×

মুক্তচিন্তা

নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমাদের করণীয়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২১, ১২:০৬ এএম

পুলক রাহা নারীর অর্জন আর ক্ষমতায়নের দৃষ্টান্ত আমাদের অনুপ্রেরণা। নারী দিবসে নানামুখী আয়োজনে ভিন্ন মত থাকলেও উদযাপনের উপলক্ষ হতেই পারে। নারী স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিকার নিয়ে বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও অনেক কাজ হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বে নানা সূচকে রোল মডেল মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় অপেক্ষমাণ থাকা বাংলাদেশ। এ দেশে ৫৯ শতাংশ মেয়ের ১৮ এবং ২২ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৫ বছরের আগে। করোনা মহামারির মধ্যে এ দেশে ১৩ শতাংশ বাল্যবিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিগত ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ব্র্যাকের গবেষণায় স্পষ্ট হয়েছে, করোনাকালে অভিভাবকের কাজকর্ম না থাকায় ভবিষ্যৎ দুশ্চিন্তার কারণে ৮৫ শতাংশ, সন্তানের স্কুল খোলার অনিশ্চয়তায় ৭১ শতাংশ এবং করোনা মহামারি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কায় অনিরাপত্তা বোধ এবং বাইরে থেকে আসা ছেলে হাতের কাছে পাওয়ায় ৬২ শতাংশ বেড়েছে বাল্যবিয়ে। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, লকডাউনে ঘরের মধ্যে পরিচিত মানুষের মাধ্যমে শিশুরা যৌন হয়রানির শিকার হওয়াও বাল্যবিয়ের কারণ। ২০২০ সালে অক্টোবরে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে উত্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাকালে প্রথম তিন মাসে (মার্চ-জুন-২০২০) সারাদেশে ২৩১টি বাল্যবিয়ে হয়েছে এবং ২৬৬টি বাল্যবিয়ে ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাল্যবিয়ে হয়েছে কুড়িগ্রাম, নাটোর, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলায়। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন বলছে গত জুন মাসে ৪৬২টি কন্যাশিশু বাল্যবিয়ের শিকার হয়। এর মধ্যে প্রশাসন ও সচেতন মানুষের আন্তরিক সক্রিয় উদ্যোগে ২০৭টি বিয়ে বন্ধ করা সম্ভব হয়। সেভ দ্য চিল্ড্রেনের গেøাবাল রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৫ লাখ মেয়ে বাল্যবিয়ের ঝুঁকিতে আছে, আর বাল্যবিয়ের শিকার ১০ লাখ মেয়ে সন্তানসম্ভবা হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ২ লাখেরও বেশি মেয়ে বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে আছে, যার প্রভাব বাংলাদেশের জন্য অশুভ। করোনা মহামারির কারণে ২০২৫ সালে বাল্যবিয়ের সংখ্যা বেড়ে মোট ৬ কোটি ১০ লাখ পর্যন্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সংস্থাটি। করোনাকালে প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে অল্প বয়সে গর্ভধারণ, গর্ভপাত এবং অনিরাপদ সন্তান প্রসবের বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে। উপর্যুপরি ইতিহাস বলে যে, এ ধরনের অবস্থায় পরপরই গর্ভধারণ, বাচ্চা প্রসবের সংখ্যা এবং অনাকাক্সিক্ষত গর্ভধারণ ও অনিরাপদ গর্ভপাতের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং এটি একটি সাধারণ প্রবণতা। তাই সঙ্গত কারণেই মহামারির প্রথম থেকে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় মেরী স্টোপস বাংলাদেশের কাজ ছিল নিরাপদ মাতৃত্ব, সন্তান ধারণ, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার এবং এই সংক্রান্ত যাবতীয় কর্মসূচি এবং তথ্যসেবাগুলো নিশ্চিত করা। আজকের কিশোর-কিশোরীরাই আগামীতে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবিরের মতে, ১৫ থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত নারীর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়। সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা, মানসিক শক্তি অর্জন, স্বাবলম্বী হওয়ার প্রস্তুতি এসব কিছুর ভিত তৈরি হয় এই বয়সেই। সরকারের ন্যাশনাল পলিসি অন অ্যাডোলেসেন্ট হেলথ অনুসারে কিছু স্কুলে কিশোর-কিশোরী স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা রয়েছে। কোভিড পরিস্থিতিতে ইউনিয়ন ও জেলা পর্যায়ে ৬০৩টি স্বাস্থ্য-পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থেকে স্বাস্থ্য উপকরণসহ কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়েছে। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৩ শতাংশ কিশোরী এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরির কারিগর। বিভিন্ন সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, বিদ্যালয়ে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষার অভাব এবং পারিবারিকভাবে প্রয়োজনীয় ধারণা না পাওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই ভুল ধারণার জন্ম নেয়। আর তা থেকেই ভুল হয়, জীবনের ছন্দ হারায়। কৈশোরে হঠাৎ পরিবর্তন আসা বয়ঃসন্ধিকালের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন নিয়ে প্রত্যেক কিশোর-কিশোরীর স্বচ্ছ ধারণা থাকা জরুরি। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের মতে, ‘প্রতিটি পরিবার যদি মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালের বিষয়গুলোকে উত্থাপন করে, সবাইকে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষা দেয়, তাহলে সারাদেশে একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের জায়গা তৈরি করা সম্ভব।’ তাই প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্ব বুঝে ইতিবাচক মনোভাব তৈরিতে সরকার এবং সমাজের প্রত্যেকটি মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে আগামীর সুন্দর ভবিষ্যতের প্রত্যাশায়। লেখক ও উন্নয়ন কর্মী। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App