিনশ’ টাকা থেকে চারশ টাকা। প্রতিবছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারীদের নিয়ে অনেক কথা হয়। কিন্তু এসব নারী শ্রমিকদের কথা কেউ বলে না। এসব নারী শ্রমিক পেটের তাগিদে এই দিনেও কাজে নামতে হয়।

জেলার অন্যান্য উপজেলাতেও পাথরের সাইডে কাজ করে কমবেশি ৫০ হাজার পাথর শ্রমিক। অবাধে নদী ও খাল থেকে বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করার কারণে গত দুই বছর ধরে সমতলের মাটি পাথর উত্তোলনও বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। এখন শুধু নদী থেকেই পাথর উত্তোলন করছে শ্রমিকরা। সেই সঙ্গে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ও ভূটান থেকে আসছে বিশালাকৃতির পাথর। নদী থেকে উত্তোলন করা পাথর বাছাইসহ এসব পাথরের সঙ্গে আমদানী করা পাথর ভাঙ্গার কাজে নিয়োজিত রয়েছে এ সকল নারী শ্রমিক।

 জানা গেছে, তেঁতুলিয়া উপজেলায় শ্রমবাজার পাথর নির্ভর। শুধু তেঁতুলিয়ায় কমবেশি প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক পাথরের কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এর প্রায় অর্ধেকের বেশি নারী শ্রমিক। পুরুষ শ্রমিকরা মূলত পাথর উত্তোলনের কাজ করে থাকে। পাথর বাছাই ও মেশিনে ভাঙ্গানোর কাজ বেশি করে নারী শ্রমিকরা। পুরুষ শ্রমিকরা বিভিন্ন অজুহাতে কাজে ফাঁকি দিলেও নারী শ্রমিকরা শতভাগই তাদের কাজে মনোযোগী থাকে। সকাল ৮টার সময় দুপুরের খাবার নিয়ে তারা কাজে আসে। দুপুরের এক ঘন্টার বিরতির মধ্যে তারা ‘লাঞ্চ’সেরে সামান্য আয়েশ করে আবার কাজে লেগে পড়ে।

ফাল্গুনের আগুন ঝরা রোদে তারা কাজ করে চলে অবিচল ভাবে। সূর্যাস্তের সামান্য আগে মজুরির টাকা হাতে নিয়ে বাড়িতে ফিরে তারা। প্রতিদিন তাদের কাজ করতে হয় প্রায় ১০ ঘন্টা করে। অধিকাংশ নারী শ্রমিকের কাজের সুষ্ঠ পরিবেশ নেই। রোদ-বৃষ্টিতে বসার মত কোন জায়গা নেই, নেই টয়লেটের ব্যবস্থাও। অনেক নারী শ্রমিক তাদের শিশু সন্তানকে সঙ্গে আনলেও তাদের থাকার মত কোনো ব্যবস্থাও থাকে না।

স্থানীয় নারী নেত্রী আকতারুন নাহার সাকি বলেন, নারী শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে মজুরী বৈষম্য কোনভাবে কাম্য নয়। নারীরা পুরুষদের সমান কাজ করে অর্ধেক মজুরি পায়। আমরা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, তারা যেন নারী শ্রমিকদের শ্রম আইন অনুযায়ী ৮ ঘন্টা কাজ করে সঠিক মজুরি দেন। এর চেয়ে বেশি কর্মঘন্টার জন্য সে হারে মজুরি প্রদান করেন। নারীদের মুজুরি বৈষম্য করবেন না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App